ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কুমিল্লার ঐতিহ্য সু-প্রসন্ন করতে বিশ্বের ৮ দেশে যাচ্ছে কুমিল্লার

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০১৯  

দিন দিন বাড়ছে কুমিল্লার খাদি কাপড়ের কদর। এক সময় সংগ্রামী মানুষ আর গরিবের পোষাক হিসেবে পরিচিত ছিলো খাদি। এখন তা ফ্যাশনে সময়ের চাহিদা মেটাচ্ছে। ঈদ-পূজায় খাদির কাপড় ক্রয়ে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ। কুমিল্লায় খাদি কাপড়ের দোকানে এখন প্রতিদিনই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে।
খাদি ব্যবসায়ী সূত্র মতে, খাদির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। এ কাপড় খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ‘খাদি’। শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়। সে সময়ই কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন মহাত্মা গান্ধীর আহবানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনে বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক উঠে। সর্বত্রই আওয়াজ ওঠে ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’।
সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। খাদির কাপড় যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
এ সাফল্য ও সুনাম অর্জিত হয়েছে বহু বছর ধরে অনেক কারিগর আর ব্যবসায়ীর অক্লান্ত পরিশ্রমে। খাদি কাপড়ের সঙ্গে এখন জড়িয়ে গেছে কয়েকটি দিক। তা হচ্ছে তাঁতী, সুতা কাটুনী, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। সবাই মিলে তৈরি করেন নান্দনিক খাদি কাপড়। বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার পরিবার এই পেশায় জড়িত। মহানগরে খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে শতাধিক।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর কুমিল্লা শাখা থেকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করা হলে খাদি শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। তবে খাদি শিল্পের এ বিপর্যয় বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৫২ সালে সমবায় আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ ড. আখতার হামিদ খানের চেষ্টায় এবং তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহযোগিতায় কুমিল্লার অভয়াশ্রমে দি খাদি এন্ড কটেজ ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লা মহানগরের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘অভয় আশ্রম’ এর কর্মীদের প্রচেষ্টায় কুমিল্লার আশ-পাশের গ্রামগুলোতে হাতে সুতা কাটা ও হস্তচালিত তাঁতের ব্যবহার ব্যাপক ভাবে শুরু হয়।
বিশেষ করে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া। দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা, সাইতলা, বাখরাবাদ, বেলাশ্বর, ভানী, হারং, গুনঞ্জর। দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর। মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, রামকৃষ্ণপুর, ঘোড়াশাল, ময়নামতি, জালালপুর ও মইনপুর এলাকায় হস্তচালিত তাঁত শিল্পের প্রসার ঘটে। এই তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে বারেরা, রামচন্দ্রপুর, জাফরাবাজ, সাইকট, বাবিরচড়, কুটুম্বপুর, কলাগাঁও, সোনাপুর, সাইতলা, ভানী, ফুলতলী, দোবাইরা, গনিপুর ইত্যাদি গ্রামগুলোতে জনগণ হাতে সুতা কাটার পেশায় জড়িয়ে পড়ে।
খাদি শিল্পের প্রসারে উল্লেখ্যযোগ ভূমিকা রেখেছেন কুমিল্লা মহানগরের খাদি ঘরের তরুণী মোহন রাহা, খাদি কুটির শিল্পের শংকর সাহা, খাদি ভবনের দীনেশ দাশ, বিশুদ্ধ খদ্দরের মনমোহন দত্ত, রাম নারায়ণ ষ্টোরের কৃষ্ণ সাহা। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই।
বর্তমানে কুমিল্লার খাদি পোষাকের মধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সেলোয়ার কামিজ, ওড়না, বিছানার চাদর, গায়ের চাদরসহ ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রীতে নজরকাড়া ডিজাইন আনা হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে খাদির সব ধরণের পোষাকে আধুনিকতা আসলেও খদ্দরের সেই মোটা কাপড়ের পাঞ্জাবি এখনও আগের জৌলুস ধরে রেখেছে। খাদির পোষাক যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি পরতে আরামদায়ক।

কুমিল্লা মহানগরীর মনোহরপুর ও লাকসাম রোডে খাদিপণ্য বিক্রির পুরনো দোকানগুলোর পাশাপাশি অসংখ্য নতুন দোকান গড়ে উঠেছে। অন্যান্য জেলার লোকজন কুমিল্লায় বেড়াতে এলে স্মারক হিসেবে নিয়ে যান কুমিল্লার খাদি। কুমিল্লার খাদি পণ্য বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিহ্য আর চেতনাকে লালন করছে শতবর্ষ ধরে।

দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামের গ্রামীণ খদ্দর ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী রঞ্জিত দেবনাথ বলেন, ‘অনেকে তাঁত বন্ধ করে দিয়ে ভিন্ন পেশা ধরেছে। আমরা বাপ-দাদার ঐতিহ্যের পেশা হিসেবে এখনও কাপড় বুনছি। সুতা ও তুলার দাম বাড়ায় আমরা বেকায়দায় পড়েছি।’

কুমিল্লা মহানগরীর প্রবীণ খাদি কাপড়ের ব্যবসায়ী খাদিঘরের স্বত্ত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, ‘খাদি শিল্পের প্রসারে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক খাদি শিল্পীদের সঠিক ভাবে জরিপ করে তাদের সুবিধা-অসুবিধা জেনে তাদের সংগঠিত করা উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে খাদি শিল্পে অনেক নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে, কারণ ১৯২১ সালের প্রেক্ষাপট ও আজকের প্রেক্ষাপট এক নয়। কুমিল্লা খাদি শিল্পের একটা শক্ত ভীত আছে। শতবর্ষের খাদি পণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। খাদির পোষাক যেমন দৃষ্টিনন্দন, পরতে আরামদায়ক এবং দামে সাশ্রয়ী। পৃথিবীর যেখানে বাঙালী কমিউনিটি আছে সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে।,

তিনি মনে করেন,বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশীয় পণ্যের প্রদর্শনী করলে তা পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।