ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বাংলাদেশে নিরাপদ মাতৃত্বে ‘বড় বাধা’ সিজারিয়ান পদ্ধতি

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২২  

বাংলাদেশের হাসপাতালে এখন শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি শিশু অস্ত্রোপচার অর্থাৎ সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে যা বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসার হাতিয়ারে পরণত হয়েছে৷

অনেক নারীর জন্য এমন পদ্ধতি ফ্যাশনেও পরিণত হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা৷ 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান পদ্ধতি নিরাপদ মাতৃত্বের পথে প্রধান বাধা৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসেবে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে শতকরা ৫১ ভাগ শিশু সিজারের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে৷ এরমধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজারের হার ৮৩ শতাংশ, সরকারি হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ আর এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে এ সংখ্যা ৩৯ শতাংশ৷

স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাতৃত্বকালীন নানা জটিলতার কারণে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুর জন্ম সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হতে পারে৷ এই সংখ্যা এর বেশি হওয়া উচিত নয়৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আছমা খাতুন অরোরা বলেন, ‘‘বাস্তবে ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি সিজারিয়ান পদ্ধতির দরকার নেই৷ কিন্তু এখন ঢাকার বাইরেও সিজারের প্রবণতা বাড়ছে৷''

এর কারণ হিসেবে তিনি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিকে দায়ী করেন৷ ‘‘এটা করলে হাসপাতালগুলোর আয় বেশি হয়৷ এটাই আয়ের প্রধান খাতে পরিণত হচ্ছে৷’’

সেই সাথে অনেক পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি উল্লেখ করেন এই চিকিৎসক৷ তিনি বলেন, ‘‘গর্ভবতী মা ও পরিবারের মধ্যে এক ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে যে সিজারিয়ান পদ্ধতি নিরাপদ৷ কিন্তু অপ্রয়োজনে সিজার মায়ের মৃত্যুঝুঁকি এবং নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার আশঙ্কা অনেক বাড়িয়ে দেয়৷’’

কীভাবে সিজারিয়ান পদ্ধতি শারীরিক জটিলতার আশঙ্কা বাড়ায় সে বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এটি শুধু একটি অপারেশন নয়৷ রোগীকে অজ্ঞান করতে হয়৷ ফলে তার ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ একবার সিজার করলে পরবর্তীতেও সিজার করতে হয়৷ অনেক সময় জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হয়৷ প্রস্রাবের থলিও ফেটে যায়৷ অনেক সময় এত রক্তপাত হয় যে মাকে আর রক্ষা করা যায় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সিজার কমাতে  হলে সবাইকে সচেতন করতে হবে৷ আর এই সচেতনতা রোগী ও চিকৎসক সবার মাঝেই তৈরি হতে হবে৷

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে ৯০ শতাংশ শিশুরই জন্ম হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে৷ কিছু কিছু ক্লিনিকের মূল ব্যবসাই এটি৷ তাদের আয়ের ৯৫ শতাংশই আসে সন্তান জন্মদনের জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে৷ 

এদিকে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধ করতে একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ কিন্তু বাস্তবে তার কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিজার বাড়ার পিছনে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ছাড়াও এটা এখন অনেকের কাছে একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে৷ তারা মনে করছে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজার মায়ের শরীর এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য ভালো৷ এই ভুল ধারণা দূর করতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘নিরাপদ মাতৃত্ব শুধু সন্তান প্রসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ মায়ের গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা- এই সবকিছুই এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত৷ মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিতের ওপরই নির্ভর করে নবজাতকের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি৷’’

বাংলাদেশে এখনো শতকরা ৪৬.৪ শতাংশ প্রসব হয় বাড়িতে৷ এদের বড় একটি অংশ চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না৷ এই প্রবণতা গ্রামে বেশি৷ আর এখনো শতকরা ২০ শতাংশ প্রসব হয় অদক্ষদের হাতে৷ এটা নিরাপদ মাতৃত্বকে বাধাগ্রস্ত করে৷

ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিশেষ করে গ্রামে আর্থিক সংকট এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পর্যাপ্ত না থাকায় এটা হচ্ছে৷ ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও অনেকে অসচেতনতার অভাবে এটাকে গুরুত্ব দেন না৷ আর প্রশিক্ষিত ধাত্রীরও সংকট আছে বাংলাদেশে৷’’

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবকে সবচেয়ে নিরাপদ বিবেচনা করা হয়৷ তাই এবারের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হবে যেতে’৷

ডা. কামরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে৷ আর সেবাকেন্দ্রে মায়েরা যাতে যান তার জন্য ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে৷’’

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার এখন শতকরা ১.৬৩ ভাগ৷  গ্রামে এই হার বেশি, শতকরা ১.৭৮ ভাগ৷ আর শিশুমৃত্যু প্রতি হাজারে ১৫টি৷

ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আরো উন্নতি করতে হলে মানসিকতা ও স্বাস্থ্যসুবিধা আরো সহজলভ্য করতে হবে৷ কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করতে হবে৷ আর মায়ের খাদ্য, পুষ্টি, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এগুলোর ওপর জোর দিতে হবে৷’’

আর ডা. আছমা খাতুন আরো বলেন, ‘‘অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি৷ সচেতনতাও কিছুটা বাড়ছে৷ কিন্তু এরপরও রোগী ও তার পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের যাওয়ার তো সুযোগ নেই৷ আমরা বুঝাতে পারি কিন্তু বাধ্য করতে পারি না৷’’