ব্রেকিং:
মোবাইল ব্যাংকিং: ২২ কোটি গ্রাহকের লেনদেন ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ইসরায়েলে হামলার পর বাইডেনকে ফোন দিলেন নেতানিয়াহু ৩১ দিন পর বাংলাদেশি সেই ২৩ নাবিক মুক্ত তরুণ-তরুণীর ধস্তাধস্তির ভিডিও ভাইরাল, কারা তারা? তরমুজের গায়ে এবার ‘মৌসুম শেষের’ হাওয়া, বেড়েছে দাম চালক-সুপারভাইজারের মৃত্যু নিয়ে গল্প সাজিয়েছেন হেলপার: পুলিশ এবার কুকি-চিনের সহযোগী লাল বম গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভারতীয় ৫০ বস্তা চিনিসহ আ.লীগ নেতা আটক কেএনএফের ৩ সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৪ ঢাকাসহ ৭ অঞ্চলে ৮০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে ঝড় সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজারকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার প্রকাশ, ধনীদের তালিকায় বাংলাদেশের আজিজ খান ইতালি থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সম্মাননা পেলেন ৫ বাংলাদেশি বিএনপির ‘বয়কট ভারত’ আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস ভাড়া কমিয়ে প্রজ্ঞাপন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বক্ষেত্রে জামায়াতের অনুসারী বেশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কুমিল্লা উত্তর জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হঠাৎ ঝড়ে লন্ডভন্ড কয়েকটি গ্রাম মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশ: অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সিট বাতিল
  • মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ভাষাচর্চা একটি ইবাদত

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর নেয়ামাতে আজিমাহর অন্যতম নেয়ামত হলো ভাষা। সবপ্রাণীদেরই নিজস্ব ভাষা রয়েছে; কিন্তু মানবজাতির জন্য আল্লাহ মহান যে ভাষা দিয়েছেন তা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা।

আবার পৃথিবীর সবভাষার মাতৃভাষা মানুষের কাছে প্রিয় ও আদরণীয়।

ভাষা মনুষ্যপরিচয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পশুপাখি ও প্রাণীকূল থেকে মানুষের স্বতন্ত্রতার অন্যতম একটি  উপাদান হলো ভাষা। মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের মানিত ধর্ম ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে ও দিতে বলে। ভিন্ন ভাষার প্রতি কোনোরূপ অসাধুতা ইসলাম কখনো পছন্দ করে না। আমি ইতিহাসে দেখতে পাই মহান আল্লাহ তার বিভিন্ন নবীকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাষা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। শুনুন আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা-

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِلْعَالِمِينَ

অর্থাৎ ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্রতা। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা: আররুম, আয়াত: ২২-২১)।

আমরা মানুষ হলাম আল্লাহ তায়ালার ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক। মহান আল্লাহ আমাদেরকে মনের ভাবভঙ্গি প্রকাশ করার জন্য দিয়েছেন ভাষা। এই ভাষায় একজন অন্যজনের সুখ বুঝে, চিন্তা বুঝে, বুঝে চেতনা, আহ্বান বা বেদনা। একারণে আরবিতে মানুষকে বলা হয় ‘হাইওয়ানুন নাতিকুন’ তথা বাকশক্তি সম্পন্ন প্রাণী। সবভাষা আল্লাহর সৃষ্টি তাই, কোনো ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্বের স্থান অন্যস্থানে। সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান। সবারই একই পিতা বাবা আদম আলাইহিস সালাম ও একই মাতা হাওয়া আলাইহাস সালাম এর সন্তান। সাদা-কালো, লম্বা-খাটো- সে তো আল্লাহর সৃষ্টি। বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্তিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না। কোরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

অর্থাৎ: ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাকি বা তাকওয়াবান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।’ (সূরাতুল হুজুরাত, আয়াত : ১৩)।

নবী-রাসূলদের ভাষা: সব নবীকে তার স্বজাতীয় ভাষাভাষী করে প্রেরণ করা হয়েছে। যদি শিক্ষকই বইয়ের ভাষা না জানে; সে ছাত্র পড়াবে কিভাবে? সব নবী রাসূল উম্মতের শিক্ষক ছিলেন। মহান আল্লাহ কাউকে নতুন কিতাব দিয়েছেন, কাউকে আগের নবীর কিতারে ওপর রেখেছেন। যে যে কিতাব নিয়ে এসেছেন বা যে নবী যে কিতাব অনুসরণ করেছেন সকলেই তদীয় কিতাবের ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। সেই কথা আমাদের কোরআন এভাবে বর্ণনা করতেছে,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

অর্থাৎ: ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি যেন তারা জাতির কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।  (সূরাতু ইব্রাহিম : আয়াত নম্বর: ০৪)।

এই কথা থেকে বুঝা যায় যদি কোনো নবী আমাদের বাংলাদেশে আসতো; তাহলে অবশ্যই সে নবী বাংলা ভাষাভাষী হতেন।

আরবি ভাষাকে ভালোবাসা: আরবি ভাষাকে ভালোবাসা সব উম্মতে মুহাম্মদির জন্য জরুরি। কেননা, আরবি আমার এই উম্মতের ধর্মীয় ভাষা। আর ধর্মীয় ভাষাকে মূল্যায়ন করা শিখা পড়া সবই গুরুত্বপূর্ণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন বলেছেন,

‘তোমরা তিন কারণে আরবি ভাষাকে ভালোবাসো- ১. কোরআন নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়, ২. আমার ভাষা আরবি ও ৩. জান্নাতের ভাষা আরবি।’

আরবদের কাছে আরবি কিতাব আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ, তাদের মাতৃভাষা আরবি; অন্য ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে এবং অনুসরণ করতে অসুবিধা হতো। মহাগ্রন্থ আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং ব্যাখ্যা প্রদান করেন এভাবে,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

অর্থাৎ: ‘আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। (সূরাতু ইউসুফ : আয়াত নম্বর: ০২)।

ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা করা সুন্নত: ভাষার শুদ্ধতা ও উচ্চারণরীতি মেনে চলা সুন্নত ও গুরুত্বপূর্ণ। হ য ব র ল করে ভাষাকে উচ্চারণ করা ও পড়া সুন্নাহ বিরোধী ও ভাষার মান বিরোধী। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ‘আফসাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধ ভাষী। সুতরাং বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত। কোরআনুল করিম ঘোষণা,

الرَّحْمَنُ () عَلَّمَ الْقُرْآنَ () خَلَقَ الْإِنْسَانَ () عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

অর্থাৎ: ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মনুষ্য সৃজন করলেন; তাকে ভাষা বয়ান শিক্ষা দিলেন।’ (সূরাতু আর রহমান : আয়াত নম্বর : ১-৪)।

শায়খ উসমান গণীর লেখা থেকে উদ্ধৃতি করছি, ভাষাচর্চা ইবাদত। আরবি ভাষার ব্যাকরণ মুসলমানদের হাতেই রচিত হয়। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তার প্রিয় শাগরেদ হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)-কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ইলমে নাহু ও ইলমে সরফ নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে উচ্চতর ভাষাতত্ত ইলমে বায়ান, ইলমে মাআনি ও ইলমে বাদির উন্নয়ন ঘটে; যার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন ইমাম আবদুল কাহির জুরজানি (রা.) ও ইমাম জামাখশারি (রা.)। এটাতো গেল আরবি ভাষার কথা। আমাদের বাংলা ভাষা চর্চা করা আমাদের ইবাদত ও গুরু দায়িত্ব। নব্বই দশকের শুরুর দিকে এদিকে এসেছিলেন উপমহাদেশের চিন্তার রাজপুরুষ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবি (রহ.)। তিনি যখন এদেশের আলেমরা মাতৃভাষায় ততটা পারদর্শী নয়, তখন তিনি এই দেশের আলেমদের অনেকটা আক্ষেপ করে বললেন, আপনাদের হাতে মাতৃভাষার ডোর নেই বিধায় আপনারা পিছিয়ে আছেন। এটা ভাষা চর্চা করা আপনাদের জন্য ইবাদত।

শেখ আবদুর রহমান জামি (রহ.) পারস্যবাসী হয়েও বিশ্বের সেরা আরবি ব্যাকরণের তাত্তিক বিশ্লেষণ গ্রন্থ শারহে জামি (ফাওয়ায়িদে জিয়াইয়া) রচনা করেন, যা কাফিয়া গ্রন্থের প্রণেতা ইমাম ইবনে হাজিব (রহ.) রচিত কাফিয়া গ্রন্থের ব্যাখ্যা। এ গ্রন্থের আরো জগদ্বিখ্যাত বিশ্লেষণ পুস্তক রয়েছে; সুওয়ালে কাবুলি, সুওয়ালে বাসুলি, তাহরিরে চম্বট ইত্যাদি এর অন্যতম।

চলছে আমাদের ভাষার মাস। এই মাসে আমাদের নতুন শপথ হতে পারে যে, মাতৃভাষার সঙ্গে ধর্মীয় ভাষাকেও আমরা সমান গুরুত্ব দেবো, ইনশাল্লাহ!