ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ছবি ও ভিডিও ধারণ : কখন জায়েয কখন নাজায়েয?

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২০  

ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম। আমাদের গর্বের ধন ইসলাম কোনো বিধান মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয় না। মানুষ এবং সমাজের প্রয়োজন অনুসারে ইসলামের বিধানগুলো চলতে থাকে। আগেকার ধর্মের ন্যায় এখানে ইফরাত তাফরিত (অতি বাড়াবাড়ি অতি ছাড়াছাড়ি) নেই। আগেকার ধর্মগুলোতে ইফরাত তাফরিতের একটু ছড়াছড়ি ছিল।

ইসলামে প্রাণীর ছবি ধারণ নিষিদ্ধ। মূর্তি ভাস্কর্য নির্মাণ, ছবি অঙ্কনও জায়েয নয়। তবে বর্তমান যুগের ডিজিটাল ছবি, ভিডিও শরয়ী নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত কিনা? এ বিষয়ে কিছুটা ইখতিলাফ ও মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের নিকট ডিজিটাল ছবি ও ভিডিও নাজায়েয। কিন্তু কারো কারো মতে ডিজিটাল ছবি ও ভিডিও শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়। উল্লেখ্য, ছবি ও ভিডিও এর সঙ্গে অন্য কোনো নাজায়েয বিষয় যুক্ত হলে তখন সবার নিকটে ডিজিটাল ছবি ও ভিডিও নাজায়েয বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে কারো কোনো ইখতিলাফ নেই।

নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো-

ছবি নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি অনেক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে আমরা কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عن نافع عن بن عمر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال إِنَّ أَصْحَابَ هذِهِ الصُّوَرِ يَوْمَ القِيَامَةِ يُعَذَّبُونَ، فَيُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ وَقَالَ : إِنَّ البَيْتَ الَّذِي فِيهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ المَلاَئِكَةُ

‘এ সব ছবি অঙ্কনকারীকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা কিছু সষ্টি করেছ, তার জীবন দাও। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি : হাদিস নম্বর ২১০৫, সহিহ মুসলিম : হাদিস নম্বর ২১০৭)।

অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ

হজরত সালিম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন সবচে বেশি শাস্তির সম্মুখীন হবে ছবি অঙ্কনকারীরা। (সহিহ বুখারি : হাদিস নম্বর ৫৯৫০, সহিহ মুসলিম : হাদিস নম্বর ৫৫০৫)।

প্রাণির ছবি আঁকা জায়েয নয়। গাছপালার ছবি আঁকা জায়েয।

একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আল্লাহর রাসূলকে বলেছেন, তিনটি বস্তুর কোনো একটি থাকলে ফেরেশতা কিছুতেই তাতে প্রবেশ করে না। কুকুর, জানাবাত  (গোসল ফরজ হয়েছে এমন ব্যক্তি,) প্রাণীর আকৃতি। (মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নম্বর ৬৪৭, হাদিসের সনদ হাসান)।

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে,

قَالَ سَعِيدِ بْنِ أَبِي الْحَسَنِ كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ عَبَّاس رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا إِذْ أَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا عَبَّاسٍ إِنِّي إِنْسَانٌ إِنَّمَا مَعِيشَتِي مِنْ صَنْعَةِ يَدِي وَإِنِّي أَصْنَعُ هذِهِ التَّصَاوِيرَ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَا أُحَدِّثُكَ إِلَّا مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ سَمِعْتُه يَقُولُ مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فَإِنَّ اللهَ مُعَذِّبُه حَتَّى يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ فِيهَا أَبَدًا فَرَبَا الرَّجُلُ رَبْوَةً شَدِيدَةً وَاصْفَرَّ وَجْهُه فَقَالَ وَيْحَكَ إِنْ أَبَيْتَ إِلَّا أَنْ تَصْنَعَ فَعَلَيْكَ بِهذَا الشَّجَرِ كُلِّ شَيْءٍ لَيْسَ فِيهِ رُوحٌ

তাবেয়ি সাঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহ.) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর কাছে ছিলাম, তখন এক লোক তার কাছে এসে বলল, হে ইবনে আব্বাস, আমি উপার্জন করি হাতে কাজ করে। আমি এ সব ছবি অঙ্কন করি। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, আমি রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি, তোমাকে তাই বলব। তিনি বলেছেন, যদি কেউ প্রাণির ছবি আঁকে তাহলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন। যদি সে তাতে প্রাণের সঞ্চার করতে না পারে। আর সে কখনো তাতে প্রাণের সঞ্চার করতে পারবে না। তখন লোকটি বিমর্ষ হলো এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, হে দুর্ভাগা! যদি তুমি ছবি আঁকতেই চাও, তাহলে এই গাছ ও যাতে প্রাণ নেই তা আঁকতে পার। (সহিহ বুখারি : হাদিস নম্বর : ২২২৫)।

পাসপোর্ট ও আই ডি কার্ড ইত্যাদির ছবির হুকুম

পাসপোর্ট ও আই ডি কার্ড আমাদের নাগরিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে পাসপোর্ট ও আই ডি কার্ড এর চেয়ে বেশি অনুষঙ্গ ও জীবনঘনিষ্ঠ হলো ধর্ম। সুতরাং যদি ধর্মের হুকুমের বিপরীতের পাসপোর্ট ও আই ডি কার্ডেও আসে আমরা পাসপোর্ট ও আই ডি কার্ডকে পেছনে ফেলবো ধর্মকে নয়। কিন্তু জীবন এতোটা কঠোরতা করেননি। ইসলাম প্রয়োজনের স্বার্থে ছবি তুলা ব্যবহার করাকে জায়েয করেছে। পাসপোর্ট ও আই ডি কার্ড ইত্যাদির ছবির প্রয়োজনীয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, জনসাধারণের জন্য তা না করে কোনো উপায় নেই। তাই জনসাধারণ এতে গোনাহগার হবে না ইনশাআল্লাহ! তবে, হ্যাঁ আপনার ছবির অনুমতি আছে বিধায় পাসপোর্টের নামে অহরহ ছবি তুলতে থাকবেন বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। শুধু পাসপোর্ট আই ডি কার্ডসহ আরো যত প্রয়োজন পড়ে; আপনি যত খুশি ছবি তুলতে পারেন। প্রয়োজনের নাম দিয়ে কিন্তু বারবার ছবি তোলা বা সংরক্ষণ করা জায়েজ হবে না।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা ছবি তোলাতে ব্যাকুল। কিছু হলেও ছবি আর ভিডিও। সেলফি তো আছেই। আমাদের সমাজে সেলফি এখন একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। শিশু কিশোর যুবক তরুণ তরুণী সবাই সেলফিময় হয়ে গেছে। যত্রতত্র এখানে সেখানে প্রোগ্রামের ভেতরে বাইরে সবখানে শুধু ছবি আর ছবি। কেউ যদি তাদেরকে নিষেধ করে তখন তারা বলে প্রয়োজনের খাতিরে তুলতে হয়। 

বর্তমান যুগের ডিজিটাল ক্যামেরার ডিজিটাল ছবি, ভিডিও এর হুকুম

ডিজিটাল ছবি, ভিডিও অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের নিকট নাজায়েয। তবে কোনো কোনো আলেম  এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন। তারা বলতে চান যে, ছবি এমন আকৃতি, যার স্থায়িত্ব আছে। আর যে আকৃতির স্থায়িত্ব আছে তা নিষিদ্ধ। যেমন কাগজের ছবি। কিন্তু যে আকৃতির স্থায়িত্ব নেই তা ছবি নয়, তা ছায়া বা প্রতিবিম্ব সদৃশ এবং তা নিষিদ্ধ নয়। যেমন রোদে মানুষের আকৃতি, আয়নায় মানুষের আকৃতি ইত্যাদি।

বর্তমান যুগের ডিজিটাল ক্যামেরায় যে ছবি ধারণ করা হয় তার অবস্থা এই যে, মানুষ যখন  ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় তখন তার আকৃতি ক্যামেরার পর্দায় দেখা যায়। কিন্তু ক্যামেরায় যখন আকৃতিটি সেভ বা সংরক্ষণ করা হয় তখন কিন্তু আর আকৃতিটি থাকে না। সরাসরি আকৃতিটি সংরক্ষিত হয় না। সংরক্ষিত হয় আকৃতির বিদ্যুতিক কণাগুলো। পরবর্তীতে যখন ভিডিও চালু করা হয় তখন কণাগুলো পর্দায় ভেসে ওঠে, আর ছবি প্রকাশ পায়। কিন্তু এর কোনো স্থায়িত্ব থাকে না। বরং কণাগুলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকৃতিটিও বিলুপ্ত হয়। তাই বর্তমান যুগের ডিজিটাল ক্যামেরার ডিজিটাল ছবি (সফটওয়্যার) (কাগজে প্রিন্ট করার পূর্ব পর্যন্ত), যার কোনো স্থায়িত্ব নেই, আর যে ছবির স্থায়িত্ব আছে, উভয় ছবি এক নয়। আর ডিজিটাল ছবি আল্লাহর রাসূলের যুগে ছিল না। তাই ডিজিটাল ক্যামেরার ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে ওলামায়ে কিরামের মাঝে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে।

অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে ডিজিটাল ক্যামেরার ডিজিটাল ছবি, ভিডিও নাজায়েয। যেহেতু সেগুলো ছবি। কিন্তু কোনো কোনো আলেমের মতে বর্তমান যুগের ডিজিটাল ক্যামেরার ডিজিটাল ছবি ছায়ার বা প্রতিবিম্বের সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা ডিজিটাল ছবির কোনো স্থায়িত্ব নেই, ছায়ারও কোনো স্থায়িত্ব নেই। আর ছায়া নাজায়েয নয়। তাই ডিজিটাল ছবিকেও নাজায়েয বলা যায় না।
দেখুন তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/১৬৪, তাকরিরে তিরমিযি ২/৩৫২-৩৫৩।

উল্লেখ্য,  যারা ডিজিটাল ছবি ভিডিওকে নাজায়েয বলেননি তাদের এই ফতওয়া তখনই প্রযোজ্য হবে যখন ছবি, ভিডিও এর সঙ্গে অন্য কোনো নাজায়েয বিষয় যুক্ত না হবে। কিন্তু ছবি ও ভিডিও এর সঙ্গে অন্য কোনো নাজায়েয বিষয় যুক্ত হলে সে ছবি ও ভিডিও নাজায়েয হবে। সেক্ষেত্রে কারো কোনো দ্বিমত নেই।

আমাদের বক্তব্য : ডিজিটাল ছবি ও ভিডিও অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের নিকট নাজায়েয হওয়ার কারণে আমরা ডিজিটাল ছবি ও ভিডিওকে জায়েয বলি না। তবে মনে রাখতে হবে যে, কেউ প্রয়োজনের খাতিরে ডিজিটাল ছবি ভিডিও করলে তার ওপর ঘোর আপত্তি করা যাবে না। কেননা বিষয়টি ইজতিহাদি এবং এতে ভিন্নমতও রয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিনা প্রয়োজনে ছবি ভিডিও করা আমাদের সমাজের একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি অহেতুক কাজ। অহেতুক কাজ পরিহার করা মুমিনের দায়িত্ব।