ব্রেকিং:
ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এমপির মন্ত্রী-এমপিরাই আওয়ামী লীগের নির্দেশ মানছে না ছাত্রলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল মার্চে কুমিল্লায় ৭১ অগ্নিকাণ্ড খুন ৭; সড়কে ঝরেছে ২০ প্রাণ মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

যেভাবে হত্যা করা হয় জামাল হোসেনকে

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৩  

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জামাল হোসেনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আসামিদের বরাত দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া শুটার দেলোয়ার ও তার সহযোগী সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতারের পর বুধবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশজুড়ে আলোচিত চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন র‌্যাব ১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, তাঁরা গ্রেপ্তার আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার বলেছেন, গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি সুজন ও ২ নম্বর আসামি আরিফের জিয়ারকান্দি এলাকার মাছের খামারে কাজ করছিলেন দেলোয়ার। সেখান থেকে দেলোয়ারকে নিয়ে আরিফ গৌরীপুর পাওয়ার হাউসে যান। এ সময় দেলোয়ার দেখতে পান সেখানে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস। গাড়িতে হত্যা মামলার ৯ নম্বর আসামি কালা মনির ও জিয়ারকান্দি গ্রামের শাহ আলী ওরফে আল আমিন বসা ছিলেন। তাঁরা পরে মাইক্রোবাসে ওঠেন।
আরিফ এরপর দেলোয়ারকে বলেন, জামাল হোসেন তাঁদের দুজনের অনেক ক্ষতি করেছেন। জামাল বেঁচে থাকলে তাঁদের আরও ক্ষতি করবেন। তাই জামালকে তারা হত্যা করবেন। এ কাজ শেষে ঋণ পরিশোধ ও পরিবার চালানোর জন্য দেলোয়ারকে টাকা দেওয়া হবে। দেলোয়ার টাকার প্রয়োজনে ও পুরোনো শত্রুতা থাকায় রাজি হয়ে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা গৌরীপুর পাওয়ার হাউসে অপেক্ষা করেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আরিফ একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে ফোন করে নিয়ে আসেন। এরপর আরিফ নিজে একটি পিস্তল নেন। দেলোয়ার ও কালা মনিরকে একটি পিস্তল দেন। এরপর তাঁরা বোরকা পরে অস্ত্র নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে গৌরীপুর বাজারে যান। পরে তাঁরা গৌরীপুর বাজার শিকদার মেডিকেলের পাশের সড়ক (গৌরীপুর বড় মসজিদ) দিয়ে কিছু দূর যান। এরপর অটোরিকশা ছেড়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করেন।
আসামিদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, হাঁটার সময় আরিফ কয়েকজনকে ফোন করেন ও জামাল হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত করেন। পরে ঘটনাস্থলে এসে জামালকে দেখতে পেয়ে গুলি করে সেখান থেকে চলে যান। পালানোর সময় আরিফের বোরকার নেকাব খুলে যায়। কালা মনিরের হাত থেকে পিস্তল পড়ে যায়। পরে মনির পিস্তলটি সড়ক থেকে তুলে নেন। এরপর তাঁরা বোরকাগুলো গৌরীপুর বালুর মাঠের একটি ঝোপের মধ্যে রেখে যান। পরে তাঁরা গৌরীপুরে এক গাড়ির গ্যারেজের সামনে আসেন। সেখানে শাহ আলী ওরফে আল-আমিন নামের এক সহযোগী আগ থেকেই মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এরপর তাঁরা চান্দিনায় আসেন। এখানে এসে তাঁদের পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির কাছে অস্ত্র রেখে আরিফ, কালা মনির, দেলোয়ার ও শাহ আলী নোয়াখালী চলে যান। পরদিন ১ মে তাঁরা আবার একই মাইক্রোবাসে করে চান্দিনায় আসেন। একপর্যায়ে বিপদ আঁচ করতে পেরে পুনরায় নোয়াখালী চলে যান।
কালা মনির ২ মে সকালে দেলোয়ারকে জানান, আরিফ বিদেশ চলে গেছেন। ৩ মে তিতাস থেকে গাড়ি নিয়ে সাহিদুল নোয়াখালী যান। পরে তিনি কালা মনির, দেলোয়ার ও শাহ আলীকে নিয়ে ফেনীতে যান। ফেনী থেকে শাহ আলীকে ঢাকার একটি বাসে তুলে দেওয়া হয়। কালা মনির ও দেলোয়ার নরসিংদীতে যান। সাহিদুল পরে হোমনায় নেমে যান। ৪ মে নরসিংদীতে দেলোয়ারের আত্মীয়র বাসা থেকে কালা মনির ও দেলোয়ার পরে ঢাকার উত্তরায় যান। সেখান থেকে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসেন। সেখান থেকে কালা মনির অন্য গাড়িতে চলে যান।
এরপর দেলোয়ার কয়েক দিন স্থান বদল করে লুকিয়ে থাকেন। ঢাকার শনির আখড়ায় থাকার সময় ৮ মে বিকেলে সাহিদুল তাঁকে ফোন করে বিদেশ চলে যেতে বলেন। কিন্তু দেলোয়ার বলেন, তাঁর পাসপোর্ট নেই। এ সময় পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য সাহিদুলের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। ৯ মে যাত্রাবাড়ী এলাকায় এলে র‌্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে দেলোয়ারের দেওয়া তথ্যমতে, সাহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে তাঁদের সঙ্গে থাকা শাহ আলী ৩ মে বিমানে করে দুবাই চলে যান।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সাহিদুল বলেন, জামাল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি আগে থেকে জানতেন না। মামলার এজাহারনামীয় ৬ নম্বর আসামি শাকিল তাঁর কাছে সাহায্য চান। তাই তিনি তাঁকে সাহায্য করেন।
৩০ এপ্রিল রাত আটটার পর দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকার এক বেকারির সামনে বোরকা পরা তিনজন গুলি করে জামাল হোসেনকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ২ মে মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় তিন আসামি ও অজ্ঞাতনামা ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড চলছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজেস বড়ুয়া বলেন, তাঁরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থেকে উদ্ধার করেন। জামালকে হত্যা করার পর ৩০ এপ্রিল রাত নয়টায় আসামিরা নোয়াখালী যাওয়ার পথে বুড়িচংয়ের নিমসার এলপিজি পাম্পে তাঁদের পরিচিত মাজহারুলের কাছে অস্ত্র, গুলিভর্তি স্কুলব্যাগ ও শপিং ব্যাগ দেন। পরে আসামিদের সঙ্গে মাজহারুল মাইক্রোবাসে ওঠেন। এরপর চান্দিনা উপজেলা পরিষদে যাওয়ার সড়ক থেকে ২০০ গজ পূর্বে এক ঝোপের মধ্যে রেখে দেন। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে চান্দিনা থানায় মাজহারুল, সুজন, আরিফ, কালা মনির, শাহ আলী ও দেলোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩ থেকে ৪ জনের নামে থানায় মামলা করা হয়েছে।