ব্রেকিং:
পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় স্বস্তি ফিরছে জনমনে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে: সেনাপ্রধান বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ঘেরাও-অগ্নিসংযোগ ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমর্থন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে বিএনপির সর্বাত্মক সমর্থন ঘোষণা কমপ্লিট শাটডাউনেও চলবে মেট্রোরেল বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আজ বাংলা ব্লকেড বা শাটডাউন হল ছাড়ছেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর পদত্যাগ তিস্তায় ভেসে আসা সেই মরদেহ ভারতের সাবেক মন্ত্রীর ঢাবির হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বর্জ্যে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৪  

দেড়শ বছরের পুরোনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় এখনো গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বর্জ্য পরিশোধনে পরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বর্জ্যের ভারে ধুঁকতে হচ্ছে প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভাকে। ফলে ডাম্পিংয়ের নামে প্রতিদিন দেড়শ টন বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে কিংবা সড়কের পাশে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

সচেতন মহল বলছে, পরিকল্পিত উপায়ে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে বসবাসকারীর সংখ্যা। পৌর এলাকায় জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বর্জ্যের পরিমাণও। প্রতিদিন উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পরিশোধন করতে না পেরে এগুলো রাখতে হচ্ছে বিভিন্ন সড়কের পাশে। অথবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রতিদিন অন্তত দেড়শ’ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার মধ্যে বিভিন্ন বাসা বাড়িসহ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্যও রয়েছে। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০১২ সালে শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায় ৩ একর জায়গায় ডাম্পিং স্টেশন করে পৌরসভা। যদিও সেখানে নেই বর্জ্য পরিশোধনে পরিবেশবান্ধব কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার। ২০২৩ সালে বর্জ্য থেকে সার ও জ্বালানি তেল উৎপাদনে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও কোনো সংস্থা এগিয়ে না আসায় তাও উৎপাদনে আসেনি। এতে ডাম্পিংয়ে থাকা বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন আহরিত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য স্তূপ হয়ে পাহাড় টিলায় পরিণত হয়েছে। বর্জ্যে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পৌরবাসীর দমবন্ধ হয়ে আসার অবস্থা। নোংরা পরিবেশ হওয়ায় মশা-মাছিসহ নানা রকমের বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের অবাধ বংশবিস্তার চলছে।

সরজমিনে দেখা যায়, লোকালয়ের খোলা আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে বর্জ্যের ভাগাড়। বর্জ্যের স্তূপ ডাম্পিং স্টেশনে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ফেলে রাখা হয়েছে ব্যস্ত সড়কের পাশে। গোকর্ণ-পৈরতলা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের চলাচল। তবে এই পথে চলাচল করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের দমবন্ধ হয়ে আসার অবস্থা। কেউ নাক চেপে, আবার কেউ মুখে হাত রেখে কোনোমতে চলাচল করছেন। আবাসিক এলাকা হওয়ায় আশপাশে রয়েছে বহু মানুষের বসবাস। ছয়বাড়িয়া এলাকা ছাড়াও শহরের জনবহুল ও মিনি পার্ক খ্যাত টেংকের পাড় এলাকার মূল ফটকের সামনে মডেল ডাস্টবিনের নামে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য এনে স্তূপ করে রাখা হয়।

বাণিজ্যিক এই এলাকার ওপর দিয়ে দিয়ে অন্তত ১০/১২টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচল। চারদিকে রয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টার। প্রতিদিন সড়ক দখল করে এই পয়েন্টে চলে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। এতে বর্জ্যের পচনসহ দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষের অবস্থা নাকাল। বৃষ্টি হলে এসব বর্জ্য রাস্তার উপরে চলে আসায় নানা রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করার পরও কোনো সুরাহা মিলছে না।

পৌরবাসীরা জানান, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ছয়াবড়িয়া, টেংকের পাড়সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে দিন পাড় করছে। অনেকটা মরণ যন্ত্রণা নিয়ে তারা বাধ্য হয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। বর্জ্যের স্তূপ বাসাবাড়ির আঙিনায় পর্যন্ত এসে পড়েছে। ঘরের দরজা- জানালা সব সময় বন্ধ করে রাখতে হয়। ছয়বাড়িয়ায় ডাম্পিং স্টেশন করা হলেও কোনো রকম সীমানাপ্রাচীর বা পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী দেওয়া হয়নি। এতে দুর্গন্ধ বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি মশা-মাছির কারণে ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত করা যায় না। এমন কষ্টের কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র ঘর ভাড়া করে থাকছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছে সাধারণ মানুষ। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আবদুন নূর বলেন, পুরো পৌরসভাই এখন বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ছয় বাড়িয়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্তূপ হয়ে থাকে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। আমি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই যাতে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করে শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, পৌরসভার দীর্ঘ যাত্রায় আমরা আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি। তবে সম্প্রতি আমরা কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যাতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিসল চক্রবর্তী বলেন, বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পৌরসভাকে অবহিত করা হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।