ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কলঙ্কের চিহ্ন কুমিল্লার তিনটি বাড়ি

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০১৯  

বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্কের চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লার তিনটি বাড়ি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিরা থাকত এই বাড়িগুলোতে। 

কুমিল্লার দাউদকান্দির দশপাড়ায় খোন্দকার  মোশতাক আহমদের বাড়ি, চান্দিনার ছয়ঘড়িয়ায় কর্নেল আবদুর রশিদ খোন্দকারের বাড়ি আর মেজর শরিফুল হক ডালিম কুমিল্লা শহরের অশোকতলার যে বাড়িতে থাকতো সেই বাড়ি। 

খোন্দকার  মোশতাক আহমেদ মারা গেলেও কর্নেল আবদুর রশিদ খোন্দকার আর মেজর শরিফুল হক ডালিম কোথায় আছে তা জানে না সরকারও। কিন্ত তাদের বসবাসের এই বাড়িগুলোতে সেই সব খুনিরা বা তাদের উত্তরাধিকাররা না থাকলেও বাড়িগুলো বহন করছে অভিশাপের চিহ্ন। কুমিল্লাকে কলঙ্কিত করা এসব বাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে মানুষ এখনো ঘৃণা জানায়। ঘৃণা জানিয়ে কুমিল্লার মানুষ জাতির জনক হত্যার কলঙ্ক যেন মোচন করতে চায়। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত, সাবেক রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির সুন্দলপুরের দশপাড়ায়। চারদিকে দেয়াল ঘেরা বিশাল ঐ বাড়িতে দোতলা একটি বিল্ডিং রয়েছে। রয়েছে একটি মসজিদ ও পারিবারিক কবরস্থান। কবরস্থানের কবরগুলোতে সাইনবোর্ডে নাম পরিচয় থাকলেও  মোশতাক আহমেদের কবরে কোন সাইনবোর্ড নেই। সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে ঘেরা ঐ কবরের বেড়িতে রঙ করা আছে।

দোতলা ঐ বাড়ির নিচতলায় মসজিদের ইমাম ও মাজারের একজন খাদেম ছাড়া সেখানে এখন তাদের কেউ থাকে না। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের এক ছেলে খোন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ আমেরিকায় এবং মেয়ে খোন্দকার শিরিন সুলতানা এবং ডা. খোন্দকার নাজনিন সুলতানা লন্ডনে থাকে। তাদের পরিবারের সদস্যরা মাঝে মধ্যে দশপাড়ায় সেই বাড়িতে আসে। দোতলা বাড়িটির পাশেই রয়েছে দশপাড়া হযরত কবির উদ্দিন সিনিয়র কামিল মাদ্রাসা। আত্মস্বীকৃত খুনি  মোশতাক ১৯৯৫ সালে মারা যায়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল অব. আবদুর রশিদ খোন্দকারের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের বাড়িটি এখন জনশূন্য। তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসানুজ্জামান কল্লোলের নির্দেশে এবং চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিতিতে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রশিদের বাড়িসহ ৬.১২ একর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ৬টি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে চান্দিনা থানা পুলিশ। এর মধ্যে তার বাবার আব্দুল করিমের সম্পত্তিও রয়েছে। এই বাড়িসহ ছয়ঘরিয়া-করতলা-পানিপাড়া ও থানগাঁও মৌজার ৬.১২ একর সম্পত্তিতে ‘তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সরকারের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি, ওই সম্পত্তিতে জনসাধারণের ‘প্রবেশ নিষেধ’লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।

এক সময় এই বাড়িটি পাহাড়া দিত কেয়ারটেকার অব: সার্জেন্ট সাইফুল। এক এগারোর পটপরিবর্তনের সময় থেকে তার মেয়ে মেহনাজ রশিদ খোন্দকার ছাড়া এই বাড়িতে তার পরিবারের আর কেউ আসতো না। মেহনাজ রশিদ একের পর এক মোবাইল এর সিম পরিবর্তন করত। কেয়ারটেকার সাইফুল বাসভবনের পাশে অবস্থিত একতলা বিল্ডিং এ সপরিবারে বসবাস করত। সে ছিল ৩০০০ টাকায় মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর সে সময়ে বিএনপি ও এরশাদ সরকারের সময় স্বাধীনভাবে এই বাড়িতে বসবাস করলেও, ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পরপরই, দেশত্যাগ করে আবদুর রশিদ খোন্দকার। এর আগে ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবদুর রশিদ খোন্দকার সংসদ সদস্য হয়েছিলো। ১৯৯৬ এ দেশ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুর রশিদ খোন্দকার আর দেশে আসতে পারেনি।

তবে কর্নেল রশিদের কন্যা মেহনাজ রশিদ খোন্দকার বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘরিয়ার বাজেয়াপ্ত করা সেই বাড়িতে উঠেছিল। দীর্ঘদিন এই বাড়িতে থেকেছে এবং মাঝে মধ্যে ঢাকার বাড়িতে থাকতো। পরবর্তী সময়ে বাড়িটিতে আর্ক কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার দখলে রেখেছিল এবং বিভিন্ন মাধ্যমে লোকবল তৈরি করে ২০০৮ এর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চান্দিনা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে এলাকাছাড়া হয় সে। পরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায় মেহনাজ। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাথে তা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠে। 

কুমিল্লার প্রাক্তন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল জানান, আবদুর রশিদ খোন্দকারের ঐ সব সম্পত্তি এখন সরকারের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি, ওই সম্পত্তিতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ কথা লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ঐ সম্পত্তি জনকল্যাণে ব্যবহৃত হবে। 

অপরদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি, লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম তার বাবার চাকরির সুবাদে কুমিল্লায় পড়াশুনা করতো। সে ছিলো কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। তার বাবা কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছিলেন। সে কারণে তারা থাকত কুমিল্লা শহরের অশোকতলা চৌমুহনীর ১৪৯ নম্বর দোতলা সরকারি রিক্ইুজিশনের বাড়িটিতে। তারপর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর সে ছিলো কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। 

অশোকতলার সে বাড়িটি দেখলে এখনো কুমিল্লা মানুষের মনে পড়ে যায় সেই ধিকৃত লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিমের কথা। অশোকতলার ঐ দোতলা বাড়িতে স্বাধীনতার পর উপর তলায় মৎস্য কর্মকর্তা এবং নিচতলায় খাদ্য কর্মকর্তা থাকতেন। এখন সেখানে থাকে কুমিল্লার বিশিষ্ট শিল্পী প্রয়াত নাসির আহমেদ এর পরিবার। সঙ্গীত শিল্পী পল্লব জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে তারা বাড়িটি লিজ নিয়ে সেখানে থাকেন। এর আগে সরকারি কর্মকর্তারাই থাকতেন।

কুমিল্লার এই তিনটি বাড়ি এখন ইতিহাসের ঘৃণিত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আছে অভিশাপের বোঝা নিয়ে। বাড়িগুলো দেখে কুমিল্লার মানুষ ঘৃণা প্রকাশ করে।