ভোট দিতে বাড়ি ফেরা, ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র পাঁচ দিন। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজধানী ততই ফাঁকা হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা লাখো মানুষ ভোট দিতে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন। কর্মব্যস্ত শহর ভোটের জন্য দিন দিন ফাঁকা হচ্ছে। কারণ ঢাকায় বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষ দেশের নানা এলাকার ভোটার। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে অনেকেই আগেভাগে বাড়ি ফিরছেন।

২৪ ডিসেম্বর, সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, পান্থপথ, মোহাম্মাদপুর, সংসদ ভবন এলাকা, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, শাহবাগ ও বাংলামটর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা যায়।

ভিড় বাড়ছে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ ঘাটে

রাজধানীর কয়েকটি বাস স্ট্যান্ড ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে অন্যান্য দিনের চেয়ে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেশি দেখা যায়।

রাজধানীর ফকিরাপুলে সাইফুল নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন লোকজন ঢাকা ছাইড়া চইলা যাচ্ছে ভোট দিতে। রিকশার খেপ শুধু কমলাপুর স্টেশনে মারতেছি। সব চইলা যাচ্ছে।  সাইফুলের মতে, প্রতিদিন ভোট দেওয়ার জন্য হাজার হাজার লোক রাজধানী ছাড়ছেন।

কয়েকদিন আগে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মগবাজারে বসবাসরত ছাত্র সাদ্দাম, শাহীন, জয়প্রকাশ ও কাদের। তারা জানান, বাড়ি যাচ্ছেন ভোট দিতে। এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন তারা। তাই আগেই বাড়ি যাচ্ছেন। ভোট কেন্দ্রে যাবেন তারা ভোট দেবেন। তবে কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন সে বিষয়ে কিছুই বলেননি এই শিক্ষার্থীরা।

পল্টন এলাকায় কথা হয় কয়েকজন বেসরকারি চাকরিজীবী রাহাত, সুমন, মোকাদ্দেস ও পলাশের সঙ্গে। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট দিতে তারাও যাচ্ছেন বাড়িতে। এদের দুইজন নোয়াখালী ও দুইজন মাদারীপুর এলাকার বাসিন্দা। কেনো বাড়ি যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘ভোট দিতে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ি যাব।

শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি রাস্তায় লোকজন কম। যানবাহন রাস্তায় চলছে কম কম। ঢাকায় লোকসমাগম কমে গেছে।

তবে, ভোট দিতে নিজ জেলায় যাওয়ার সুযোগ কম পাচ্ছেন সংবাদ কর্মীরা। কারণ তাদেরকে নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে হবে। কয়েকজন অনলাইন পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন ভোটের আগে তাদের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ কম।

ভোট উপলক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও অনেকেই ঢাকা ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের পক্ষে কাজ করতে, মাঠে ভোট চাইতে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আইনজীবীরা।

আরেক আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আজকেই ভোট দেওয়ার জন্য চলে যাচ্ছি বাড়িতে। কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বারের বাসিন্দা ফারুক হোসেন। আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন সুপ্রিম কোর্টে।

ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম. সাইফুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত আছি পিরোজপুরে। আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ. ম রেজউল করিমের পক্ষে মাঠে ভোট চাইছি। রাতে ঢাকায় ফিরব। এরপর চলে যাব গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে।’

তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি আসনের ভোটার। ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে ঢাকায় ফেরার কথা জানালেন এই আইনজীবী।

আরেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রোকেয়া আখতার বলেন, ‘ব্যারিস্টার তাপস স্যারের নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত আছি। এই মুহূর্তে কোর্টে কম যাচ্ছি। স্যারের জন্য ধানমন্ডি এলাকায় কাজ করছি।’

এদিকে ভোটের দিন যানবাহন চলাচলের ওপর নির্দেশনা জারি করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সড়কপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আওতায় রয়েছে- বেবি ট্যাক্সি/অটো রিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পুসহ স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন যানবাহন। আর ২৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

তবে রিটার্নিং অফিসার অনুমোদিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৭ ডিসেম্বর থেকে চার দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংকগুলো। এ সময় ব্যাংকে কোনো ধরনের লেনদেন হবে না।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন উপলক্ষ্যে আজ (২৪ ডিসেম্বর) থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবেন। ৩৮৯ উপজেলায় সেনা ও উপকূলবর্তী ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন এক হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মাঠে থাকার কথা রয়েছে। অন্যান্য এলাকার পাশাপাশি বিজিবি সীমান্তবর্তী ৮৭ উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ ছাড়াও কয়েকটি ‍উপকূলীয় কয়েকটি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কোস্টগার্ড মোতায়েন রয়েছে।