ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাজেট বাস্তবায়নে কখনই ব্যর্থ হইনি, ভবিষ্যতেও হব না

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সকল বাধা মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনই ব্যর্থ হইনি, ভবিষ্যতেও হব না। আমরা কখনও হতাশায় ভুগিনি। আমরা সব সময় লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মপরিকল্পনা পুনর্নির্ধারণ করতে হয়। তাই এ বাজেট বাস্তবায়ন করতেও আমরা সক্ষম হব। আর সামনে যে সঙ্কটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে, দেশের কোন মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না। যতই বাধা আসুক তা মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে, এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং আমাদের অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখবে।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং সেই সঙ্গে অপরকে সুরক্ষা দেয়া, এটা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আশা করি, সবাই এটা পালন করবেন। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, আমরা সফলভাবে এ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হব। কারণ বিশ্ব মানদ-ে আমাদের রয়েছে শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক অবস্থান। তাই করোনাভাইরাসকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে এবং আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম এই বাজেটের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাব, ইনশা আল্লাহ!

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এই কঠোর অবস্থানের কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় কার্যকর পরিকল্পনা সংসদে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির মহামন্দা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত ॥ বৈশ্বিক অর্থনীতির মহামন্দা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে। জাতি একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা। তবে দেশের সব ধরনের মানুষ যাতে উপকৃত হয় এজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১৯টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সবার আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে বলেন, এই প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারীর হাত থেকে দেশবাসী ও বিশ্ববাসী যেন মুক্তি পান; চিকিৎসাধীনরা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সঙ্কুুচিত হবে বলে প্রাক্কলন দিয়েছে। করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লাখ কর্মীর চাকরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫ থেকে ১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিটেন্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশে একটি বাজেট প্রণয়ন করেছি। এই বাজেট প্রণয়ন অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ কাজ ছিল। এই বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানাই।

১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হবে ১৩ কোটি মানুষ ॥ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও জীবন-জীবিকা রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলছেন, বাজেট একটু বেশি আশাবাদী দেখানো হয়েছে। আমরা অবশ্যই আশাবাদী। সব সময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর জন্য সবকিছু স্থবির। সব সময় আমরা আশাবাদীÑ এই অবস্থা থাকবে না, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে। উত্তরণের পর আগামীতে আমরা কি করব সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এই ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত যখন হবে তখন ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়া প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ কর্মসুরক্ষা ও নতুন কর্মসৃজন হবে।

বাজেট প্রস্তাবনায় যে সকল বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ অর্জন করব বলে নির্ধারণ করেছিলাম। প্রথম ৮ মাসে আমরা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জনও করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সেটা কমে যায় এবং সংশোধন করতে বাধ্য হই। যেটা এখন ৫ দশমিক ২ শতাংশ ধার্য করেছি।

আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯’র প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়েই আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময় নি¤œ মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সেজন্য আমরা উচ্চাভিলাষী বাজেটই দিয়েছি। দিয়েছি এই জন্য যে, আমাদের তো একটা আকাক্সক্ষা আছে বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে। তাদের জীবনমান উন্নত করব।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন পূরণে চার দফা টার্গেট পূরণে গৃহীত কর্মসূচীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন (ক) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আমাদের অর্থনীতির উৎপাদন ব্যাহত হলেও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কোন ক্ষতি হয়নি, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের সময় সাধারণত হয়ে থাকে। (খ) সরকারী ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কর্মসৃজন ও ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে এবং প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারীর পূর্বাবস্থায় চলে আসবে। (গ) অক্টোবর বা নবেম্বর মাসের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকা বাজারে চলে এলে ইউরোপ-আমেরিকায় জীবনযাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আমাদের রফতানি আয় কোভিড-১৯ পূর্ববর্র্তী অবস্থায় আবার ফিরে যাবে এবং সবশেষ (ঘ) বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য খুব কমে গিয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশাবাদী, এর ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রবাস আয়ের বর্তমান সঙ্কটও কেটে যাবে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের চার দফা কর্মপন্থার বিষয়গুলো তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেনÑ আমরা চারটি কৌশলগত কর্মপন্থা ঠিক করেছি। তা হচ্ছে (ক) সরকারী ব্যয় বৃদ্ধিকরণ, কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় পিছিয়ে দেয়া, (খ) আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন এবং (গ) সামাজিক সুরক্ষার আওতা বৃদ্ধিকরণ, (ঘ) বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা।

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষায় এ পর্যন্ত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনীতির প্রভাব কার্যকরীভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে। ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত যখন হবে তখন ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই অর্থমন্ত্রী ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এটি ১৭তম বাজেট, বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনটি বাজেট দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কাজেই সব মিলিয়ে ২০টি বাজেট আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশকে উপহার দিয়েছে। এই বাজেটে অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছি। তাছাড়া বর্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন এবং সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। অতীতের মতো এই বাজেটও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ ॥ করোনা মোকাবিলায় আরও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও দুই হাজার চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আরও চার হাজার নার্স নিয়োগ দেব। সেই নির্দেশ আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে দিয়েছি। শীঘ্রই এই নিয়োগ দেয়া হবে। সে সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে তিন হাজার টেকনিশিয়ানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পূর্ণ সরকারী খরচে হোটেলে থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, থাকা-খাওয়ায় একমাত্র মেডিক্যাল কলেজের হিসাব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে বলে বিরোধীদলীয় উপনেতা যেটা বলেছেন, এটাকে স্বাভাবিকভাবেই অস্বাভাবিক মনে হয়। আমরা তদন্ত করে দেখছি, এত অস্বাভাবিক কেন হলো? এখানে কোন অনিয়ম হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, টেস্ট কিট, সরঞ্জামাদি কেনাসহ চিকিৎসা সুবিধা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুততম সময় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরও একটি প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে করোনা মোকাবিলায় আমাদের সামর্থ্য আরও বাড়বে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কীভাবে মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বার বার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং সে সঙ্গে অপরকে সুরক্ষা দেয়া -এটা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আশা করি, সবাই এটা পালন করবেন।

করোনায় মৃত্যুহার নি¤œ পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি ॥ এ সময় প্রধানমন্ত্রী করোনা আক্রান্ত বিশ্ব পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন। তারমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১ হাজার ৬৯৫ জন। আর সুস্থ হয়ে ফিরেছে ৫৪ হাজার ৩১৮ জন। আমাদের কাছে কোন মৃত্যুই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষকে কীভাবে সুরক্ষা দেয়া যায়।

এ সময় বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, বাংলাদেশে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ভারতে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশের করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার নিম্ন পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। যদিও একটা মৃত্যুও কাম্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনুমোদন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ততদিন হয়ত আমরা বেঁচে থাকব না। কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি, কর্মপন্থা দিয়ে যাচ্ছি; যাতে ভবিষতে যারা আসবে তারা যেন একটা গরিব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া আগামী অর্থবছর হতে ৫ বছর মেয়াদী অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সেটা এই জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য থাকবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে গড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন করছিলাম। যার ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র্য ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নেমে এসেছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ প্রভাবে কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে। আমরা আশা করি, আগামী অর্থবছরের স্বাভাবিক কর্মকা- শুরু হবে, তখন দারিদ্র্য বিমোচন পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারব। বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব।

এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে রাখবেন না ॥ দেশে কোন খাদ্য সঙ্কট নেই উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, দেশের মানুষকে আমরা অভুক্ত থাকতে দেব না। আমাদের খাদ্য চাহিদা ৩ কোটি ৭৫ লাখ, উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ। এ বছর আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। এই উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেজন্য তিনি দেশবাসীর কাছে আবারও আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, করোনাউত্তর কৃষি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উৎপাদন, বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে খাদ্য সঙ্কট যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেয়াই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। খাদ্য সঙ্কট যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে না রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে কৃষি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করেছি। কারণ বিশ্বজুড়ে মহাদুর্ভিক্ষ হতে পার। দেশবাসীকেও আহ্বান জানাব, যার যেখানে যেটুকু জমি আছে সেখানে যে যা পারেন তাই উৎপাদন করেন, উৎপাদন বাড়ান, নিজের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত করেন। সরকার যা যা করার তা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং আমাদের অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখবে। অর্থনৈতিক উন্নতি বেগবান করার লক্ষ্যে দেশীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাই বাজেট বাস্তবায়নে অতীতে কখনও ব্যর্থ হইনি, ভবিষতেও ব্যর্থ হব না। এই বাজেটও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন ঝড়-ঝঞ্ঝা আসুক না কেন, মনে সাহস রেখে, সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা অর্জন করতে পারা যায়। আমরা অর্থনীতির প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হব। করোনাভাইরাস কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী এই বাজেট সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাব। যত বাধা আসুক তা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বাজেট বাস্তবায়ন বিরাট চ্যালেঞ্জ- বিরোধী দলের উপনেতা ॥ বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলেন, করোনার কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত, কর্মহীন হচ্ছে মানুষ, দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সমালোচকরা বলছেন, এই বাজেট গতানুগতিক, অনুমানভিত্তিক। থোক বরাদ্দের ক্ষেত্রে যথাযথ মনিটরিং না করলে অপচয়-দুর্নীতির সম্ভাবনা থাকে। আয়ের স্বল্পতা, অন্যদিকে ব্যয়ের বিশালতা সামনে। সর্বত্র কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে। কারণ রাজস্ব আদায় হবে না। প্রবাসীরা কর্ম হারাচ্ছে, রেমিটেন্স ২০ থেকে ২৫ ভাগ কমে যাবে, এতে রিজার্ভে টান পড়বে। তিনি বলেন, বাজেটেরও বেশি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে, এই পাচার থামছে না। কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এই খাত থেকে বেশি টাকা আসবে না। করোনা কতদিনে শেষ হবে কেউ জানে না। তাই করোনার সঙ্গে বসবাস করেই অর্থনীতিকে সচল করতে হবে। কৃষি খাত সচল থাকলে পৃথিবীর কারো কোন সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, তাই কৃষি খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। তিনি বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় দলমত নির্বিশেষ সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সারাবিশ্বে চরম এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় চরম ক্রান্তিলগ্নে জীবন ও জীবিকা রক্ষার বাজেট উত্থাপিত হয়েছে। পুরো বিশ্বেই যেন অঘোষিত জরুরী অবস্থা চলছে। প্রকৃতিসৃষ্ট অজানা শত্রুর আঘাতে আমরা বিপর্যস্ত, অদৃশ্য এই শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। জীবন বাঁচানোর জন্য অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক ধরনের সুযোগ রেখেছেন, সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি বৃদ্ধি করেছেন। প্রতিবছরই বাজেট নিয়ে সমালোচনা হয়, এবারও হচ্ছে। গত ১১ বছর শেখ হাসিনা সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, যাচ্ছেন। বাস্তবে আওয়ামী লীগের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত বিএনপি। আওয়ামী লীগ সব সময় উজানে নৌকা চালাতে অভ্যস্ত। জীবন বাঁচাতে হবে, জীবিকার সংগ্রামও চলবে। সবাই শেখ হাসিনার ওপর আস্থা-বিশ্বাস রাখুন, আমরা সঙ্কট মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবই।