ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নৈরাজ্য তৈরির জন্যই ভোলায় সংঘর্ষ

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০১৯  

ভোলার বোরহানউদ্দিনে ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে সাধারণ মুসল্লিদের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণার পরও ৩০-৪০ জন ‘অজ্ঞাতপরিচয় বক্তি’ এসে হঠাৎ পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া আলেমদের পুলিশ আটক করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এর আগে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কটূক্তি দেওয়ার পর সেগুলো পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয়। এসবের মাধ্যমে সাধারণ ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসীকে ফুঁসলিয়ে দিয়ে বড় ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করতে চেয়েছিল একটি মহল। বিনা উসকানিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যা করার মতো হামলা হয়। ওই পরিস্থিতিতে পুলিশ শটগানের গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল। ঘটনা তদন্তে এবং স্থানীয়দের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সমাবেশের ডাক দেওয়া মুসল্লিসহ স্থানীয়রা বলছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যার চেষ্টা করে বেপরোয়া হামলা চালানো ব্যক্তিরা বোরহানউদ্দিন উপজেলার লোক নয় বলে তাদের ধারণা। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে গুজব ছড়িয়ে বাইরে থেকে লোকজন আনা হয়েছে। এর আগে বোরহানউদ্দিনে ইসলামী কর্মসূচি হলেও তা সব সময়ই ছিল শান্তিপূর্ণ।

গোয়েন্দা সূত্রগুলোও বলছে, স্থানীয় আলেম-উলামারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে চাইলেও একটি দল পুলিশের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চাইছে। কালের কণ্ঠ’র কাছে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের করা একটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে, যাতে দেখা গেছে—হঠাৎ একদল যুবক পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। পুলিশ কর্মকর্তারা তখন বোরহানউদ্দিনের ঈদগাহ মসজিদের দোতলায় আশ্রয় নিলে সেখানে দরজা-জানালা ভেঙে তাঁদের পেটানো হয়। পুলিশ গুলি ছোড়ার আগেই বাইরে থেকে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ওই গুলিতেই এক পুলিশ সদস্য আহত হন।

এদিকে বোরহানউদ্দিনে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আপত্তিকর পোস্টের জের ধরে নৈরাজ্য তৈরির তথ্য পেয়ে দায়িত্বশীলরা দেশের জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বলেছেন, ‘কেউ যদি সত্যিকারভাবে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে এবং নবী করিম (সা.)-এর প্রতি এতটুকু সম্মান থাকে তাহলে আরেকজনের ক্ষতি করার জন্য এ ধরনের জঘন্য কথাটা কিভাবে লেখে? এটাও আমার একটা প্রশ্ন। কাজেই আমি এ ব্যাপারে দেশবাসীকে বলব, সবাইকে ধৈর্য ধরতে। আর যারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, আমরা অন্তত তাদের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ কিংবা অন্য কারো দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না সে বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারো অবহেলা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেসবুকের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আসল পোস্টকারী কে তা বের হয়ে যাবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এ ঘটনায় সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। দোষীদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে।’
ভোলা পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কাওসার বলেন, ‘আমাদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে তা সন্দেহজনক ঘটনা। এতে বোঝা যায় এখানে পরিকল্পনা ও উসকানি ছিল। আলেমরা তো শান্তই ছিলেন।’

বোরহানউদ্দিন বাজারের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জানান, তৌহিদী জনতার ব্যানারে কর্মসূচি আহ্বান করলে দল-মত-নির্বিশেষে সবাই এতে মিলিত হয়। তবে শনিবার রাতে পুলিশ বারবার নৈরাজ্য হওয়ার আশঙ্কার কথা জানায়। তখন বাজার মসজিদের ইমামসহ অনেকে দ্বিধায় পড়ে যান। রবিবার সকালে ১৭টি মাইক বসিয়ে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি চলছিল। ওই সময় পুলিশ মুসল্লিদের বুঝিয়ে সমাবেশ বন্ধ করতে রাজি করায়। সেখানে মাইকে সমাবেশে বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর একটি মিছিল এসে মঞ্চ নাড়িয়ে হৈচৈ শুরু করে। ওই মিছিলের অগ্রভাগে থাকা ৩০-৪০ জন হঠাৎ পুলিশের ওপর হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরা দ্বিতীয় তলায় উঠলে সেখানেও হামলা হয়। ওই ঘটনা কাছে থেকে ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা হামলা করেছিল তারা এলাকার না। তাদের চিনি না। অন্য উপজেলা বা কোথাও থেকে এসেছে। তারা অ্যাডিশিনাল ডিআইজি ও এসপির ওপর এমনভাবে হামলা চালায় যেন মেরে ফেলবে। অফিসাররা দরজা বন্ধ করে থাকলে সে দরজা ভাঙে। ঠিক ওই সময়ই বাইরে থেকে গুলির শব্দ পাই। তখন আয়োজক আলেমরা এদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হামলাকারীরা থামে না। এরপর পুলিশ গুলি করে।’ ভিডিও চিত্রেও একই রকম দেখা যায়।

পরবর্তী সংঘর্ষে আহত হন বোরহানউদ্দিন কামিল মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা হাবিবুর রহমান আল-জাহেরী। তিনিও কটূক্তির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে সমাবেশে যান। তবে পুলিশের ওপর আক্রমণকারীদের থামানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে দেখা গেছে তাঁকে। আহত হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওরা কারা এমন করে পুলিশ মারতে চাইছে?’

বোরহানউদ্দিন আলিয়া মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম বলে, ‘আমাদের মাদরাসার প্রায় সকল শিক্ষার্থীই সেখানে উপস্থিত ছিল। দোয়া-মোনাজাত শেষে হুজুরের সাথে এসপি ও পুলিশ সদস্যরা মাদরাসার দোতালায় চলে যান। তখন নিচে থাকা লোকজন গুজব ওঠায় হুজুরকে আটক করেছে পুলিশ। এ গুজব শোনার পর কিছু লোক পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে এই সংঘর্ষ বাধে।’
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হামলা চালানোর সময় পুলিশের ওপর গুলিও চালানো হয়েছে। গতকাল ময়নাতদন্ত ছাড়া নিহতদের লাশ দাফন করার জন্য নিয়ে গেছে স্বজনরা। ‘সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা ছয় দফা দাবির মধ্যে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের দাবি করে। এতে গুলির উৎস বের করা কঠিন হবে।

রবিবার আয়োজিত ওই সমাবেশ হলে নাশকতা হতে পারে—প্রশাসনের এমন বার্তা গ্রামের লোকজনের কাছে গোপন রেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক জড়ো করা হয়েছিল। এতে পুলিশ বাধা না দিলেও পুলিশের ওপর হামলা চালানোর মাধ্যমে ভিন্নখাতে ঘটনা নেওয়ার আলামত মিলেছে। একদল হামলাকারী ভাওয়াল বাড়ি এলাকায় গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। রাজীব রতন দে নামের কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়। বোরহানউদ্দিন সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্যপ্রকাশ দাসকেও লাঞ্ছিত করে কিছু হামলাকারী। এতে ধর্মীয় সহিংসতা ছড়ানোর অপচেষ্টা এবং পুলিশ হত্যা করে দেশে বড় ধরনের নৈরাজ্য ছড়ানোর চেষ্টা চালানোর প্রমাণ মিলেছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তেই বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলার তথ্য মিলেছে। হামলার পুরোভাগে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় এবং দুই আইডি হ্যাককারীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এর সূত্র খোঁজা হচ্ছে।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক বলেন, বিপ্লব চন্দ্র শুভ, অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী এবং তাঁর মোবাইলে কলকারী শরীফ ও ইমনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপপ্রচার এবং হামলার পেছনে কারা আছে সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তবে প্রাথকিভাবে বিনা উসকানির হামলাটি পরিকল্পিত বলেই আলামত মিলছে।

প্রসঙ্গত, বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবক শুক্রবার রাতে বোরহানউদ্দিন থানায় গিয়ে একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাকারের কবলে পড়ার কথা জানান। শুভর মেসেঞ্জারে ‘নবীকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য’ ছড়িয়ে সেই ‘স্ক্রিনশট’ ব্যবহার করে ওই দিন থেকে বোরহানউদ্দিনে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এরপর শুভর বিচারের দাবিতে রবিবার বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে ‘মুসলিম তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। উপজেলা সদরে দুই ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়, আহত হয় ১০ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক।

সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের দিকে গুলিও ছোড়া হয়। তাতে একজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে যে চারজন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো ছিল বলে চিকিৎসকের বরাতে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।