ব্রেকিং:
সুপারি বাগানে মিলল অটোচালকের গলাকাটা মরদেহ শ্রমিক লীগ নেতাকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেল তরুণী কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেফতার ৪ খালেদার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কোনো আবেদন আসেনি: আইনমন্ত্রী নোয়াখালীতে যুবককে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা শ্রমিক লীগ নেতাকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন নারী চাকরির শেষ দিনে ফুলসজ্জিত গাড়িতে বাড়ি ফিরলেন শিক্ষক এবার কুমিল্লায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর বর্ষপূর্তি উদযাপন রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর চার প্রস্তাব পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা রোধে হটলাইন নম্বর চালু চাঁদপুরে ইলিশ উৎসবের ষষ্ঠ দিনের আলোচনা প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করছেন তানিয়া ইশতিয়াক খান নারায়নপুর পৌরসভা বাতিলের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল চাঁদপুর সদরে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে শিক্ষা অফিসার লক্ষীপুর ইউপিতে সিভিআরপি প্রকল্পের ঘর উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ মতলব উত্তরে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে মতলব মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম ঝুলন্ত সেতু জনসেবায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান চাঁদপুরে মেঘনা ট্রেনে ডেঙ্গুর আক্রমন আতংক!
  • শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩০

  • || ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

৬ সন্তান নিয়ে পরিত্যক্ত বাড়িতে জীবন কাটছে মামুনের

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

আমার থেকে রোহিঙ্গারাও ভালো আছে। আমার থাকার জায়গা নেই, খাবারের ব্যবস্থা নেই। অসুস্থতার জন্য কেউ কাজে নেয় না, তাই কর্ম সংস্থান নেই, ভিক্ষাবৃত্তিই আমার একমাত্র সম্বল। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েসহ ৮ জনের পরিবার নিয়ে যাযাবরের মতো কোনো দিন কাটছে। একবেলা খেয়ে তো আরেক না খেয়ে জীবন যাপন করছি। মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনরা অনেক সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু আমি পাইনি। এখন আমার একটি ঠিকানা প্রয়োজন— এমন করে কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন জেলার দেবিদ্বার উপজেলার অসহায় গৃহকর্তা মো. মামুন মিয়া।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেবীদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামের তাজু মুহুরীর পরিত্যক্ত বাড়িতে মামুন মিয়ার পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনের দৃশ্য চোখে পড়ে।

নির্জন ঝোপঝাড়ের ভিতরে প্রায় ৩০ বছর আগের একটি দোচালা টিনসেড ও একচালা একটি রান্না ঘর রয়েছে। প্রায় ৩ মাস আগে ভিক্ষা করতে এসে এ বাড়িটির সন্ধান পান মামুন। আশ-পাশে আর কোনো বাড়িঘর নেই। একেবারে ভুতুরে এক পরিবেশ। জঙ্গল পোকা- মাকড়, মশা, জোকের উপদ্রপ এখানে বেশি। এরই মধ্যে ৬ শিশু সন্তানসহ অস্বাস্থ্যকর বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশেই তাদের বসবাস। বাড়ির মালিকের সন্ধান না পেলেও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এখানেই অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন মামুন মিয়া। দোচালা টিনের ঘরটির দরজা জানালা নেই, ঘরের বেড়া ভাঙা। রান্না ঘরের চালা থাকলেও বেড়া নেই। রাতের অন্ধকারে কুপি বাতিই ভরসা। মশা এবং জোকের উপদ্রপ থেকে রক্ষার জন্য একটি মশারি কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের।

মামুন জানান, তার আদি বাড়ি দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের আজিউল্যার বাড়ি। তার বাবা মালেক মিয়াও ভূমিহীন ছিলেন। মামুন উপজেলার ধামতী গ্রামের নিলুফাকে বিয়ে করেন। নিলুফা গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে তিনি গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে স্ত্রীর সঙ্গে চাকরি শুরু করেন। লেখাপড়া কম জানায় ভালো বেতন পাচ্ছিলেন না। তাই চাকরি ছেড়ে দেবীদ্বারে চলে আসেন। পৌর এলাকার বানিয়াপাড়া ভাড়া বাসায় থেকে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাড়া বাসায় থাকা সম্ভব হয়নি। বারেরারচর গ্রামের গুচ্ছগ্রামে সুফিয়া বেগমের নামে বরাদ্দ করা ঘরে থাকা শুরু করেন। ওখানে প্রায় ১০ বছর থাকেন। সুফিয়া তখন চট্টগ্রামে থাকতেন। বর্তমানে সুফিয়া গ্রামে ফিরে তার ঘর বুঝে নেন। মামুন মিয়া ভিক্ষাবৃত্তির সুবাদে পোমকাড়া গ্রামের এ পরিত্যক্ত বাড়ির সন্ধান পান। জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেও সেটি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তার স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারের নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এমনকি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের জন্মনিবন্ধনও করাতে পারেননি তারা। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভূমিহীন, গৃহহীন যাযাবর হওয়ায় সন্তানদের নেই কোনো শিক্ষার সুযোগ সুবিধা।

স্থানীয় দুলাল মিয়া বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে এ পরিত্যাক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেন মামুন। তখন তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে মামুনের স্ত্রীর ডেলিভারি হয়। তখন ১৪শ টাকা দিয়ে সহায়তা করেছি। এ বাড়ির মালিকের ১১ ছেলে সবাই নামি শিক্ষক, এলাকায় কেউ থাকেন না। বাড়িটি দখলে রাখতে প্রায় ৩০ বছর আগে একটি টিন সেট ঘর ও একটি পাকা ভবন নির্মাণাধীন অবস্থায় ফেলে যান। আমরা ছোটবেলায় দিনেও এ এলাকায় আসতে ভয় পেতাম। এখনো সেই ঝোপ-ঝাড় রয়েছে। সাপ, বিচ্ছু, জোঁক, মশা- পোকামাকড়ের মধ্যে ওরা বসবাস করছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. গোলাম সারওয়ার মুকুল ভূইয়া বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। এখন আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি। ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা স্বাপেক্ষে তার আবাসনসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করব।

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।