ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নারী শাসন চলে যেসব সমাজে

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৩  

আমাদের সমাজ চলে পুরুষের কথায়। বেশিরভাগ পরিবারের ছোট সদস্যরা শৈশব থেকেই জেনে বড় হয় পিতার কথাই শেষ কথা। এই সমাজ ব্যবস্থায় মায়ের কথার গুরুত্ব অনেকাংশেই কম। আবার আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের বিয়ের পর নিজ পরিবার ছেড়ে আসতে হয় শ্বশুরবাড়ি। সেখানেই স্বামী সংসার নিয়ে বাকি জীবন পার করা লাগে। কিন্তু এমন যদি হতো বিয়ের পর বর চলে এলো মেয়ের বাড়িতে এবং মেয়ের মতামত বা ইচ্ছাই হলো সমাজের নিয়ম!

এমনটা আমাদের সমাজে কাল্পনিক বা হাস্যকর বিষয় হলেও কিছু কিছু সমাজে এইটাই বাস্তব। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরাই হয় প্রধান। এই সমাজ ব্যবস্থায় সমস্ত সম্পত্তি বংশানুক্রমিকভাবে নারীদের মধ্যেই হস্তান্তরিত হয়। মায়ের সম্পত্তির ভাগ পান মেয়েরা। এখানে ছেলে সন্তান উত্তরাধিকার নয়। এমনকি ছেলেরা বিয়ের আগে যদি উপার্জন করে সেই সম্পদেরও দাবি বিয়ের পর করতে পারে না।

পরিবার ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে এই সমাজের নারীরাই। বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন আছে। তেমনই কিছু সমাজ ব্যবস্থার কথা নিয়ে আজকের আয়োজন।

women১. আকান

এই সমাজ ব্যবস্থা মূলত মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখানে সব কিছুই নির্ধারণ হয় মাতৃতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে। সকল প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাই এই সমাজের মুখ্য ভূমিকা পালক করে। নারীরা তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারলেও অনেক পুরুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্য সহযোগী করতে পারে না। ঘানাতে এই আকান জনজাতির লোকজন সংখ্যাধিক্য নিয়ে বসবাস করে আসছে।

২. মিনানকাবাউ

ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রার এই জনগোষ্ঠীর বসবাস। সেখানে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষের জনবসতিপূর্ণ এলাকা নিয়ে এই মিনানকাবাউ সমাজ গঠিত। বলা হয়ে থাকে এটিই পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ মাতৃতান্ত্রিক সমাজের উদাহরণ। এখানে নিয়ম অনুসারে সম্পত্তি মায়ের কাছে থেকে মেয়ের কাছে যায়। তারা মনে করেন মা বা নারী হলেন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাই পরিবারের সকল সিদ্ধান্ত তাদের হাতেই থাকে।

womenতবে পুরুষরা রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক দিকে আধিপত্য বিস্তার করেন। বিবাহের সময়ও নারীরা তাদের পছন্দের পুরুষকে নির্বাচন করেন। তাদের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, প্রত্যেক পুরুষ স্বামী হিসেবে তার স্ত্রীর সাথে রাত্রিবাস করে কিন্তু সকালবেলায় প্রাতরাশের জন্য তার মায়ের বাড়িতে ফিরে যায়। এছাড়া দশ বছর বয়সের পরে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গৃহ ত‍্যাগ করে একটা নির্দিষ্ট স্থানে দলগতভাবে বসবাস করে এবং শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এই উপজাতির প্রধান একজন পুরুষ হলেও একজন নারীই এই প্রধানকে নির্বাচন করে এবং সকল ক্ষমতা নারীর কাছেই থাকে।

৩. মোসুও

এই জনগোষ্ঠীর প্রতিটি পরিবার এখানে তাদের নিজস্ব গৃহে বসবাস করে এবং প্রতিটি পরিবারের প্রধান হন একজন নারী। পরবর্তীতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে গণ্য হয় এই নারীদের সন্তান। ব্যাবসা, রাজনীতি বা পারিবারিক সিদ্ধান্ত এখানে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই নারীরা করেন। এমনকি মোসুও শিশুরা মায়ের পদবী গ্রহণ করে এবং মায়ের কাছেই বড় হয়।

womenএই নারীরা তাদের পছন্দ মতন পুরুষকে বিবাহ করে। মূলত তিব্বতের সীমানায় বসবাসকারী ইউনান এবং সিচুয়ান প্রদেশের কাছে মোসুওরাদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গঠিত। তবে চীনের সরকার সরকারিভাবে এই জাতিটিকে সংখ্যালঘু এবং নাক্সি নামে ঘোষণা করে। কিন্তু মোসুওরা সংস্কৃতি এবং ভাষাগত দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি সম্পূর্ণ একটা আলাদা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় গড়ে ওঠা জাতি।

৪. নাগোভিসি

এই জনগোষ্ঠীর নারীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন নেতৃত্ব মূলক কাজ ও উৎসবের সমস্ত কাজে জড়িত থাকে। নারীদের দিক থেকেই সম্পত্তি বা জমির মালিকানা বংশানুক্রমিক ভাবে হস্তান্তরিত হয়। এই সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে নিউ গিনির পশ্চিমে অবস্থিত দক্ষিণ বোগেনভিল নামের একটি দ্বীপে। নাগোভিসি মহিলারা গৃহের কাজ, বাগান করা বা কৃষি কাজের মতনই গুরুত্ব দেয় যৌনতাকেও। তাই এই সমাজে বিবাহ সংগঠিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়।

women৫. ব্রিব্রি

কোস্টারিকার লাইমন প্রদেশের তালামাঙ্কা ক্যান্টনে এই জনগোষ্ঠীর বসবাস। বলা হয় এটিই সবচেয়ে ক্ষুদ্র মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। মাত্র তেরো হাজার জনসংখ্যা নিয়ে এই জাতি গঠিত। অন্য সব জাতির মতনই এরাও সবাই একত্রে বসবাস করে। তবে প্রতিটি পরিবার স্বতন্ত্র। এই জনগোষ্ঠীর পরিবারের প্রধান একজন নারী বা মা। এই নারীরাই ঐতিহ্যগত এবং বংশানুক্রমিক ভাবে সম্পত্তি ও জমির মালিকানা ভোগ করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানে নারীদের প্রধান‍্য দেওয়া হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তারাই করেন।

৬. গারো

এই সম্প্রদায়ের নারীরা মায়ের থেকেই সব সম্পদ প্রাপ্ত হন। এদের সম্পত্তি বংশানুক্রমিকভাবে মায়ের থেকে মেয়েরা পেয়ে থাকেন। বিয়ের পর পুরুষ তার স্ত্রীর গৃহে বসবাস করে। রাজনীতি বা সমাজ ব্যবস্থায় গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে এখানের নারী সদস্যরা। তাদের জন্য বিয়ে করলেও সারাজীবন একসঙ্গে থাকা বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গারো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। 

khasia women

৭. খাসিয়া

বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসামে এ জনগোষ্ঠীর বসবাস। তারা কৃষি কাজের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তারাও যেহেতু মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা মেনে চলে তাই তাদের সমাজেরও সব নিয়মকানুন একজন নারীই ঠিক করে থাকে। তাদের সমাজ ব্যবস্থায় কোনো পুরুষ সম্পত্তির মালিক হয় না।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া