ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কোরআনে বর্ণিত এক অকৃতজ্ঞ জাতির ইতিহাস

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২২  

মানুষকে সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা। দুনিয়ার জীবনে তার সকল বিধান মেনে চলা। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। সর্বক্ষেত্রে তার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া। 

উপরোক্ত কাজগুলো করার জন্য আল্লাহপাক মানুষকে অসহায়ভাবে ছেড়ে দেননি। তিনি অত্যন্ত দয়া পরবশ হয়ে যুগে যুগে পাঠিয়েছেন নবী-রাসূল এবং হুকুম-আহকাম সম্বলিত কিতাব ও ছহিফা। নবী-রাসূলগণ আল্লাহপাকের নির্দেশে নির্দেশিত হয়ে মানুষদের হেদায়েতের পথপ্রদর্শন করেছেন। কীভাবে ইবাদত করতে হবে, কী পথ অবলম্বন করলে আল্লাহপাক রাজি হবেন, তিনি খুশি হবেন, বান্দাকে পুরস্কৃত করবেন- সব কিছুই বিস্তারিতভাবে বর্ণনা এবং নিজে অনুশীলনের মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন।

নবী-রাসূলগণ যেসব আসমানী কিতাব অনুসরণ করেছেন সেগুলো আজও আছে। তবে পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ার পর ওই সব কিতাবের অনুকরণ রহিত হয়ে গেছে। এখন আসমানী কিতাবের মধ্যে একমাত্র পবিত্র কোরআনই কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় থাকবে এবং সমস্ত মানুষের পথ-নির্দেশিকা হিসেবে বলবৎ থাকবে। কাজেই পবিত্র কোরআনের প্রতিটি হুকুম মানা বান্দার ওপর ফরজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বিভিন্ন জাতির বর্ণনা দিয়েছেন। এর মধ্যে যারা আল্লাহপাকের হুকুম পালন করেছেন, তাদেরকে কীভাবে পুরস্কৃত করেছেন। আবার যারা তার নাফরমানী করেছে; তাদেরকে কীভাবে শাস্তি দিয়েছেন তাও বান্দাকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্যে আলোচনা করেছেন। যেসব জাতির কথা আল্লাহপাক বলেছেন, তাদের মধ্যে একটি নাফরমান জাতি হলো কওমে সাবা।

ইয়ামেন সম্রাট বা সে দেশের অধিবাসীদের উপাধি ছিল ‘সাবা’। ইমাম আহমদ (রহ.) হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি হুজুরে পাক (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কোরআনে উল্লেখিত ‘সাবা’ পুরুষের নাম, নাকি নারীর নাম, না কোন ভূখণ্ডের নাম? রাসূল (সা.) বললেন, সাবা একজন পুরুষের নাম; তার দশটি পুত্র ছিল। এর মধ্যে ছয়টি ইয়েমেনে এবং চারজন শাম দেশে বসতি স্থাপন করে। তাদের ঔরসজাত সন্তান শাম ও ইয়েমেনে বিস্তার লাভ করে এবং তারাই সাবা নামে পরিচিত। সাবার আসল নাম ছিল ‘আবদে শামস’।

ইতিহাসবিদদের মতে, সাবা ছিলেন ধর্মপরায়ণ অতি নেকবখত। তিনি তাওরাত এবং ইনজিলের পন্ডিত ছিলেন। তিনি শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি অসাল্লাম-এর আগমনের সুসংবাদ মানুষকে দিয়েছেন। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শানে আরবিতে কয়েক লাইনের একটি কবিতাও রচনা করেছিলেন। সে কবিতায় রাসূল (সা.)-এর অবির্ভাবের সুসংবাদ ছিল এবং তিনি বাসনা প্রকাশ করেছিলেন যে, আমি যদি জীবিত থাকি তাহলে তাকে সাহায্য করতাম। আমি এবং আমার সম্প্রদায়কে নিয়ে তার প্রতি ঈমান আনতাম।

তাবাবেয়া সম্প্রদায় এবং রানী বিলকিস সাবা সম্প্রদায়েরই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রাজি ছিলেন। তাদের সম্প্রদায়ে ১৩ জন নবী এসেছিলেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি ঈমান তাদের মজবুত ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের সুখ-শান্তির সকল প্রকার উপকরণাদি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। পয়গাম্বরগণের মাধ্যমে এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার আদেশ দান করেছিলেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তারা এ অবস্থার ওপর কায়েম থাকে এবং সর্বপ্রকার সুখ ও শান্তি ভোগ করতে থাকে।

অবশেষে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে তারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি গাফেল হয়ে পড়ে, এমনকি তারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করতে থাকে। তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে হুশিয়ার করার জন্য ১৩ জন পয়গাম্বর প্রেরণ করেন। তারা তাদেরকে সৎপথে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর বন্যার আজাব প্রেরণ করেন। ফলে তাদের শহর ও বাগ-বাগিচা বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

ইবনে কাসীরের বর্নণা অনুযায়ী, সাবা সম্প্রদায়ের বাঁধের ইতিহাস এই ইয়ামনের রাজধানী সানআ থেকে তিন মনজিল দূরে মাআরেব নগরী অবস্থিত ছিল। এখানে ছিল সাবা সম্প্রদায়ের বসতি। দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত ছিল বিধায় উভয় পাহাড়ের উপর থেকে বৃষ্টির পানি বন্যার আকারে নেমে আসত। ফলে শহরের জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে যেত।

দেশের সম্রাটরা উভয় পাহাড়ের মাঝখানে একটি শক্ত ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ করলেন। এ বাঁধ পাহাড় থেকে আগত বন্যার পানি রোধ করে পানির একটি বিরাট ভান্ডার তৈরি করে দেয়। পাহাড়ি ঢলের পানিও এতে সঞ্চিত হতে থাকে। বাঁধের উপরে-নিচে ও মাঝখানে পানি বের করার তিনটি দরজা নির্মাণ করা হয় যাতে সঞ্চিত পানি সুশৃংখলভাবে শহরের লোকজনের মধ্যে এবং তাদের ক্ষেতে ও বাগানে পৌঁছানো যায়।

প্রথমে উপরের দরজা খুলে পানি ছাড়া হতো। উপরের পানি শেষ হয়ে গেলে মাঝখানের এবং সর্বশেষে নিচের তৃতীয় দরজা খুলে দেওয়া হতো। পরবর্তী বছর বৃষ্টির মৌসুমে বাঁধের তিনটি স্তরই আবার পানিতে পূর্ণ হয়ে যেত। বাঁধের পানি নিচে সংরক্ষন করার উদ্দেশ্যে একটি সুবৃহৎ আধার নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে পানির ১২টি খাল তৈরি করে শহরের বিভিন্ন দিকে পৌঁছানো হয়েছিল। সব খালে একই গতিতে পানি প্রবাহিত হত এবং নাগরিকদের প্রয়োজন মেটাতো।

শহরের ডানে ও বায়ে অবস্থিত পাহাড়দ্বয়ের কিনারায় ফল-মুলের বাগান তৈরি করা হয়েছিল। এসব বাগানে খালের পানি প্রবাহিত হত। এসব বাগান পরস্পর সংলগ্ন অবস্থায় পাহাড়ের কিনারায় দু’সারিতে বহুদুর পর্যন্ত ছিল। এগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও কোরআনে দু’টি বাগানের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। কারণ, এক সারিতে সমস্ত বাগান পরস্পর সংলগ্ন হওয়ার কারণে এক বাগান এবং অপর সারির সমস্ত বাগানকে একই কারনে দ্বিতীয় বাগান বলে অভিহিত করা হয়েছে।
এসব বাগানে সবরকম বৃক্ষ ফল-মূল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হত। কাতাদাহ প্রমুখের বর্ণনা অনুযায়ী, একজন লোক মাথায় খালি ঝুড়ি নিয়ে গমন করলে গাছ থেকে পতিত ফলমূল দ্বারা তা আপনা-আপনি ভরে যেত। হাত লাগানোরও প্রয়োজন হত না। -(ইবনে কাসীর)

আল্লাহ তায়ালা পয়গাম্বরগণের মাধ্যমে তাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন, তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত এই অফুরন্ত জীবনোপকরণ ব্যবহার কর এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সৎকর্ম ও আল্লাহর আনুগত্য করতে থাকো। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এই শহরকে পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর করেছেন। শহরটি নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে অবস্থিত ছিল এবং আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধি ছিল।

সমগ্র শহরে মশা-মাছি ছারপোকা ও সাপ-বিচ্ছুর মত ইতর প্রাণীর নামগন্ধও ছিল না। বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তি শরীরে কাপড়-চোপড়ে উকুন ইত্যাদি নিয়ে এ শহরে পৌঁছালে সেগুলো আপনা আপনি মরে সাফ হয়ে যেত।

আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, এসব নেয়ামত ভোগ-বিলাস কেবল পার্থিব জীবন পর্যন্তই সীমিত নয়, বরং শুকরিয়া আদায় করতে থাকলে পরকালে আরও বৃহৎ ও স্থায়ী নেয়ামতের ওয়াদা রয়েছে। কারণ এসব নেয়ামতের স্রষ্টা ও তোমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল। শুকরিয়া আদায়ে ঘটনাক্রমে কোনো ত্রুটি-বিচ্যূতি হয়ে গেলে তিনি ক্ষমা করবেন।

আল্লাহ তায়ালা সুবিস্তৃত নেয়ামত ও পয়গম্বরগণের হুশিয়ারী সত্ত্বেও যখন সাবা সম্প্রদায় আল্লাহর আদেশ পালনে বিমুখ হল, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর বাঁধভাঙ্গা বন্যা ছেড়ে দিলেন। বন্যাকে বাঁধের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করার কারণ এই যে, যে বাঁধ তাদের হেফাযত ও স্বাচ্ছন্দের উপায় ছিল, আল্লাহ তায়ালা তাকেই তাদের বিপর্যয় ও মুসিবতের কারণ করে দিলেন।

তফসীরবিদগণ বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা যখন এ সম্প্রদায়কে বাঁধভাঙা বন্যা দ্বারা ধ্বংস কারার ইচ্ছে করলেন, তখন এই সুবৃহৎ বাঁধের গোড়ায় অন্ধ ইঁদুর নিয়োজিত করে দিলেন। তারা এর ভিত্তি দুর্বল করে দিল। বৃষ্টির মৌসুমে পানির চাপে দুর্বল ভিত্তের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়ে গেল। অবশেষে বাঁধের পেছনে সঞ্চিত পানি সমগ্র উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ল। শহরের সমস্ত ঘর-বাড়ী বিধ্বস্ত হল এবং গাছপালা উজাড় হয়ে গেল। পাহাড়ের কিনারায় দু’সারি উদ্যানের পানি শুকিয়ে গেল।

অনেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাদের কিতাবে লিখিত ছিল এ বাঁধটি ইঁদুরের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। সে মতে বাঁধের কাছে ইঁদুর দেখে তারা বিপদ সংকেত বুঝতে পারলো। ইঁদুর নিধনের উদ্দেশ্যে তারা বাঁধের নিচে অনেক বিড়াল ছেড়ে দিল যাতে ইঁদুররা বাঁধের কাছে আসতে না পারে। কিন্তু আল্লাহর তকদির প্রতিরোধ করার সাধ্য কার? বিড়ালেরা ইঁদুরের কাছে হার মানল এবংং ইঁদুরেরা বাঁধের ভিত্তিতে প্রবিষ্ট হয়ে গেল।

ঐতিহাসিক বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে যে, কিছুসংখ্যক বিচক্ষণ ও দূরদর্শী লোক ইঁদুর দেখা মাত্রই সেস্থান ত্যাগ করে আস্তে আস্তে অন্যত্র সরে গেল। অবশিষ্টরা সেখানেই রয়ে গেল; কিন্ত বন্যা শুরু হলে তারাও স্থানান্তরিত হয়ে গেল এবং অধিকাংশই বন্যায় প্রাণ হারাল। মোটকথা, সমস্ত শহর জনশূন্য হয়ে গেল। বন্যার ফলে শহর ধ্বংস হওয়ার পর তাদের দু’সারি উদ্যানের অবস্থা পবিত্র কোরআনুল কারিমে এভাবে বিবৃত হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মুল্যবান ফল-মুলের বৃক্ষের পরিবর্তে তাতে এমন বৃক্ষ উৎপন্ন করলেন, যার ফল ছিল বিস্বাদ। এ ছিল সাবা সম্প্রদায় ও তাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত রাজির কাহিনী।

উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহপাক বান্দাকে সতর্ক করে দিলেন যে, ‘হে বান্দা! তোমাদেরকে ঐশ্বর্য দান করলে তার শুকরিয়া আদায় করা তোমাদের উপর ফরজ। তবে মনে রেখো, আমি ঐশ্বর্য দিতেও পারি, নিয়েও যেতে পারি।

আল্লাহপাক যদি কাউকে সরিয়ে দিতে চান, তাহলে কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবে না। যেখানেই থাকি না কেন, মৃত্যু একদিন আমাদেরকে গ্রাস করবেই।