ব্রেকিং:
৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত সিদ্দিকী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি না থাকলে সেটা কলঙ্কজনক হবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিজিবি
  • মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অবহেলায় শ্রীহীন লাকসাম নওয়াব বাড়ি

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২০  

অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহী লাকসাম নওয়াব বাড়ি। বৃটিশ আমলের কারুকার্য দিয়ে নির্মিত ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ও নারী আন্দোলনের প্রথম অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক এ বাড়িটি চমৎকার একটি স্থাপত্য যা দক্ষিণ এশিয়ার সৌন্দর্যমন্ডিত বাড়িগুলোর অন্যতম।

স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িটি বছরের পর বছর অরক্ষিত থাকলেও সাম্প্রতিক বাড়িটিকে আকর্ষনীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বরাদ্দ পেলেই পাল্টে যেতে শুরু করবে বাড়িটি। সৌন্দর্যমন্ডিত এ বাড়িটিকে ঘিরে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা।

কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরশহরের পশ্চিমগাঁও-এ ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি ঐতিহাসিক নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ির (নবাব বাড়ির) অবস্থান। ঐতিহ্যের ধারক বাড়িটির নির্মাণ সাল নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কথিত আছে, উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বিয়ের ১৭ বছর পর তিনি জানতে পারেন তাঁর স্বামী হাছান আলী জমিদারের আরেকজন স্ত্রী রয়েছে। অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, দৃঢ়চেতা নবাব ফয়জুন্নেছা এটি মানতে পারেননি। তিনি পৃথক থাকার জন্য সাড়ে ৩ একর জমির উপর তাঁর বিয়ের কাবিনের ১ লাখ ১ টাকা দিয়ে এই বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩ বছর সময় লাগে। বৃটিশ আমলের সিমেন্ট, রড, চুন ও সুরকি দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির পশ্চিমপাশেই ১০ গম্বুজবিশিষ্ট একটি অনিন্দ্য স্থাপত্যশৈলীর পারিবারিক মসজিদ রয়েছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন নবাব ফয়জুন্নেছা সহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য বংশধর।

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। তিনি এ বাড়িটিতে বসে পর্দার আঁড়াল থেকে উপমহাদেশের সকল বিচার কার্য সম্পাদন, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-মাদ্রাসা সহ যাবতীয় জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। কালের বিবর্তনে বাড়িটি ঐতিহাসিক বাড়ি হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। নবাব ফয়জুন্নেছা মৃত্যুর পূর্বে বাড়িটি সরকারের নিকট ওয়াকফ্ করে যান।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বাড়িটি এতোই চমৎকার একটি স্থাপত্য যাকে মনে করা হয় দক্ষিণ এশিয়ার সৌন্দর্যমন্ডিত বাড়িগুলোর অন্যতম। জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহী এ বাড়িটি বছরের পর পর অযত্ন, অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, গাছপালা, বাগান কিছুই এখন তেমনটা চোখে পড়ে না। ভবনের চারপাশ দেখতে অপরিচ্ছন্ন, চুন-সুরকি-ইট-পলেস্তরা খসে পড়ছে। জায়গায় জায়গায় বেরিয়ে এসেছে জংধরা রড, দরজা-জানালা ভেঙে খুলে পড়ছে, কালি ঝুলে আছে দেয়ালের পরতে পরতে। সর্বত্র যেন মলিনতার ছাপ। যথাযথ রক্ষণা-বেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বাড়িটি যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সৌন্দর্যমন্ডিত এ বাড়িটিকে ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর মালিকানাধীন ৪ একর ৫৩ শতক সম্পত্তি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরকে সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। যা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এমন ঘোষণায় লাকসামের সাধারণ মহল আনন্দে উদ্বেলিত হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অবৈধ দখলদাররা। এ বাড়িকে আধুনিকায়ন করে আকর্ষণীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা বলে সূত্রে জানা যায়।

লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বাড়িকে আধুনিকায়নের জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপির আন্তরিকতায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। ঐতিহাসিক বাড়িটির সংস্কার হলে পর্যটক হৃদয় সিক্ত করবে। হয়ে উঠবে দেশ-বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বাড়িটি আধুনিকায়ন হলে লাকসামে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্জিত হবে সরকারের রাজস্ব আয়।

লাকসাম পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের বলেন- লাকসাম নবাব বাড়িটি দীর্ঘদিন অযত্নে থাকলেও বর্তমান উন্নয়নবান্ধব সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি’র আন্তরিকতায় বাড়িটিকে আধুনিকতার পাশাপাশি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাড়িটি আকর্ষনীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোঃ আতাউর রহমান বলেন- নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী নারী জাগরণের অগ্রদূত। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নবাব বাড়িকে আকর্ষনীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পরপরই সংস্কার কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রত্নপর্যটনে লাকসাম হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।

ক্যাপশন: মহিয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর প্রতিষ্ঠিত লাকসাম নবাব বাড়ি।