ব্রেকিং:
কুমিল্লায় সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন র‍্যাব কর্মকর্তা দেশের পথে এমভি আবদুল্লাহ রাত ১১টার পর চা-পানের দোকান বন্ধের নির্দেশ রাত ৮টার পর শপিংমল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক
  • বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি কি রাজনীতির সন্ধিক্ষণে?

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২৩  

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আর ৯ মাস পর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচন সরকারি দল তো বটেই, বিরোধী দল বিএনপির জন্যও এক কঠিন পরীক্ষা। সরকারি দল তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন তেমন কঠিন হওয়ার কথা ছিল না, কারণ শেখ হাসিনা গত তিন মেয়াদে যে দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেছেন তাঁর প্রশংসা করেছে সব আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশ। বলেছে, শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হওয়ার কথা নয়। সর্বশেষ এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গ। এর আগে সিএনএন ও কাতারভিত্তিক আলজাজিরাও শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁর শাসনকালের প্রশংসা করেছে।

আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা তাঁর দলের জন্য কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন মূলত কয়েকটি কারণে। প্রথমত, দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় খন্দকার মোশতাকের নিজ নির্বাচনী এলাকায় অপকর্ম। তাঁদের বেশির ভাগই হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগ। বেশ কিছু বিদেশি সরকারও চায় না শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসুন। তারা মনে করে, এ দেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের অনেক স্বার্থ হাসিল করতে অসুবিধা হয়।

এরপর আছে এ দেশেরই বেশ কিছু সুধীজন, দেশে আওয়ামী লীগ না থাকলে বা কোনো অসাংবিধানিক সরকার থাকলে যাঁরা বেশ উপকৃত হন। কেউ বিদেশে যান রাষ্ট্রদূত হয়ে, কেউ বা দেশে পান কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ২০০৬ সালে এক-এগারোর সরকার ক্ষমতায় এলে ঠিক তেমনটি দেখা গেছে। যাঁরা অহর্নিশ গণতন্ত্রের কথা বলতেন, তাঁরা হঠাৎ হয়ে গেলেন সেনাপ্রিয়। এসবের সঙ্গে সব সময় সক্রিয় থাকে দেশের এক ধরনের গণমাধ্যম, যারা দেশের সব রকমের সমস্যার মধ্যে সরকারের হাত দেখে।

এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের আগামী নির্বাচন নিয়ে অসাংবিধানিক আবদার। তাদের দাবি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে অসাংবিধানিক উপায়ে একটি তথাকথিত নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দ্বাদশ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। বিএনপি ও তার মিত্রদের ধারণা, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে; দুঃশাসন ও দুর্নীতি দেশটিকে গিলে ফেলেছে আর তাদের সবচেয়ে বড় দাবি দেশটিকে তাদের শাসনামলে ফিরিয়ে নিতে হলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ২০১৩ সালে বাতিলকৃত নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, আর তারাই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনই হচ্ছে সব সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি আর ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। ১৯৯৬ সালের পরও তারা নানা উপায়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছে। মাগুরা উপনির্বাচনে এমন জালিয়াতি হচ্ছিল যে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেখান থেকে অনেকটা পালিয়ে এসে ঢাকায় বলেছিলেন, এটি কোনো নির্বাচন নয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে একেবারে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে। এটি তখন পরিষ্কার হয়ে যায় যে বিএনপি কখনো রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়তে হতে পারে এটি বিশ্বাস করে না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। দেশ হয়ে ওঠে জঙ্গিবাদ আর অস্ত্র চোরাচালানের অভয়ারণ্য। প্রতিবছর দুর্নীতিতে বাংলাদেশ হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সব কিছুর মূল হোতা তারেক রহমান। দেশে তাঁর নেতৃত্বে চালু হয় একটি সমান্তরাল সরকার। ভোটার তালিকায় যোগ হয় প্রায় সোয়া কোটি ভুয়া ভোটারের নাম। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয় যেন বিএনপির বশংবদ একজন নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হতে পারেন। আবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন। তারপর এক-এগারোর সরকার। সেই সরকারও বিএনপির কাছ থেকে তালিম নিয়ে সংবিধানে দেওয়া ৯০ দিনের বদলে দীর্ঘ দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলন। সেই প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগ এযাবৎ তিন মেয়াদে সরকারে। ২০১৩ সালে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার’ পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ভূতাপেক্ষ বাতিল করে দেন, যা এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মানতে নারাজ বিএনপি ও তার মিত্ররা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বাতিল হওয়া ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএনপি ও তাদের দোসর জামায়াত দেশে এক ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। মারা যায় তিন শর অধিক নিরীহ মানুষ। ক্ষতি হয় কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলো সেই নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ছিল বিএনপির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, যা তারা পরে বুঝতে পেরেছিল এবং ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর ব্যানারে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনকে আসলে বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করেন। একেকটি আসনে কোটি টাকার বিনিময়ে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেন। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। আর মানুষ তো ২০১৩-১৪ সালের ভয়াবহ দিনগুলোর কথা ভুলে যায়নি। এই নির্বাচনে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে বিএনপি থেকে মাত্র ছয়জন প্রার্থী নির্বাচিত হন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি তাদের লক্কড়ঝক্কড় মিত্রদের নিয়ে আবার পথে নেমেছে। দাবি তুলেছে, বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছে এবং মনে করছে, দেশের সব মানুষ তাদের পেছনে কাতারবন্দি হয়েছে। এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়া হতে পারে বিএনপির জন্য শেষ আত্মঘাতী ভুল। যেকোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে হবে বা থাকতে হবে—এই চিন্তা বিএনপির মাথা থেকে বাদ দিতে হবে। সঠিক নেতৃত্ব ও জনসম্পৃক্ততা থাকলে কোনো না কোনো সময় একটি দল অনেক বাধা অতিক্রম করে ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক ইতিহাস আছে। আবার নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে যেকোনো রাজনৈতিক দল ইতিহাসের অংশ হয়ে যেতে পারে। পাকিস্তানের মুসলিম লীগ তার একটি বড় উদাহরণ। ভারতের কংগ্রেসের অবস্থাও তেমন একটা ভালো নয়। বিজেপি প্রথম লোকসভা নির্বাচনে মাত্র দুটি আসনে বিজয় লাভ করেছিল। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরেছিল। দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন আর জনকল্যাণকর রাজনীতি চর্চা করে বিএনপি দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে অবদান রাখতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায়ও যেতে পারে। দলে বেশ কিছু বিচক্ষণ ব্যক্তি আছেন বলে জানি। তাঁদেরই এগিয়ে আসতে হবে। চটকদার বক্তৃতা আর বিবৃতি দিয়ে রাজনীতিতে এখন খুব বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়। মানুষ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।