ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনাকে আলিঙ্গন করেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২০  

যে রোগে আক্রান্ত নয়-ই শুধু, রোগের উপসর্গ কারো মাঝে দেখা দিলে তাকে রেখে সব পালায়। কী আপনজন, কী স্বজন! একই পরিবারের সদস্যরাও সে আপনজন রোগী থেকে দূরে সরে যায়! এমনকি আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তার লাশ দাফন করতেও স্বজনরা আসেন না ! এমন কঠিন বাস্তবতার মাঝেও এসব রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, সেবা করে যাচ্ছেন কিছু চিকিৎসক এবং সেবক-সেবিকাগণ। শত বছরেও না দেখা দুনিয়া কাঁপানো মহামারীকালে যাঁরা কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস নামে এক প্রাণঘাতী গুপ্ত ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন, সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদেরকে হয়ত নানা বিশেষণে আখ্যা দেয়া যাবে। তবে তাঁদের পরিচয় তাঁরা 'মানবতার চিকিৎসক'। এখানে তাঁদেরকে এ বিশেষণে বিশেষায়িত করাটাই যথোপযুক্ত।

নিজেদের নয়ই শুধু, পরিবারের আপনজনদের জীবন ও মায়া মমতাকে তুচ্ছ মনে করে আড়াই শ' শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা এবং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ২২ জন চিকিৎসক এবং ৩৬ জন সেবক-সেবিকা। যাঁরা মাসের ৭দিন পরিবারের সদস্যদের সময় দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তাও তারা কোভিডে আক্রান্ত হন নি নিশ্চিত হওয়ার পর। অন্যদিনগুলোতে করোনা রোগীদের সেবা দেয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।

আড়াই শ' শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের বর্তমান আইসোলেশন ওয়ার্ডটি হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায়। যেটি আগে পুরুষ ওয়ার্ড ছিলো। এখানে বর্তমানে ৬০টি সিট রয়েছে রোগীদের জন্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা করোনাভাইরাস বিষয়ে হাসপাতালের তিন কর্ণধার ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান, ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম ও ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল ষাট সিটকে ভাগ করেছেন কোভিড এবং নন-কোভিডে। কোভিড তথা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের রাখা হয় ওয়ার্ডের একটি অংশে, আর সন্দেহভাজনদের রাখা হয় ওয়ার্ডের আরেক অংশে। এসব রোগীকে ২২ জন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই চিকিৎসকদের জন্যে ডিউটি রোস্টার করা আছে। সে অনুযায়ী তাঁরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যে সাতজন হচ্ছেন সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র কনসালটেন্ট, চারজন জুনিয়র কনসালটেন্ট ও প্রভাষক এবং ১১ জন হচ্ছেন সহকারী সার্জন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান জানান, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তারগণ প্রতিদিন সকালে রাউন্ড দেন, আর তিনজন জুনিয়র ডাক্তার প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘন্টা ডিউটি করেন। এভাবে চলতে থাকায় একটি মুহূর্তের জন্যও আইসোলেশন ওয়ার্ড ডাক্তার শূন্য থাকে না। একইভাবে সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে ৩৬ জন নার্স বা সেবক-সেবিকাও রয়েছে। তাদেরও পর্যায়ক্রমে ডিউটি রোস্টার করে দেয়া হয়েছে। তাঁরা সেভাবেই ডিউটি করে থাকেন।

ডাঃ মাহবুবুর রহমান খুব গর্বের সাথে বলেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে যতজন চিকিৎসক ও নার্স দায়িত্ব পালন করছেন, এ পর্যন্ত একজনও দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করেন নি। এতেই প্রমাণ হয় যে আমাদের ডাক্তার এবং নার্সরা কতটুকু মানবিক এবং আন্তরিক। ডাঃ মাহবুবুর রহমান আরো জানান, আমরা আইসোলেশন ওয়ার্ডের রোগীদেরকে বাইরে থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে খাবারের জন্যে পানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। হাসপাতালের সাপ্লাইর পানিতে আয়রন বেশি হওয়াতে এ পানি রোগীরা খেতে পারে না। তাই প্রতিদিন একজন রোগীর জন্যে দুই লিটার পানি আমরা সরবরাহ করে থাকি। কারো এর বেশি লাগলেও তা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। আর তাদের খাবারের মেন্যু অন্য সাধারণ রোগীদের থেকে কিছুটা ভিন্ন। ফলফলাদি থেকে খাবারের মেন্যুতে।

আইসোলেশন ওয়ার্ডে যেসব সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারগণ কোভিড এবং নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তাঁরা হচ্ছেন : ডাঃ নাহিদ সুলতানা, সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), ডাঃ মোঃ সাবি্বর হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, অর্থো-সার্জারী, ডাঃ আবু সালেহ মুহাম্মদ সিরাজুম মুনীর, সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন, ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম পাটওয়ারী, সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন, ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ, সহকারী অধ্যাপক সার্জারী, ডাঃ সোহেল আহমদ, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), ডাঃ মোঃ কামাল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, অর্থো-সার্জারী, ডাঃ মোঃ নোমান হোসেন, আরপি, ডাঃ আওলাদুজ্জামান, প্রভাষক, মোঃ বাহারুল আজম ভূঁইয়া, প্রভাষক, ডাঃ হাসিন মেহবুব, প্রভাষক। আর সহকারী সার্জনগণ হচ্ছেন : ডাঃ মোঃ আশিকুর রহমান, ডাঃ সাগর মজুমদার, সাবিহা সুলতানা, ডাঃ মাহজাবিন ফেরদৌস, ডাঃ অনিমেষ চক্রবর্তী, ডাঃ মোঃ মেহেদী হাসান, ডাঃ ইব্রাহিম খলিল, ডাঃ নাজমুন্নাহার, ডাঃ নূর জাহান, ডাঃ সিগমা রশীদ ও ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম।

এসব চিকিৎসক একটানা দশদিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটি করেন। এরপর ১৪ দিন তাঁরা হোটেল গ্র্যান্ড হিলশায় আইসোলেশনে থাকেন। এখানে থাকা অবস্থায়ই তাঁদের স্যাম্পল নেয়া হয় তাঁদের শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে। ১৪ দিন এখানে থাকার পর তাঁরা পরিবারের কাছে যান। সাতদিন পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটিয়ে আবার আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজে যোগ দেন। এভাবেই চলছে ২২ জন চিকিৎসক এবং ৩৬জন নার্সের বর্তমান করোনাকালে করোনার সাথে যুদ্ধ করে জীবনচলা। প্রতিদিন মনে হচ্ছে যেনো করোনাকে আলিঙ্গন করেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটি করে চলেছেন চিকিৎসক এবং সেবক-সেবিকাগণ।

এদিকে এখানে ডিউটি করতে গিয়ে ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম পাটওয়ারী, সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন এবং আরো একজন নারী চিকিৎসক ও কয়েকজন নার্স কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। ডাঃ মাহবুবুর রহমান জানান, আক্রান্ত অবস্থায়ও আমার ডাক্তাররা সুস্থ হয়ে আবার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটি করতে আগ্রহের কথা জানিয়ে রেখেছেন। আমি আমাদের এসব ডাক্তারদের নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত।

আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা চাঁদপুরের একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডাঃ আবু সালেহ মুহাম্মদ সিরাজুম মুনীরের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত একজন মানুষ হিসেবে নিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এবং ভয় তো সবসময়ই থাকে। তবে যখন আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভেতর ঢুকে যাই তখন আর নিজের মধ্যে সেটা কাজ করে না। তার কারণ হচ্ছে, যখন রোগীদের সামনে যাই, সে সময় রোগীরা আমাদের দেখে যে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, একটা ভরসা যখন দেখি আমার মাঝে রোগীরা খুঁজে পায়, তখন আর নিজের মধ্যে নিজেকে নিয়ে ভাবনা কাজ করে না। সে সময় রোগীকে চিকিৎসা দেয়াটাই মুখ্য হয়ে যায়। যেমন ওয়ার্ডে ঢুকে যখন কোনো রোগীর সামনে গিয়ে নাম ধরে ডাক দেই, তখন সে রোগী কেঁদে দেয়। তাঁরা তখন বলেন, স্যার আজ আপনজন, সহকর্মী কেউই যখন পাশে নেই; তখন আপনারা নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমাদেরকে সুস্থ করতে চলে এসেছেন। তখন আমরাও আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। ডাঃ সিরাজুম মুনীর আরো জানান, করোনার যে কোনো চিকিৎসা নেই সেটা রোগীরাও জানে, সবাই জানে। সে জন্যে আমি খুব গুরুত্বের সাথে একটি কথা বলতে চাই, আমরা যদি রোগীদের মনোবল চাঙ্গা করে রাখি, তাদের প্রতি মানবিক থাকি, এটাই করোনা রোগীদের সুস্থ হওয়ার জন্যে বিশাল সাপোর্ট এবং প্রধানতম চিকিৎসা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার পরিবারে আমার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান আছেন। বাবার বয়স নব্বইর উপরে, মার বয়স আশির মতো। আমার এই করোনা রোগীদের চিকিৎসায় তাঁরা অবশ্যই পজিটিভ। এটাও আমার একটা মানসিক শক্তি।