ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাল্টা চাষে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আতিকুর রহমান

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২০  

বিদেশ থেকে ফিরেই মাল্টা চাষ শুরু করেন আতিকুর রহমান। কুমিল্লার দেবিদ্বারের সুবিল ইউপির পুটিয়াপাড়া গ্রামে তিনি চাষ করেছেন বারি-১ জাতের মাল্টা। প্রতিটি গাছে থরে থরে সাজানো সবুজ রঙের মাল্টা। দুই একর ১২ শতাংশ জমিতে প্রায় ৫০০ মাল্টা গাছের সবটির অবস্থা একই রকম। 

মাল্টার এ বাগান নিয়ে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ওই গ্রামের বিদেশ ফেরত বৃক্ষপ্রেমী আতিকুর রহমান। দুই বছর ধরেই তিনি এ বাগানটিকে নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। বাগানের পাশে নতুন করে আরো ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। ওই জমিতেও মাল্টা চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ বাগানে ধরেছে দৃষ্টিনন্দন মাল্টা। গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে কিংবা পাতা ঝরা ডালেও ঝুলছে থোকা থোকা সবুজ রংয়ের মাল্টা। শুধু মাল্টাই নয় বাগানে রয়েছে চায়না কমলা, লেবু, পেয়ারা, সাগর কলা, ড্রাগন, বড়ই, খেজুর, আমসহ নানা জাতের দেশী ও বিদেশি ফলজ গাছ।

জানা যায়, দেশে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটির স্বাদ এবং ফলন দুটিই ভালো। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে এবং এটি পরিপক্ব হয়ে কমলা রং ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। তখন এটি বাজারজাত করা হয়। স্থানীয় বাজার ছাড়াও এ ফল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। 

বাগান ঘুরে আরো জানা যায়, প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি মাল্টা। এ বছর বাগান থেকে প্রায় দেড়শ’ মণ মাল্টা ফলনের আশা করছেন চাষি আতিক। তার গাছে ফুল আসা থেকে শুরু করে মাল্টা পাকতে সময় লাগে ৬ মাস। চলতি বছরের আগস্ট/সেপ্টেম্বর মাসে মাল্টা সংগ্রহের সময়।

এসব মাল্টা বাজারে ১৫০/১৮০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করা যাবে। এটি স্বল্প পরিসরে দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলন। পরের বছর গাছ আরো বড় হবে এবং তিনগুন ফলন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে মাল্টা বিক্রি করে ভালো লাভ করা যাবে।

মাল্টা চাষি আতিকুর রহমান জানান, তার বাগানে ৫ শতাধিক মাল্টা গাছ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মাল্টার পাশাপাশি তার বাগানে আরো রয়েছে চায়না কমলা, ড্রাগন, বড়ুই, পেঁপে ও লিচু, খেজুর,  চেরিফলসহ নানা জাতের ফলজবৃক্ষ। কোনো রকম কিটনাশক বা কেমিক্যাল ছাড়া তিনি এ বাগান পরিচর্যা করছেন। গত বছর বাগান থেকে ফল বিক্রি করে ভালো আয় হয়েছে। তার এই মাল্টা চাষ দেখে এলাকার আরো কয়েকজন চাষি মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। 

এমনই একজন তরুণ কৃষি উদ্যোগতা মো. কামরুজ্জামান জুয়েল। তিনি ৩২ শতাংশ জমিতে কমলা ও ২৫ শতাংশ জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তিনি ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে আরো মাল্টা বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছেন আগ্রহী কিছু যুবক।

 কৃষক আতিক আরো জানান, প্রবাসে থাকতেই আমি ওখানকার অনেক মাল্টা বাগান পরিদর্শণ করেছি। সেখানকার অনেক নিয়ম কানুন কাছ থেকে দেখেছি। এছাড়া ইউটিউবে কৃষির ওপর বিভিন্ন ভিডিও ও কৃষিবিদ সাইখ সিরাজের বিভিন্ন কৃষি প্রতিবেদন আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি এগুলো দেখেই শেখেছি। দেশে ফিরে নতুন কিছু করার ভাবনা থেকে মাল্টা চাষ শুরু করি। তখন আমার অনেক বন্ধু আমাকে পাগল বলে উপহাস করেন। আমার মাথায় একটাই চিন্তা ছিলো, দুনিয়ার সবাই বেঈমানি করতে পারে কিন্তু মাটি কারো সঙ্গে বেঈমানি করে না।

তিনি এ প্রতিবেদককে আরো জানান, অত্যন্ত লাভজনক একটি চাষ হলো মাল্টা। এই চাষে লোকসানের আশঙ্কা নেই। চাষ শুরুর করার দুই বছর থেকে ফল আসা শুরু করে। চাষের প্রথম বছরেই এর মূল বিনিয়োগ করা লাগে। এর পর থেকে মাঝে মধ্যে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করলেই হয়। দেশের বিভিন্ন বাগান ঘুরে তাদের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। এছাড়া সমস্যায় পড়লে ইন্টারনেট ও স্থানীয় কৃষি কর্মকতার সাহায্য নিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অধিদফতর থেকে নিয়মিত সার, বীজ ও নগদ অর্থের প্রণোদনা পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। বাগানে অধিকাংশ সময় নিজেই শ্রম দেন এবং পরিচর্যা করেন।

আতিক আরো বলেন, মানুষের কর্মসংস্থান, মানুষকে বিষমুক্ত নিরাপদ ফল খাওয়ানো এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানো, এই তিন উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এগিয়ে চলেছি। এ জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছি। সব খরচ বাদে মাল্টা বিক্রি থেকে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন আমার। 

আগামী বছরে তিনি তার বাগানের পরিধি আরো বাড়াবেন বলে জানান। মো. আলম নামে একজন বাগান পরিচর্যাকারী জানান, তিনি ১২ হাজার টাকার মাসিক বেতনে এ বাগান দেখভাল করেন। নিয়মিত গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া, জৈব সার দেয়া, পোকা মারার ওষধ ছিটানো, পানি নিষ্কাশন করা, হেলে যাওয়া মাল্টার থোকা বাশেঁর কঞ্চি দিয়ে ওপরে তুলে দেয়াসহ বাগানের দেখাশুনা তিনি করেন। তিনি আরো জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে এ বাগানের ফল পেকে যাবে। তারপর বাজারজাত করা যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার কবিরাজ বলেন, মাল্টা একটি আমদানি নির্ভর ফল। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ মাল্টা দেশের বাইর থেকে এনে আমাদের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে হয়। কিন্তু সহজেই এই সুস্বাদু ফলটি আমরা আবাদ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ ২ প্রোজেক্টের আওতায় লাভজনক অপ্রচলিত ফল চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আতিকুর রহমান উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী দুই একর ১২ শতাংশ ভূমিতে মাল্টা চাষ করেন। তিন বছর পূর্বে স্থাপিত তার ওই বাগানে মাল্টা গাছের সংখ্যা আনুমানিক ৫০০টি। প্রতি গাছে ১৫-২০ কেজি মাল্টা আছে। প্রতি কেজি ১৫০ টাকা বিক্রি হলে গাছ প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং মোট ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা তিনি আয় করতে পারবেন। আর ২ বছর পর গাছ প্রতি গাছে গড় ফলন হবে ১ মণ। বাজারে বারি-১ জাতের মাল্টার চাহিদা রয়েছে। বিদেশী মাল্টার সঙ্গে শুধু রং এ কিছুটা পার্থক্য আছে। এটির রং একেবারে হলুদ হয় না। তবে স্বাদ একই রকম। আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি ফল হচ্ছে মাল্টা। এ ফলটি সারা বছরই পাওয়া যায়। এতে করে একদিকে যেমন বেকারত্ব কমছে, অন্যদিকে আমদানি করে প্রচুর অর্থ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে হবে না। সেই সঙ্গে পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ হবে অনেকাংশে।