ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

তিন মাসে করোনা সন্দেহে ভর্তি হয়েছে ১৮৪ জন মারা গেছে ২৫ জন

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০  

আড়াই শ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ক’দিন মৃত্যুর হিড়িকে এই জেলার মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। জেলার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে মানুষ শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল। মানুষ বলতে লাগলো এখানে করোনা রোগীদের কোনো চিকিৎসা হয় না, একের পর এক শুধু রোগী মারা যাচ্ছে। দেখা গেছে যে, কয়েকদিন লাগাতার ৩/৪ জন করে মানুষ মারা যেতো। হাসপাতালে এমন মৃত্যুর খবরে সত্যিই মানুষ খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো এবং এখানকার চিকিৎসা সেবা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে শুরু করলো। এমতাবস্থায় মৃত্যুর কারণ এবং প্রকৃত ঘটনা কী তা অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কর্মীরা নেমে পড়েন। অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে সঠিক তথ্য এবং মৃত্যুর কারণ। জানা গেলো কীসের জন্যে, কীসের অভাবে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা মানুষগুলো মারা গেলো।

করোনার প্রথমদিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডটি ছিলো হাসপাতালের মূল ভবনের উত্তর পাশ লাগোয়া ছোট্ট তিন তলার একটি ভবনে। যেটি আগে সংক্রামক ব্যাধি ওয়ার্ড নামে ছিলো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই এই ওয়ার্ডটি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্যে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। ২৭ মার্চ প্রথম এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়। চাঁদপুর লঞ্চঘাট টার্মিনালে এক যুবককে কয়েকদিন প্রচ- জ্বর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিউআরসিকে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পাওয়ার সাথে সাথে কিউআরসির সদস্যরা সেখানে গিয়ে ওই যুবককে সেখান থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন কর্মরত চিকিৎসক তাকে দেখে করোনার লক্ষণ মনে হলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। পরে অবশ্য তার নমুনা টেস্টে নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ সে করোনা রোগী নয়। তারপরও তাকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর সে সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

এদিকে সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে চাঁদপুরেও যখন করোনায় আক্রান্তের রোগী বাড়তে শুরু করলো, তখন দেখা গেলো যে এখানে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। কারণ, পূর্বের আইসোলেশন ওয়ার্ডে সিট ক্যাপাসিটি ছিলো মাত্র সবমিলিয়ে ২৫টা। এই ২৫টার মধ্যেই রোগীদের পাশাপাশি সেখানে যেসব ডাক্তার ও নার্স ডিউটি করতেন,  তাদেরও ডিউটির ফাঁকে এবং কয়েক ঘণ্টার বিরতির সময় এর মধ্যেই বিশ্রাম নিতে হতো। তাই রোগী বাড়তে থাকায় (কোভিড-নন কোভিড) ওয়ার্ডে আর জায়গা হচ্ছিল না। ডাক্তার এবং নার্সদেরও পর্যায়ক্রমে ডিউটি করতে সমস্যা হচ্ছিল। এতে বাধ্য হয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডটি সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ড পুরাটি নেয়া হয়। আর এই ওয়ার্ডে রোগী এবং ডাক্তার ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের আসা-যাওয়ার জন্যে রোটারী ভবন বরাবর পৃথক গেট খোলা হয়। এখানে অবশ্য আগে থেকেই গেট এবং সিঁড়ি ছিলো। কিন্তু এই পথ শুরু থেকেই বন্ধ ছিলো। প্রধান গেট এবং সেখানকার সিঁড়িই ব্যবহার করা হতো দোতলাসহ অন্যান্য তলায় উঠার জন্যে। আইসোলেশন ওয়ার্ড দোতলায় নিয়ে আসার সময় থেকেই এটিতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্যে সম্পূর্ণ পৃথক পথ করা হয়। একই সাথে পূর্বের সিঁড়ি পথসহ দোতলার বারান্দা পুরোপুরি ব্লক করে দেয়া হয় আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে।

বর্তমান আইসোলেশন ওয়ার্ডে সিট ক্যাপাসিটি হচ্ছে ৬০টি। এখানে ৩০টি নন কোভিড এবং ৩০টি কোভিড রোগীদের জন্যে পৃথকভাবে নির্ধারণ করা হয়। চিকিৎসক এবং সেবিকাও রোস্টার করে দেয়া হয় পর্যায়ক্রমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা করোনা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এই তিন মাসে হাসপাতালে করোনার লক্ষণ নিয়ে রোগী আসে ১৮৪ জন। এরা চাঁদপুর শহর এবং সদর উপজেলা ছাড়া অন্যান্য উপজেলারও রোগী। দেখা গেছে যে, রাত ২টা ৩টার সময়ও করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগী এসেছে হাসপাতালে। আর উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী আসলেই সে রোগীকে কর্মরত চিকিৎসকরা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন তথা ভর্তি করে দেন।

তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, এই সময়কালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৮৪ জন নন কোভিড রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন। এই ২৫ জনের শতকরা ৯৫ জনই হাসপাতালে আসার আধা ঘণ্টা থেকে দেড় দুই ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন। বাকিরা সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মতো ছিলো। এর মধ্যেই তারা মারা যান। অর্থাৎ চিকিৎসকরা আর তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার সুযোগ পাননি। এদিকে যে ২৫ জন মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্যে ঢাকা পাঠানো হয়। পরবর্তীতে যে রিপোর্ট এসেছে সে রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ২৫ জনের মধ্যে ৯ জনের করোনা পজিটিভ। আর বাদবাকি ১৬ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ। অর্থাৎ ১৬ জন করোনা রোগী ছিলেন না। রিপোর্টের এই হিসেবেই বলে দেয় করোনার উপসর্গ নিয়ে আসলেই করোনা রোগী নন এবং চিকিৎসকদের অবহেলায়ও তারা মারা যাননি। আর শ^াসকষ্ট হার্ট অ্যাটাকেরও একটি প্রধানতম লক্ষণ বলে চিকিৎসকরা জানান। সে সময় রোগী প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পেলে তাকে টিকানো যায় না বলেও চিকিৎসকরা মন্তব্য করেন।

হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, ওই ৯৫ ভাগ রোগীকেই খুব খারাপ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল হাসপাতালে। আর খারাপ অবস্থাটা ছিলো এমন যে, রোগী শ^াস-প্রশ^াস নিতে পারছিলো না। এমন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে বিদ্যমান সিলিন্ডার অক্সিজেনের মাধ্যমে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে জন্যে ওইসব রোগী আসার অল্প সময়ের মধ্যেই মারা গেছেন। অর্থাৎ রোগীকে বাড়িতে রেখে শেষ করে দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে ডাঃ রুবেল আশার খবর জানিয়ে বলেন, আমাদের হাসপাতালে যে অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যেতো, আল্লাহর রহমতে জুলাই থেকে আর সেটি হবে না। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এই সমস্যা সমাধানে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন। তিনি তাঁর মরহুম পিতা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট সংযোজন করে দেবেন। এর দ্বারা এখন কমপক্ষে ত্রিশ জন করোনা রোগী যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হবে তাদেরকে অক্সিজেন সাপোর্ট পুরোপুরি দেয়া যাবে। তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বদান্যতায় আমরা জেলার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালের জন্যে অনেক বড় একটি সাপোর্ট পাচ্ছি। সে জন্যে তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।