ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি: সরকারি সিদ্ধান্তে জনগণের আস্থা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২২  

দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সরকার ও জনগণের মধ্যে একধরনের নীরব ‘বোঝাপড়া’ চলছে। সরকার শুরু থেকেই পরিস্থিতি জনগণের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী জনসম্মুখে বলেছেন যে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে সবাইকে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সরকারকে যেন কিছুটা সময় দেয়া হয়। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোটা পৃথিবীতে যে জ্বালানি সংকট শুরু হয়েছে তার অভিঘাত এসে পড়েছে বাংলাদেশের ওপরেও।

বাংলাদেশ একেবারে জ্বালানিশূন্য হয়ে গেছে, পরিস্থিতি এমন নয়, তবে আগে থেকেই যদি সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সুবিধে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ স্বচ্ছ এবং সরল স্বীকারোক্তি দেশের সাধারণ মানুষ খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। এর পেছনে কারণ রয়েছে, তা একটু পরে বিশ্লেষণ করছি।

এরপরই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন যে, দেশে এ মুহূর্তে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করতে গেলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল (পড়ুন ডিজেল) কিনতে হবে তাতে মার্কিন ডলারের এ দুর্মূল্যের বাজারে দেশকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে, যা এ মুহূর্তে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সে জন্য যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো যায় এবং কিছুদিন লোড শেডিং-এর যন্ত্রণা সহ্য করা যায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা বজায় রাখা সম্ভব হবে এবং আর মাস খানেক পরেই যখন প্রাকৃতিকভাবেই তাপমাত্রা কমে যাবে, দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ চাহিদা যখন কমে আসবে তখন আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাবেক অবস্থায় ফিরে যেতে কোনোই অসুবিধে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এ ব্যাখ্যায় স্বচ্ছতা ছিল স্বীকার করতেই হবে। শুরুতেই বলেছি যে, এ স্বচ্ছতার কারণে জনগণ এ মুহূর্তে চলমান বিদ্যুৎ-সংকট তথা লোডশেডিংকে মেনে নিয়েছে। কারণ জনগণ স্মরণ করতে পারছে সেইসব দিনগুলো যখন দিনের বেশিরভাগ সময় এ দেশে বিদ্যুৎ থাকতো না। শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে। জনগণ বিদ্যুৎ, পানিসহ সারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিল এবং সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে দমানোর জন্য পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে জনগণের বুকে গুলি চালানোর মতো ঘটনাও এদেশে ঘটেছিল।

এ দুঃসহ স্মৃতি খুব বেশিদিন আগের নয়। ফলে প্রধানমন্ত্রী এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী যখন সাধারণ জনগণের সামনে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎসেবা দিতে অপারগতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন তখন জনগণ এই প্রথম দেখতে পেলো যে, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার বন্দুকের গুলির বদলে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে। এ এক নতুন ও অপরিচিত সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটলো বাংলাদেশের মানুষের। মানুষ বিস্মিত হলেও পরিস্থিতি মেনে নিল বা নিয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের মানুষের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা। একটি দেশ কীভাবে দেউলিয়া হয়ে যায় এবং জ্বালানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকায় দেশটি কীভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে তা এ দেশের প্রতিটি মানুষ খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অথবা মিডিয়ার কল্যাণে। শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি নিয়ে এ দেশের একদল মানুষ বার বার বলেছে যে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে বা যাবে। দেশের দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাকে গণ্য করা হয় তিনিও যখন বলেন যে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে বাধ্য, তখন মানুষের মনে বড় ধরনের ভীতি তৈরি হয়। এর সঙ্গে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব ও তথ্যের বিকৃতিকে যোগ করি তাহলে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে বহু আগেই জনগণের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কথা ছিল এবং জনগণের রাস্তায় নেমে এসে চরম এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সেরকমটি হয়নি এবং সেরকমটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। 

যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারই দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নাজুক হওয়ার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।এই মুহূর্তে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি টালমাটাল অবস্থা পার করছে। পরাশক্তিসমূহ নিজেদের আরও শক্তিশালী করার জন্য দেশে দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছে এবং অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। ওদিকে এ ন্যক্কারজনক প্রতিযোগিতার কারণে ক্ষুদ্র ও গরিব দেশগুলোর জনগণের না খেয়ে মরার দশা তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত টাকা থাকলেও বিশ্ববাজার থেকে খাদ্যশষ্য আমদানি সম্ভবপর হচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা পতনের পর যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তার ঢেউ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় এরপর যদি কোনো দেশ বিপদে পড়েই তবে সেটা হবে পাকিস্তান। ইতোমধ্যেই দেশটির রিজার্ভ সাত বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। তুলনামূলকভাবে ভারতেরও রিজার্ভ সর্বনিন্ম অবস্থায় রয়েছে বলে গতকালই খবর বেরিয়েছে। ডলারের সঙ্গে তুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে দেশে দেশে নিজস্ব মুদ্রার মান। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। বাংলাদেশেও টাকার মান ডলারের সঙ্গে তুলনায় কমানো হয়েছে।

পরিস্থিতি যখন সর্বত্রই এ রকম তখন নিজস্ব অর্থনীতিকে বিপদগ্রস্ত না করে কীভাবে এ চলমান বিপদ মোকাবিলা করা যায় সেটাই হওয়া উচিত সরকারের মূল কাজ। ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি সরকার বিভিন্ন নির্দেশনার মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয় থেকে শুরু করে ব্যায়-সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। প্রতি সপ্তাহে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে, একনেকে বিশ্লেষণ হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের বৈঠক হচ্ছে। মিডিয়ার কল্যাণে জনগণের কাছে এসব পদক্ষেপের কথা জনগণের অজানা থাকছে না এবং সরকারও জনগণের কাছে কোনো কিছু লুকোতে চাইছে বলে প্রমাণ নেই। আর এ কারণেই সরকার-বিরোধী, দেশ-বিরোধী এবং গুজব রটনাকারীদের সব প্রয়াস বিফলে যাচ্ছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদেরকে সাধারণ মানুষ নিজ গরজেই প্রতিহত করছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পৃথিবীতে কোনো দেশেই নিরবচ্ছিন্ন সফলতার সঙ্গে কোনো সরকারই দীর্ঘদিন ধরে দেশ চালাতে পারে না। কোনো না কোনো পরিস্থিতি এমন বিরূপ আকার ধারণ করে যে, তখন সরকারকে জনগণ পরীক্ষা করে যে, সরকার আসলে কতটা সফলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। যদি দেখে যে সরকার সমস্যা মোকাবিলায় আন্তরিক এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তখন জনগণও আস্বস্ত হয় এবং পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই ঘোলাটে করতে আগ্রহী হয় না। যদিও জনগণকে বোকা বানিয়ে পরিস্থিতিকে আরও বিরূপ করে ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষের লোকেরা তাদের চেষ্টাও অব্যাহত রাখে, যা এখন বাংলাদেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রবলভাবে।

কীভাবে মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলা যায় সে জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে অনেকেই। ফলে এ মুহূর্তে সরকারের আরও সাবধান ও হিসেবি হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
বিশেষ করে যেভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের কাছে গিয়ে নিজেদের অপারগতার কথা বলা হয়েছে তা আখেরে ইতিবাচক ফলাফলই দিয়েছে বলে মনে করা যায়।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে রিজার্ভ বিষয়েও যদি সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণের সামনে সব পরিস্থিতি তুলে ধরতে সক্ষম হয় এবং জনগণকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করে তাহলে সরকারের পক্ষে চলমান এ বিপদ কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব হবে না। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, শেখ হাসিনার হাতে দেশ চালানোর ভার রয়েছে বলেই নিশ্চিন্তে থাকা যায়। একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রীও নিশ্চয়ই মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার জন্য সর্বস্ব বাজি রাখতে দ্বিধান্বিত নন, এও আমরা বিশ্বাস করি।