ব্রেকিং:
৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত সিদ্দিকী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি না থাকলে সেটা কলঙ্কজনক হবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিজিবি
  • বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জনগণের ওপর বাড়তি ট্যাক্সের বোঝা বাড়িয়ে সাক্কু খেলছেন শেষ খেলা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২০  

একলাফে ১৪ গুণ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর ওপর যে ‘জুলুমের শাসন’কায়েম  করেছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানোর ভাষা যেন খুঁজে পাচ্ছে না নাগরিক সমাজ। কেউ বলছেন, মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর হয়তো ভবিষ্যতে আর নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা নাই; ভোটও দরকার নাই। তাই তিনি নগরবাসীর ওপর ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ বলছেন, মেয়র সাক্কুর নির্বাচনী ইশতেহারে লেখা ছিল, তিনি বিজয়ী হলে নগরবাসীর ওপর একপয়সাও ট্যাক্স বাড়াবেন না। এখন কোথায় গেল তার ইশতেহার? তবে ক্ষোভে ফেটে পড়লেও সবাইকে মেয়রকে নগরবাসীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে অস্বাভাবিক মাত্রায় হোল্ডিং ট্যাক্স  বাড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) বাড়িয়াওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে ‘কুমিল্লাবাসীর মাথায় ট্যাক্স-বোমা শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়; যা কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল কথা বলেন বিশিষ্ট নাগরিকসহ সাধারণ মানুষেরা। সবার কথাতেই ফুটে উঠেছে ক্ষোভের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আকুতি।

 

অপরদিকে কুমিল্লা বারের বিশিষ্ট কয়েকজন আইনজীবী এ বিষয়ে হাইকোর্টে রীট দায়েরের চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী বলেন, ট্যাক্সের নমুনা দেখে বুঝতে পেরেছি, মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ভবিষ্যতে আর নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। আর এই ফাঁকে যা পারছেন বাসিন্দাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনে মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলাম। তিনি তখন তার ইশতেহারে বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে নাগরিকদের উপর এক পয়সাও ট্যাক্স বাড়াবেন না। কিন্তু এখন একলাফে যে  ট্যাক্স বাড়িয়েছেন, তা সারা জীবনের জন্য বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। এই কর্মকান্ডে নগরবাসী মেয়রকে মন থেকে সরিয়ে নেবেন।’

 

সাবেক এই অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের চাপিয়ে দেওয়া ট্যাক্সের ভুক্তভোগী আমিও। গেল বছর আমার ট্যাক্স এসেছিল ৫০০ টাকা। কিন্তু এবার বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার টাকা। পরে এটি সংশোধিত করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এমন মনগড়া বিলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এটা সিটি কর্পোরেশনের ঠিক হয়নি। সহানুভূতিশীল না হলে বাড়িওয়ালাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া ট্যাক্সের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন ভাড়াটিয়ারাও।

 

বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও লেখক অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের খামখেয়ালি হোল্ডিং টাক্সে বাড়িওয়ালাদের প্রতি জুলুম হচ্ছে। এই ট্যাক্স থেকে পার পাবে না ভাড়াটিয়ারাও। আমিও একজন বাড়িওয়ালা হিসেবে আগের বছরগুলোতে বার্ষিক ট্যাক্স দিয়েছি ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু এই বছর সেটা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭৪০ টাকা। শুধু আমি নই, খোঁজ নিয়ে দেখেছি এমন ভোগান্তির শিকার আমার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বাড়ির মালিকরাও।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন ‘হঠাৎ করে এবার এতো ট্যাক্স বাড়ানোর কারণ কী? আমরা নাগরিকরা সিটি কর্পোরেশন থেকে কী সেবা পাই? কর অফিস থেকে ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ দিয়ে আমরা যাতায়াত করি। গর্ত আর খানাখন্দে ভরা সড়কটির জন্য সিটি কর্পোরেশন কত টাকা খরচ করেছে গত ৩-৪ বছরে? হালকা বৃষ্টিতেই সড়কটি ডুবে যায়। অকার্যকর ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ সবাই। রাতে সড়কবাতি জ্বলে না। এইটুকু সেবা না দিতে পারলেও কুসিক মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো ট্যাক্স ধরিয়ে দিচ্ছে বাসিন্দাদের।’


তিনি আরও জানান, সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে বাসিন্দাদের উপর এক পয়সাও কর/ট্যাক্স বাড়াবেন না। ‘কিন্তু এখন দেখছি, তার নির্বাচনী ইশতেহারের সাথে বর্তমান কাজের কোনো মিল নেই’, ক্ষোভের সঙ্গে বলেন এই লেখক-গবেষক।
 

গতকালও দেখা গেছে, হোল্ডিং ট্যাক্সের অস্বাভাবিক বিল হাতে নিয়ে  বাড়িওয়ালারা হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন সিটি কর্পোরেশনে। ট্যাক্স ও কর পরিশোধ শাখায় গিয়ে তাদেও কিনতে হচ্ছে  ২০ টাকা মূল্যের একটি আবেদন ফরম, যার মাধ্যমে তিনি তার অভিযোগ তুলে ধরতে পারবেন। সেই জন্য গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির কর্মকর্তারা নির্ধারিত ট্যাক্সে কোনো পরিবর্তন আনতে পারছেন না। পাঠিয়ে দিচ্ছেন মেয়েরের কাছে। আবার অনেকে গিয়ে পাচ্ছেন না মেয়রের দেখা। ঘন্টার পর ঘন্টা অতিক্রম করে ফিরে আসছেন বাসায়। এভাবে প্রতিদিন শত শত বাড়িওয়ালা হোল্ডিং ট্যাক্সের অভিযোগ নিয়ে দৌড়াচ্ছেন কর্পোরেশন আর বাড়ি। মিলছে না কাঙ্খিত কোনো সমাধান। অনেকে আবার ঘুষের বিনিময়ে ট্যাক্স কমাতে পারছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।


নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের কাশারীপট্টি এলাকার রতন চন্দ্র পাল বলেন, ‘১৮৭ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স এসেছে গত ২০১৮-১৯ সালে। কিন্তু এবার দুই হাজার ৭৫৫ টাকার বিল পেয়ে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। করোনা মহামারির কারণে আমার আয় নেই বললেই চলে। অল্পস্বল্প কিছু আয় দিয়ে সংসার চলছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের এই ট্যাক্স পরিশোধে আমি অক্ষম।’

নগরীর থীরাপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা আফসার বেগম বলেন, ‘আমার ১০০ টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স এবার ১৫৩০ টাকা এসেছে। ২০ টাকা দিয়ে অভিযোগ ফরম কিনে মেয়রের রুমে একাধিকবার গিয়েও দেখা করতে বা কথা বলতে পারিনি। সর্বশেষ গতকাল গিয়ে মেয়রকে রুমে পাইনি। কয়েক ঘন্টা বসে থেকে ফিরে এসেছি।’

আলহাজ্ব শাহ মো. আলমগীর খান জানান, সিটি কর্পোরেশন যে হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে, তা যুক্তিসঙ্গত হয়নি। স্থানীয় সরকারের একটি আইনের দোহাই দিয়ে ৩-৫ বছর পর পর হঠাৎ করে বিশাল আকারের একটি বিল ধরিয়ে দিচ্ছে, সেটা বাড়িওয়ালারা নিতে পারবে কি, চিন্তা করছে না। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনকে ঢাকার সাথে তুলনা করলে হবে না। কারণ কুমিল্লার বাসাভাড়ার সাথে এই ধরনের ট্যাক্স যায় না। আমি মনে করবো, মেয়র মহোদয় হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে আরেকটু সহনশীল হলে বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।’

কুমিল্লার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের এই হোল্ডিং ট্যাক্সে কুমিল্লার বাসিন্দারা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ট্যাক্স বাড়ানোর জন্য শৃঙ্খলা মোতাবেক নিয়মিত একটি কমিটি ছাড়া হঠাৎ করে গলাকাটা একটি ট্যাক্স বিল বাড়িওয়ালাদের ধরিয়ে দিলে তারা তো প্রতিবাদ করবেই।
 
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্ধারিত আইন মেনে কোন কোন বাড়িতে ট্যাক্স বাড়ানো যায়, তাদের আয় কেমন; সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি না করে গড়ে সবার মাথায় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন শুনছি, অভিযোগ নিয়ে গেলে বিশেষ বিবেচনার মাধ্যমে কিছু ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু এতেও বাড়িওয়ালারা ভোগান্তিতে পড়ছেন।’

 জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি হচ্ছেন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। আমাকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি। তবে বিষয়টি হচ্ছে, স্থানীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স নিচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন চাইলে নগরবাসীর ওপর একবারে অনেক ট্যাক্স চাপিয়ে দিতে পারে না। স্থানীয় সরকারের নিয়ম মেনেই ট্যাক্সের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। তবে ভুলবশত কোনো ট্যাক্স অতিরিক্ত হয়ে থাকলে সেটির অভিযোগ বিবেচনা করে কমিয়ে আনতে পারবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।’