ব্রেকিং:
৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত সিদ্দিকী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি না থাকলে সেটা কলঙ্কজনক হবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিজিবি
  • মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রথম রমজানে রাসূল (সা.) এর খুতবা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৭ মে ২০১৯  

পবিত্র রমজানের প্রথম দিন আজ। রমজানে বান্দার ইবাদত-বন্দেগি প্রার্থনা সহজেই মঞ্জুর হয় মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর দরবারে। 

সাবান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের মিম্বার থেকে রমজানের গুরুত্ব ও ফযীলতের আলোচনা আসতে থাকে। এই ধারা নতুন কিছু নয়। রাসূল (সা.) থেকে নিয়ে পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সকলেই এই কাজ করেছেন। 

আপনাদের সামনে নবী করীম (সা.) এর একটি খুতবা বা ভাষণ তুলে ধরা হচ্ছে, যা তিনি সাবান মাসের শেষ তারিখে দিয়ে ছিলেন। এখান থেকে আমরা রমজানের করণীয় ও বর্জণীয় বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবো। 

হাদীসটি হজরত সালমান ফার্সী (রা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাবান মাসের শেষ দিন নবী করীম (সা.) আমাদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের ওপর বরকতময় ও সম্মানী একটি মাস ছায়া দিচ্ছে। সেই মাসের একটি রাত হাজার মাসের অপেক্ষায় উত্তম। আল্লাহ তায়ালা ওই মাসের রোজাকে তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। ওই মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য কিছু অতিরিক্ত নফল নামাজ দিয়েছেন। যাকে তারাবির নামাজ হিসেবে আমরা জানি। এই নামাজের মাধ্যমে মূলত আমরা আল্লাহ তায়ালার সামনে দাঁড়াই। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার  সন্তুষ্টি  লাভের উদ্দেশ্যে রমজানে একটি নফল আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে অন্য সময়ের একটি ফরজ ইবাদতের বরাবর ছওয়াব দান করবেন। এই মাসে একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায়ের ছওয়াব দেয়া হয়। রমজান ধৈর্য ধারণের মাস। আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের বিনিময় হিসেবে রেখে দিয়েছেন জান্নাত। 

রমজান সমবেদনার মাস। আমরা সকলে এই মাসে একে অপরের কষ্টকে ভাগাভাগি করে নেবো। রমজান রিযিকের মাস। আল্লাহ তায়ালা রমজানে বান্দার রিযিক বৃদ্ধি করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা ওই ব্যক্তির জন্য মুক্তি ও জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাতের ওসিলা হবে। সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি রোজাদারের সমান ছওয়াব লাভ করবে। তবে এর জন্য রোজাদারের সওয়াবে কোনো ঘাটতি করা হবে না। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম থেকে কেউ কেউ আফসোস প্রকাশ করলেন যে, আমাদের তো ইফতার করানোর মতো কিছু নেই? তাহলে আমরা যারা গরিব আমরা কী এত বড় একটা নেকের কাজ থেকে বিরত থেকে যাবো? তাদের শান্তনায় রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সামান্য পরিমাণ দুধ বা পানি দিয়ে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় এই সওয়াব দিয়ে দেবেন। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পেট পুরে খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে হাশরের ময়দানে হাউজে কাওছার থেকে পানি পান করাবেন; যা পান করার পর সে কখনো পিপাসিত হবে না। পরিতৃপ্তির এই অবস্থা জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত বাকি থাকবে। এরপর রাসূল (সা.) এই মাসের দিনগুলোর ভাগ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রমজানের প্রথম দশ দিন হচ্ছে রহমতের। দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাতের। আর শেষ দশ দিন হচ্ছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির। রাসূল (সা.) আরো বলেন, রমজান মাসে যে মালিক নিজের কর্মচারীদের কাজ কমিয়ে দেবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন। (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান) 

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে রমজানের প্রথম রাতে নবী করীম (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত একটি খুতবা দেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা দিয়ে খুতবা শুরু করার পর বলেন, হে লোক সকল! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের শত্রু শয়তানকে বন্দি করেছেন এবং তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তোমাদের দোয়া কবুল করবেন। শুনে রেখো! আল্লাহ তায়ালা একেক শয়তানের পেছনে সাত জন ফেরেস্তা নিয়োগ দিয়েছেন। রমজান শেষ হওয়ার আগে ওরা ফেরেস্তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হতে পারবে না। তোমরা জেনে রেখো! রমজানের শুরু থেকে আল্লাহ তায়ালা আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেন। রমজানে দয়া কবুল হয়। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রমজানের প্রথম থেকে নবী করীম (সা.) ইবাদতের জন্য কোমরে গামছা বেঁধে নামতেন। ইতেকাফ করতেন। সারা রাত জেগে থেকে ইবাদত করতেন। কোনো একজন সাহাবীকে জিজ্ঞেস করা হলে, কোমরে গামছা বাঁধার অর্থ কী? তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংসারিক সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যেতেন। (হায়াতুস সাহাবা, খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-১৯০) 

উভয় হাদীসের বিষয়বস্তু আমাদের নিকট স্পষ্ট। তারপরও এর কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। যেন আমাদের পথ চলতে সহজ হয়।

(এক) রমজানের মাহাত্মের কারণ: 
রমজান মাস দিন হিসেবে অন্য মাসের চেয়ে কোনো দিক থেকেই ভিন্ন নয়। তারপরও রমজানের এত মর্যাদা কেন? এর সমাধান জানতে আমাদের বেশি কিছু জানার দরকার নেই। রমজানে আল্লাহ তায়ালা একটি রাত দিয়েছেন, যার নাম শবে কদর। এই রাতের কারণেই মূলত রমজান মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত রাতে ইবাদত করার দ্বারা এক হাজার মাস ইবাদতের সমান ছওয়াব পাওয়া যায়। এক হাজার মাসে আনুমানিক ত্রিশ হাজার রাত হয়। ‘এক হাজার মাস ইবাদতের সমান’ এই কথার মর্ম হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ত্রিশ হাজার রাত ইবাদত করে যা লাভ করতে পারে না, এই এক রাতেই তার চেয়ে বেশি অগ্রসর হতে পারে।

বর্তমানে আমাদের সমাজে বলতে গেলে শুধু দ্বীনের খোলসটা বাকি আছে। একদিকে মুসলমানদের ভেতর বস্তুবাদের চেতনা শেকড় গেঁথেছে অন্যদিকে দ্বীনি বিষয়গুলো হালকা হয়ে আসছে। এই যে মসজিদের ইমাম খতিবরা আমাদের সামনে কতোবারই না বলে যাচ্ছেন যে, ‘হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এক রাতের ইবাদত,। কিন্তু আমরা কী নিজেদেরকে পাল্টাচ্ছি? রসম রেওয়াজ পালন করে আমরা শবে কদর পার করে দিচ্ছি। কিন্তু মূল বিষয় ইবাদতকে গুরুত্ব দিচ্ছিনা। বর্তমানে অনেক লোক রমজানের রাতগুলো ঈদের কেনাকাটায় ব্যয় করে কিন্তু একটা বারও চিন্তা করে না। আসলে ঈদের এত মর্যাদা কিসের খাতিরে!

(দুই) রমজান ধৈর্য ধারণের মাস:
ধৈর্য বলতে দুটি বিষয়কে বুঝায়। এক জাগতিক অনিয়ম দেখে ধৈর্যের সঙ্গে তার মোকাবেলা করা। হাদীসে এসেছে, রোজাদার ব্যক্তির সঙ্গে কেউ অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করতে চাইলে সে যেন বলে দেয় আমি রোজাদার, তোমার সঙ্গে আমি কোনো তর্কে বা ঝগড়ায় লিপ্ত হবো না। একটু চিন্তা করা দরকার যে, নবী করীম (সা.) এ কথা কেন বলেননি যে, তোমরা রোজা রেখে ঝগড়া করো না। বরং তিনি বলেছেন, কেউ ঝগড়া করতে চাইলে তাকে কৌশলে তা থেকে বিরত রাখা। এর অর্থ হচ্ছে, প্রকৃত রোজাদারের কর্তব্য হচ্ছে ঝগড়া এড়িয়ে চলা। আর আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করা তো তার থেকে কখনো হতেই পারে না। কিন্তু আমরা কী তা পারি? আমাদের সমাজে এগার মাস ঝগড়া কম হলেও রমজানে তুলনামূলক বেড়ে যায়। এর অর্থ হচ্ছে, আমরা প্রকৃত রোজাদার হতে পারিনি। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, শয়তানের ধোঁকা ও নফসের প্রব নাকে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে দ্বীনের পথে অগ্রসর হওয়া। ধৈর্য বলতে মূলত এটাকেই বুঝানো হয়। তাই রমজান কামনা করে, মুমিন অন্য মাসের তুলনায় দ্বীনদারীর দিক থেকে এ মাসে অধিক অগ্রসর হবে।

(তিন) রমজান সমবেদনার মাস:
রোজা রেখে প্রতিটি মানুষের উপলব্ধি তৈরি হয় যে, ক্ষুধা কত কষ্টকর বিষয়। এই উপলব্ধি থেকে গরিব মিসকিনদের প্রতি রহমদিল হওয়াই রমজানের আসল শিক্ষা। কিন্তু মুমিনের জীবনে রমজানের রোজা কী সেই উপলব্ধি জাগ্রত করতে পারে? না, পারে না। মালদার মানুষ রমজানকে সম্পদ পুঞ্জিভূত করার মোক্ষম সুযোগ মনে করে। ব্যবসায়ী মালের দাম বৃদ্ধি করে গরিব মিসকিনের পেটে লাথি মারার জন্য রমজানকে বেঁচে নেয়। অথচ রমজান এসেছিলো গরিবকে বিনা মূল্যে দেয়ার শিক্ষা নিয়ে।

(চার) রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা মানুষের রিযিক বৃদ্ধি করে দেন:
হাদীসে এই কথা বলা হয়েছে যে, রমজানে বান্দার রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। শহর নগরের প্রতিটি মানুষই এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে যে, কোন দিক থেকে রিযিক আসছে বুঝাই যাচ্ছে না। আল্লাহ তায়ালার এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা দরকার। নিয়ামতকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো বান্দার দায়িত্ব। রমজানে যেমন প্রচুর খাবারের ব্যবস্থা হয়, তেমনি বহু খাবার আমরা নষ্টও করি। অথচ প্রতিবেশী অনেক সময় সামান্য কিছু দিয়েই কালাতিপাত করছে।

(পাঁচ) ইফতারের ব্যবস্থা করা:
রাসূল (সা.) ইফতার করানোর অনেক ফযিলত বর্ণনা করেছেন, যা মূল হাদীসে আলোচনা হয়েছে। আমরা অনেকে ইফতার পার্টি দিয়ে থাকি। সেখানে ওই সকল লোকদের দাওয়াত থাকে যাদের ঘরের খাবার খাওয়ার লোক নেই। আর যারা বিরত তারা বিরতই থেকে যায়। অথচ আমার ওপর হক তাদেরই। ধনীর হক সে রকম নয়। 

(ছয়) রমজান আসার আগেই সাংসারিক কাজ গুছিয়ে আনা:
হাদীসের আলোচনায় এসেছে, রমজান আসার আগেই নবী করীম (সা.) সাংসারিক সকল ঝামেলা গুছিয়ে নিয়ে আসতেন। রমজানকে তিনি ইবাদতের জন্য খালি রাখতেন। এখান থেকেও আমাদের শেখা দরকার যে, রমজানের জন্য কাজকে গুছিয়ে আনা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

(সাত) রমজানকে তিন ভাগ করার কারণ:
রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজানের প্রথম দশক হচ্ছে রহমতের। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমার। তৃতীয় দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য। এর ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন, রহমতের দশক হচ্ছে, নেক বান্দাদের জন্য যারা সবসময় গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন করে। তাদের ওপর রমজানের শুরু থেকে রহমত বর্ষণ শুরু হয়। দ্বিতীয় দশক হচ্ছে, যারা প্রথম স্তরের চেয়ে দুর্বল তাদের জন্য। তারাও যখন রমজানের শুরু থেকে ইবাদত  ও আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য মাফ চাওয়া শুরু করে দ্বিতীয় দশকে এসে তারা ক্ষমা লাভের যোগ্য হয়ে যায়। আর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তৃতীয় দশক হচ্ছে যারা একেবারে গুনাহগার তাদের মুক্তির সময়। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় দশক যখন সাধারণ মুসলমানের সঙ্গে মিলিমিশে ইবাদত করে এবং ক্ষমা চায় তখন আল্লাহর রহমতের দরিয়ায় ঢেউ ওঠে যায়। আর তখন আল্লাহ তায়ালা গুনাহগার বান্দাদেরকেও মুক্তি দিয়ে দেন।