ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

এক বিয়ে বাড়ি থেকেই মহামারি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে!

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২০  

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে অনেক দেশ এখন লকডাউনে। এ যেন এক নতুন পৃথিবী! গাড়ির কালো ধোঁয়ায় যেখানে আচ্ছন্ন থাকত চারদিক। সেখানে চোখ মেললেই দেখা দিচ্ছে ঝকঝকে নীল আকাশ। এমন পৃথিবীর সাক্ষী হয়েছিল বিশ্ববাসী আরো একবার ২০০৩ সালে। শুধু করোনা নয় সার্স নামক মহামারি ভাইরাসটিও ছড়িয়ে পড়েছিল চীন থেকেই।

জানা যায়, এক বিয়ে বাড়ি থেকেই নাকি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল মরণব্যাধি সার্স। মাত্র ছয় মাসে এই মহামরি রোগে বিশ্বের ২৬টি দেশে মারা যায় সাত হাজার ৭৪৮ জন। পুরো বিশ্বে প্রায় নয় হাজার মানুষ সার্সে আক্রান্ত হয়েছিল। ‘

সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম’ বা সার্স নামের এই রোগের খবর প্রথম প্রকাশ হয় ২০০৩ সালে। যদিও এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল ২০০২ এর শেষের দিকে বেইজিংয়ে। এরপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিজ্ঞান এবং বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক আর্নল্ড এস মন্টো বলেছেন, বেইজিংয়ের লোকজনসহ কেউ এই রোগ সম্পর্কে অবগত ছিল না। এমনকি চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে বুঝতে পারেনি। আর এ সুযোগেই এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল। 

২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। গুয়াংডং-এর এক ডাক্তার ডা. লু জানলুং এক অস্বাভাবিক ধরণের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন। এরপর তিনি তার পারিবারিক এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হংকং যান। ডা. লু জানলুং হংকং এর মেট্রোপোল হোটেলে ৯১১ নম্বর কক্ষে উঠলেন। হয়তো লিফটে তিনি একবার হাঁচি দিয়েছিলেন। আর তা থেকেই আরো সাতজন লোক এতে সংক্রমিত হন। 

এই সাতজন ভাইরাসটিকে নিয়ে যান কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামে। হংকং পরিণত হলো সার্স ছড়ানোর কেন্দ্র বা এপিসেন্টারে। দুই সপ্তাহের মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা যান ডা. লু জানলুং। তবে এরই মধ্যে সার্স ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। আক্রান্তের বেশিরভাগের মৃত্যুই হয় পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য  অনুযায়ী, চীন এবং হংকং সার্সে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সার্সের প্রাদুর্ভাবে সে সময় চীনে মারা যায় পাঁচ হাজার ৩৩৭ জন এবং হংকংয়ে এক হাজার ৭৫৫ জন। যার রেশ এখনো চীনে রয়েছে। 

তবে ইবোলা ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ইউসিএলএ স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজির অধ্যাপক অ্যান ডাব্লু রিমোইন বলেছেন, সার্সের পর মার্সসহ ইবোলা, সোয়াইন ফ্লু এবং আরো অনেক সংক্রমের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব।২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, চীনে নতুনভাবে ছড়িয়ে পড়ে করোনভাইরাস। চীনের স্বাস্থ্য কমিশন অনুসারে, ২০২০ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে মূল ভূখণ্ডের চীনে নতুন ভাইরাসজনিত রোগে মৃতের সংখ্যা ২০০২-২০০৩ সার্স মহামারির চেয়েও বেশি। 

করোনা সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে প্রচণ্ড জ্বর হওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যঘাত ঘটা। সার্সের লক্ষণ হলো মাংসপেশিতে ব্যথা, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। সার্স এক প্রকার ভাইরাল নিউমোনিয়া যেটি শ্বাসযন্ত্রের নিম্নভাগে হয়ে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা নিতে পারলে বিভিন্ন ওষুধের মিশ্র চিকিৎসায় সার্স ভালো হয়ে যায়। 

সার্সের মতোই অজ্ঞতার কারণে করোনাতেও অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হতে থাকেন। এমনকি প্রথম যে চিকিৎসক করোনাভাইরাস সম্পর্কে বলেছিলেন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর দায়ে। তবে কিছুদিন পর ওই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। করোনাভাইরাস বন্য বাদুড় এবং সাপের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। আর সার্স ছড়িয়েছিল বিড়াল থেকে। 

সার্স সংক্রমণের ভয়ে সেসময় জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছিল বিশ্বের সর্বত্রই। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণের ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। হংকং এর প্রিন্সেস মার্গারেট হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট সেবার প্রধান টম বাকলি বলেন, তখন রাস্তায় বের হলে সবাই মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করে। রাস্তায় বের হলেই দেখা যেত ৬০ শতাংশ মানুষ মুখে মাস্ক পরে আছে। সার্সের সংক্রমণ ঠেকাতে তখন স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দেয়া হয় নানা পরামর্শ। 

সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণা প্রচারিত হচ্ছিল, কীভাবে মানুষ নিজেদেরকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবে। ঘোষণায় বলা হয়, এই রোগ শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নির্গত পানির কণার মাধ্যমে এবং রোগীর দেহ থেকে নি:সৃত তরল থেকে ছড়ায়। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে তরল সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে। এমনকি যে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছবেন- তা ফেলে দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

তখনো বলা হয়, আপনার চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করার আগে হাত ধুয়ে নিন। হ্যান্ডশেক করা এড়িয়ে চলুন। এমনকি টয়লেট কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তারও একটা গাইডলাইন ছিল। এক জরিপে দেখা যায়, আপনি যদি টয়লেটের ঢাকনাটা খোলা রেখে ফ্লাশ করেন তাহলে সেখান থেকে ছড়ানো পানির কণা ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। সেখান থেকেও ছড়াতে পারে সার্স। এই ভাইরাসটিও করোনার মতোই নিউমোনিয়া ধরনের রোগ।

টম বেকলি আরো বলেন, প্রথম দিকে হংকংয়ের লোকজন এত সচেতন ছিল না। তাদের সঙ্গে কি ঘটতে চলেছে সে বিষয়ে কারো ধারণা ছিল না। তবে এ অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া মোকাবিলা করতে সরকার সক্রিয় হয়ে ওঠার পর, টিভিতে এ বিষয়ে নানা রকম নির্দেশিকা প্রচার শুরু হয়। এরপর মানুষের মনে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। যা তাদের সচেতন করতে সহায়তা করেছিল। তারা নিজে থেকেই রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া, শপিংয়ে যাওয়া বা রেসকোর্সে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। 

মার্চের শেষ দিকে হংকংয়ে সার্স নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দেন উইলিয়াম হো। তিনি ছিলেন হংকংয়ের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী। তার পরপরই তিনি নিজে সার্স সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তিনি অবশ্য এ থেকে সেরে ওঠেন।   

এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে হংকংয়ে ভ্রমণ না করার জন্য এক নির্দেশিকা জারি করলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ততদিনে ৮০ শতাংশ মানুষ হংকং ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এতে অন্যান্য দেশে সার্স খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। তখন সার্সের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। অন্যদিকে বেড়েই চলেছিল আক্রান্তের সংখ্যা। সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে দীর্ঘ হয় মৃতের তালিকা। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী শেষ সার্স রোগীর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল ২০০৪ সালের মে মাসে। তারপর থেকে এ রোগে আর কেউ আক্রান্ত হয়নি।