ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন আট নারী করোনাযোদ্ধা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২০  

করোনাভাইরাস সংক্রমণ কঠিন দুর্যোগের সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৮ নারী করোনাযোদ্ধা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। 

তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ করে পরিবার ও শিশু সন্তানদের মায়া ত্যাগ করে দিন রাত নিরলসভাবে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭ উপজেলার তিনজন ইউএনও ও পাঁচজন এসিল্যান্ড। 

তারা হলেন, নাসিরনগরের ইউএনও নাজমা আশরাফী, বিজয়নগরের ইউএনও মেহের নিগার, আখাউড়ার ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা, কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবা খানম, আশুগঞ্জের ফিরোজা পারভীন, সরাইলের ফারজানা প্রিয়াঙ্কা, বাঞ্ছারামপুরের নাফিসা নাজ, ও নাসিরনগরের তাহমিনা আক্তার। 

 

 

তাদের মধ্যে কেউ সন্তান সম্ভবা, আবার কারো রয়েছে শিশু সন্তানও। সমাজ দেশ ও রাষ্ট্রের কথা ভেবে করোনার এই সময়ে জনগণকে সার্বিকভাবে সেবা দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই তারা দিন রাত কাজ করে চলছেন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, বাজার মনিটরিংসহ সব কাজই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিশ্রমের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। 

দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রত্যেকেই দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

তারা জানান, দায়িত্ববোধ থেকেই নির্ধারিত কাজের বাইরেও অনেক কিছু করে যাচ্ছেন জাতির এই ক্লান্তিলঘ্নে। অবশ্য ভালো একটা দিনের প্রত্যাশা তারা সবাই করছেন। 

 

 

আখাউড়ার ইউএনও তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন করোনা সংক্রান্ত কাজেই প্রতিদিন সাত সকালে বাসা থেকে বের হতে হয়। প্রায় সময় ফিরতে রাত হয়ে যায়। কাজের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর সময় মেনটেইন করে কিছু করা যায় না। কোয়ারেন্টাই মেনে আইনজীবী স্বামী আখাউড়ার বাসভবনে থাকায় ছোট ছেলে তাহমিনুল ইসলামকে সামলাতে খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না। 

নাসিরনগরের ইউএনও নাজমা আশরাফী বলেন, বাসায় তার দুবছর বয়সি ছেলে রয়েছে। তাকে বাসায় রেখে যাওয়া খুবই কঠিন। কারণ বের হতে দেখলেই সে পেছন নেয়। রাতে এসেও কোলে নিতে পারি না। ফেরার পর একটু ভালোভাবে ফ্রেশ হতে হতে হয়তো ছেলেটা ঘুমিয়ে যায়। পর দিন ঘুম থেকে উঠে সকাল সকাল আবার আমাকে বের হতে হয়। 

বিজয়নগরের ইউএনও নিগার বলেন, তার ছয় বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি এখন সন্তান সম্ভবা। কিন্তু এই দুযোর্গে তার যেন থেমে থাকার কোন সুযোগ নেই। করোনা পরিস্থিতিতে ছুটে চলতে হচ্ছে দিনরাত। 

পরিস্থিতি কিভাবে সামলান জানতে চাইলে বলেন, প্রশিক্ষণের জন্য আমাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করে দেয়া হয়। এই মুহূর্তে চাইলে ছুটি নিতে পারতাম। তাহলে বিবেকের কাছে হেরে যেতাম। বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছ থেকেই কাজের স্পৃহা পেয়েছি। 

কসবা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হাসিবা খানম বলেন, তার আনাবিয়া-নুর নামে সাড়ে সাত মাস বয়সী এক মেয়ে

 

রয়েছে। কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিক মতো বাসায় আসতে পারা যায় না। যখনই বাসায় আসি তখন ছুটে এসে কোলে উঠতে চায় মেয়েটি। কিন্তু নিজেকে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত না করে কোলে না নিতে পারার যন্ত্রণা হয়তো তাড়া করে বেড়ায় দুজনকেই। 

তিনি বলেন, এখন ব্যাক্তিগত সমস্যার চেয়ে জনস্বার্থ সব চাইতে বড় বেশি। এই ছোট মেয়েকে সামলাতে আমার এক বোনকে বাসায় আনা হয়েছে। মাঝে মধ্যে খবর আসে মেয়েটা কাঁদছে তখন সময় করে ছুটে আসতে হয়। কখনও আবার আসা যায় না বলে জানায়। দেশের এই ক্লান্তি লগ্নের কথা মাথায় রেখে এভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে বলে জানান। 

আশুগঞ্জের এসিল্যান্ড ফিরোজা পারভীন জানান, তার স্বামীও একজন করোনাযোদ্ধা। লন্ডনে তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ও ১৪ মাসের এক ছেলে রয়েছে। এখন তো পরিবারের চিন্তা করলে হবে না। মহামারীর এই সময়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন সব কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। 

সরাইলের এসিল্যান্ড ফারজানা প্রিয়াঙ্কা বলেন, দায়িত্ব পালনে নারী পুরুষ বলতে কোনো কথা নেই। ডিসি যেভাবে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। যতটুকু সতর্ক থেকে কাজ করা যায় সেটা মেনটেইন করছি। 

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এসিল্যান্ড নাফিসা নাজ বলেন, তার এক বছর বয়সী নাবিহা নাওয়ার নামে এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। ছোট্ট এই শিশুটিকে ঘরে রেখেই প্রতিদিন তাকে ছুটতে হয়। 

তিনি বলেন, দায়িত্ব ভেবেই ঝুঁকি নিয়ে এ পরিস্থিতিতে কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া স্বামী সঙ্গে আছেন বলে সংসারের দিক থেকে বেশ সাপোর্ট পাচ্ছি। 

নাসিরনগরের এসিল্যান্ড তাহমিনা আক্তার বলেন, তার পাঁচ বছরের একটি ছেলে ও দেড় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ‘করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে ভয় আছে। কিন্তু দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। এখন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ঘরে এলে ছেলে-মেয়েরাই বলে যেন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি ঠিক রাখি। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন সার্বিক পরিস্থিতিতে নারী কর্মকর্তাদের কাজের প্রশংসা করেছেন। 

তিনি বলেন, এটা আমার জন্য গর্বের যে তারা যোগ্যতার পরিচয় রেখে দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ যাচ্ছেন। ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, বাজার মনিটরিংসহ সব কাজই সর্বোচ্চ পরিশ্রমের সঙ্গে করে যাচ্ছেন।