ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করেছিল যে আত্মদান

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২২  

কোনো কোনো মৃত্যু ইতিহাস হয়ে যায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জনস্রোতের উদ্বেল জোয়ার আনে। আসাদের মৃত্যু তেমনই এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে। তার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বেগবান হয়েছিল তৎকালীন স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট হয়ে উঠেছিল বাঙালির প্রাণের পতাকা।

আজ ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি শহীদ আসাদ নামে পরিচিত। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের আইয়ুবশাহীর পতনের দাবিতে গণআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আসাদ। ওই সময় আরও দু’জন শহীদ হন। শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর।

বাম গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসাদ শুধু ছাত্র নয়, কৃষক-শ্রমিকদের মধ্যেও রাজনৈতিক কাজ শুরু করেন। ২০ জানুয়ারি দুপুরে ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখাঁরপুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদের চানখাঁরপুলে বাধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেয় এবং আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। ওই অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে গুলি করে এক পুলিশ অফিসার। তৎক্ষণাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে জন্ম হয় আসাদের। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সার্বক্ষণিকভাবে সমাজবদলের রাজনীতি শুরু করেন। এ সময় পড়াশোনা, ছাত্র আন্দোলন আর মেহনতি মানুষের মুক্তির লড়াই ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ ছিল না তার।

অল্পদিনের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং কাজের আন্তরিকতার কারণে তিনি রাজনৈতিক মহলে বেশ পরিচিতি অর্জন করেন। এর ফলে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং তৎকালীন ঢাকা হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে একই বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি মওলানা ভাসানীর নির্দেশে মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করার জন্য নিজ গ্রামে চলে যান। নিজের ভবিষ্যতের কথা, পরিবারের কথা না ভেবে কৃষক-শ্রমিক-খেতমজুর-শ্রমজীবী-পেশাজীবীর শোষণমুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে আসাদ ঢাকায় চলে আসেন। এ সময় আরও ভালো ফলের জন্য তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের চেষ্টা করছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাত্র-যুব-শ্রমজীবীকে সংগঠিত করেন। আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল (বতর্মান শহীদুল্লাহ হল) শাখার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী পূর্ব বাংলায় হরতাল ঘোষণা করেন। এ হরতাল সফল করার জন্য আসাদ শিবপুর, মনহরদী, রায়পুর, নরসিংদীতে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-খেতমজুর-শ্রমজীবীকে নিয়ে সফলভাবে হরতাল পালন করেন। ওই এলাকায় হরতাল পালনের সময় কৃষকের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে তিনজন কৃষক নিহত হন। আহত হন আসাদ। আহত অবস্থায় তিনি ঢাকায় এসে পত্রিকা অফিসে ওই ঘটনার বিবরণ দেন, যা পরদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এরপর তিনি ১৯৬৯ সালের সেই সংগ্রামময় উত্তাল দিনগুলোতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসনবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে থাকেন। জানুয়ারি মাসের প্রতিটি দিনই কেটেছে তার লড়াই-সংগ্রাম আর আন্দোলনে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসনবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে আসাদ শহীদ হন। মৃত্যুকালীন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

হাজারও ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে আবার মিছিল বের করে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারা দেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষদিনে পুলিশ আবার গুলিবর্ষণ করে।

আসাদের মৃত্যুতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সরকার দু’মাসের জন্য ১৪৪ ধারা আইন প্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। গণঅভ্যুত্থানের মহান জাগরণ এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথিকৃৎ শহীদ আসাদুজ্জামানের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। আইয়ুবের সামরিক স্বৈরশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে অকুতোভয় এ বীর সেনানীর শাহাদতবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।