ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২০  

কুমিল্লায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, অনিয়মসহ একের পর এক বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠছে। গত পাঁচ মাসে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ১০ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার প্রেক্ষিতে তদন্তের ব্যবস্থা নিয়েছে কুমিল্লার স্থানীয় সরকার বিভাগ। ইতোমধ্যে দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও দাউদকান্দি উপজেলার দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালামকে বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এ দু’জনই হাইকোর্টে আপিলের মাধ্যমে পুনরায় স্বপদে বহাল হয়েছেন।

জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, কতিপয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা ততই বাড়ছে।
কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে এসব অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। যেসব ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাদের বিষয়ে স্ব স্ব ইউএনওকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বর্তমান সময়ে দেখা গেছে, একই রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরা এ ধরনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। তাই প্রশাসনের তদন্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের মনোনীত বা সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে কঠোর হতে হবে।”

তবে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের দাবি, আসন্ন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব কাজ করছে। তদন্তে যা ফল আসবে তা-ই মেনে নেয়া হবে।

আলোচিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে কুমিল্লার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  সেপ্টেম্বর মাসে  তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে তিতাসের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কাজ শেষ। প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। আমরা অতিদ্রুত প্রতিবেদন পাঠাবো।’

জানা গেছে, চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন ইউপি মেম্বাররা। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরদ্ধে এটি একটি ষড়যন্ত্র। যেহেতু প্রশাসন এর তদন্ত করছে, যা ফল আসবে আমি তা-ই মেনে নেবো।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘সামনে আবার ইউপি নির্বাচন আসছে; তাই আমার ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য বেশ কয়েকজন ইউপি মেম্বার এই কাজগুলো করছে।’

গত ১৮ আগস্ট মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক অধিবাসী স্থানীয় সরকার বিভাগে এলজিএসপি’র অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য বলা হয়। মুরাদনগরের ইউএনও অভিষেক দাশ জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। এছাড়াও এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি স্থানীয় এক সাংবাদিক ও এক যুবলীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়।

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, এগুলো শত্রুতা সাপেক্ষে করা হয়েছে। আমাকে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাে হেয় করার জন্যই এ ধরনের অভিযোগ তুলছে প্রতিপক্ষ।

গত ১৬ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বারে বিচারের নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে নির্যাতনের অভিযোগে রাজামেহার ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। পরে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে কিছুদিন আগে হাইকোর্টে আপিল করে চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকার আদেশ নিয়ে আসেন ওই চেয়ারম্যান।

ওদিকে গত ১২ মে দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আবদুল কাদের দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি কিছু জানি না।’ দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খান জানান, সে সময় একটি অভিযোগ হয়েছিল। আমরা প্রতিবেদনও দিয়েছি। পরে এই চেয়ারম্যান বরখাস্তও হন। কিন্তুহাইকোর্ট থেকে সেই আদেশে স্থগিতাদেশ আসে।

এছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর চান্দিনা উপজেলার বরইট ইউপি চেয়ারম্যন আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যায় স্থানীয় সরকার বিভাগে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাদন্ত করে রিপোর্ট  পাঠাতে বলা হয়। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, ‘আমি এর সাথে জড়িত না। সামনে নির্বাচন আসছে। আমার মানহানি করার জন্য প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা দ্রুত  প্রতিবেদন দেবো।’

গত ১৪ সেপ্টেম্বর মেঘনা উপজেলার মানিকারচর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। ৩১ আগস্ট মুরাদনগেরের টনকি ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডেও মেম্বার মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনে জাকির হোসেন। ৭ জুলাই একই উপজেলার ৭ নং বাংগরা ইউপির ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগ যায় এবং পূর্ব দৈর পূর্ব ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন মো. আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।

স্থানীর সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ  বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা যেহেতু তৃণমূলের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকেন, তাদের সাধারণ মানুষের জন্যই কাজ করতে হবে। মেম্বাররা গ্রামে থাকলেও অনেক চেয়ারম্যান গ্রামে থাকেন না। কিন্তু তাদের সেখানে থেকেই প্রত্যক্ষভাবে উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজগুলো করা উচিত। তাহলেই তাদের মধ্যে যেমন সমন্বয় থাকবে, তেমনি অভিযোগও কমে আসবে।