ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কলেজ ছাত্রীর সাথে স্কুল শিক্ষকের বিয়ে প্রতারণা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২১  

গত ৯ এপ্রিল ভালোবেসে দুই বছর আগে বিয়ে করা স্বামীর সাথে সারা দিন কুমিল্লা শহরে ঘুরে ঘুরে শপিং করি। শপিং শেষে তিনি আমাকে আমার বাবার বাড়ি পৌঁছে দেন। রাতে তার সাথে অনেকক্ষণ কথা হয়। ১০ এপ্রিল শনিবার সকালে শুনি আমার স্বামী ওয়ালি উল্লাহ আজ দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাচ্ছেন। আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেও উভয় পরিবার পরে জেনেছে। আমাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ারও প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু কিসের মধ্যে কি হয়ে গেল। স্কুল শিক্ষক স্বামী আমাকে ঘুমে রেখে প্রতারণা করেছে। বিয়ের দুই বছরের মধ্যে সে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গর্ভপাত ঘটিয়েছে দুইবার। বলেছে,উঠিয়ে নেওয়ার পর সন্তান নেব। তার সব কথা সরল মনে বিশ্বাস করছিলাম। কিন্তু সে আমার জীবন ধ্বংস করে দিল। চান্দিনা থানার ওসি আশ্বাস দিয়েছিল সমাধান করে দিবেন কিন্তু এখন বলছে আমি আদালতে যেতাম। এখন আমি কি করব ? এ কথা বলেই সাংবাদিকদের কাছে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলেন কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বিশ্বাস গ্রামের শারমিন নাহার। তার অভিযোগ টাকার লোভে চান্দিনার এতবারপুর হাই স্কুল শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ তার সাথে বিয়ে বিয়ে খেলছেন। দীর্ঘ দিন প্রেম করে দুই বছর আগে বিয়ে এখন তিনি অস্বীকার করছেন। তার কাছে বিয়ের কাবিনসহ সব আছে বলে জানান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন নাহার। গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক আমাদের কুমিল্লা অফিসে এসে সে এ অভিযোগ করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শারমিন নাহারের মা গত ১০ বছর যাবত অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। মা অসুস্থ থাকার কারণে শারমিন নাহারের বাবা অন্যত্র বিয়ে করেন এবং নতুন সংসার করছেন। কোন ভাই না থাকায় অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন তার স্বামী চান্দিনার এতবার পুর হাই স্কুল শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ।

শারমিন নাহার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানান, আমার পরিবারের কোন অভিভাবক না থাকায় আমি আমার সব বিষয়ে আমার স্বামী ওয়ালী উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করতাম। আমার নানা আমার মায়ের প্রাপ্য পৈতৃক সম্পত্তি ৬ লাখ টাকা আমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। আমার বাবা ও বড় ভাই না থাকায় আমার একমাত্র অভিভাবক আমার স্বামীর হাতে এই টাকা তুলে দেন আমার নানা। তখনও আমি জানতাম না সে আমার এই টাকার জন্যই আমার সাথে বিয়ে বিয়ে খেলা খেলেছে।

শারমিন নাহার আরও বলেন, আমার স্বামী এতবার হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক ওয়ালি উল্লাহ’র সাথে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৮ সালে আমরা বিয়ে করি। তারপর আমার স্বামী তার পরিবারকে জানালে তারা আমার অভিভাবকদের জানান তারা আমাকে পরে সময় করে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাড়ি নেবেন। আমার পরিবার ও তাদের পরিবারের কেউই এই বিয়েতে অমত ছিল না। বিয়ের পর আমার স্বামী আর আমি একই সাথে থাকতাম চান্দিনা মহিলা কলেজের সামনের একটি ভাড়া বাড়িতে। এভাবে প্রায় ২ বছর পার হয়। কখনো আমাদের কোন ঝগড়া বিবাদ হয়নি। গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) আমি ও আমার স্বামী কুমিল্লা শহরে আসি শপিং করার জন্য । শপিং শেষে সে আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসে। রাতেও তার সাথে আমার খুব সুন্দরভাবেই কথা হয়। কিন্তু সকালে খবর পাই সে আরেক বউ নিয়ে বাড়ি এসেছে। আমি খবর পেয়ে আমার চাচা চাচিদের জানালে তারা আমাকে আশ^স্ত করে এবং ঘটনার সত্যতার জন্য আমার স্বামীর বাড়ি গিয়ে নিশ্চিত হয় যে, সে বিয়ে করেছে। পরে আমি আমার শাশুড়ির কাছে গিয়ে কান্না-কাটি করলে তিনি আমাকে ধমকি দিয়ে বলেন, “এক বেডায় ৫০ বিয়ে করতে হারে। কি অইছে কও”।

এলাকার মানুষের মাঝে এই বিষয় জানাজানি হলে ওয়ালি উল্লাহ ও তার ভাই সফিউল্লাহ পুলিশকে খবর দেন । পুলিশ এসে আমার সব কথা শুনার পর তারা জানায়, ২ পরিবার নিয়ে বসবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা বসেনি। কাল চান্দিনার ওসি আমাকে কল দিয়ে কোর্টে দাঁড়াতে বলে। কিন্তু কোট তো বন্ধ আমি কি করবো এখন? মরে যাওয়া ছাড়া আমার কোন উপায় নেই ।

এদিকে আমার স্বামী ও তার ভাইরা আমাকে ডিভোর্স লেটার দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি ধমকিও দিচ্ছে। তারা আমাকে সন্ত্রাসী দিয়ে তুলে নিয়ে গুম করে দেবেন এমন কথাও বলছেন। আমার ছোটবোন কুমিল্লা মহিলা কলেজের ছাত্রী। আমার কিছু হলে তার কি হবে এই চিন্তায় আমার অসুস্থ মা মৃত্যুশয্যায়।

এই বিষয়ে শারমিন জাহানের চাচি আয়শা বেগম জানান, শারমিন জাহানের স্বামীর বিয়ের খবর শুনে তার নানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং তিনি আরও জানান যদিও দুই পরিবারের অজান্তে বিয়ে হয়েছে কিন্তু পরবর্তিতে সবাই জানতে পেরেছে বিয়ের ব্যাপারে তবুও ওয়ালিউল্লাহ কেন আমার ভাতিজির উপর এই জুলুম করলো ? আমরা চাই এ মেয়ে জামাইয়ের ভাত খাক। যদি শারমিন কে জামাই না নেয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাইব।

এই বিষয়ে চান্দিনা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রব বলেন, আমি আগে জানতাম না তাদের বিয়ে হয়েছে। যখন ওয়ালি উল্লাহ’র পরিবার ওয়ালি উল্লাহকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করিয়ে বউ নিয়ে বাড়ি আসেন তখন আমাকে সারমিন নাহার কল দিয়ে জানায় ্ওয়ালি উল্লাহ আমাকে আগে বিয়ে করেছে। পরে চান্দিনা থানার ওসি সহ আমরা সোমবার বিষয়টা সমাধানের জন্য বসি। ওসির ব্যাক্তিগত সমস্যার জন্য ওসি বৃহস্পতিবার বিকেলে বসার জন্য সবাইকে বলেন। বসলে বুঝা যাবে তারা কি করে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক ওয়ালি উল্লাহ বলেন , আমি এই মেয়েকে বিয়েই করিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই অভিযোগ করা হয়েছে। টাকা লেনদেনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কোন টাকার ব্যাপারে জানি না। এসব আমার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের ষড়যন্ত্র।

ওয়ালি উল্লাহর সাথে শারমিনের বিয়ের কথা স্বীকার করে চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ সামছুদ্দিন ভুইয়া জানান, যতটুকু বুঝতে পেরেছি তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে এবং সম্ভবত দুই লক্ষ টাকা কাবিনও হয়েছে। ওইদিন শারমিন আক্তার নামে ওই মেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে আমি সাথে সাথে ওয়ালি উল্লাহর বাড়িতে ফোর্স পাঠাই। সেখানে শারমিন বলেন, গত দুই বছর হলো সে আমাকে বিয়ে করেছে। এখন আমাকে না জানিয়ে সে আজ দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়িতে বউ নিয়ে এসেছে। আমাকে গ্রহন না করলে আমি আত্মহত্যা করব। তখন পুলিশ তাকে আত্মহত্যা থেকে নিবৃত্ত করে এবং উভয় পরিবারকে থানায় আসতে বলে। থানায় আসলে আমি সোমবার বসার তারিখ দিলে ছেলের পক্ষ থেকে জানায় সে নতুন বিয়ে করেছে , অনুষ্ঠান আছে দুই দিন পরে সময় দেন। তখন আমি বৃহস্পতিবার সময় দেই। কিন্তু এর মধ্যে শারিমন ছেলের নতুন শ^শুর বাড়ি গিয়ে হৈ হুল্লুর করে এসেছে। তখন আমি তাকে বলেছি, যদিও এটা আমার কাজ না। তারপরেও বলেছি বৃহস্পতিবার আমি মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু এর আগে ছেলের নতুন শ^শুর বাড়ি গিয়েছ কেন। এরপর আমি রাগ করে বলেছি,আমার কিছু করার নেই। তুমি আদালতে মামলা কর। আর এখনো আমি বলি যদি উভয় পক্ষ আমার কাছে আসে তাহলে আমি সমাধান করার চেষ্টা করব।

এ দিকে, চান্দিনা বিশ্বাস এলাকার বিভিন্ন পেশার একাধিক মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান,যদিও শারমিন ও ওয়ালি উল্লাহ নিজেরা প্রেম করে বিয়ে করেছে, কিন্তু এলাকার মানুষ কম বেশি সবাই জানত। এবং উভয় পরিবার মিল হয়ে যাওয়ার কথাও চলছিল। এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, শারমিন যেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়।