ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

রোমিওগিরি থেকে খুনাখুনি যাদের কাজ

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০  

ফের রাজধানী সহ সারাদেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং কালচার। কিশোর গ্যাংয়ের নামে দিনদিন গড়ে উঠছে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ। পাড়া-মহল্লায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয় ভয়ঙ্কর এসব গ্যাং। তারা জড়িয়ে পড়ছেন নানা ধরনের অপরাধে। অভিযোগ উঠেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নামে গড়ে উঠা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে লিড দিচ্ছেন কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতারা।  

কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত চিনবেন যেভাবে:
আলাদা হেয়ার স্টাইল, বিভিন্ন ধরনের রং করা, পরনে জিন্সের ছেঁড়াফাটা প্যান্ট, গলায় চেইন, হাতে ব্রেসলেট, বিকট শব্দে বাইক চালানো, প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া কথায় উগ্রতা, অশালীন শব্দের ব্যবহার। এই হলো কিশোর গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্যের স্টাইল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব গ্যাং মূলত ‘পার্টি’ বা ফুর্তির আয়োজন করে, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে দাপট দেখায়। এই দলের সদস্যদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ও স্কুলছাত্র। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও লেখাপড়া না করা কিশোর-তরুণও আছে সেই দলে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন ও বিপণনের স্বার্থে ওদের গ্রুপে গ্রুপে মারামারি-খুনাখুনি লেগেই থাকে। তারা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাতেও পিছপা হয় না। কিশোর গ্যাংয়ের কাছে দেশীয় অস্ত্রের ছড়াছড়ি। এমনকি অত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে তাদের দখলে।
 
কিশোর গ্যাং মূলত আলোচনায় আসে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে আদনান কবির হত্যার মধ্য দিয়ে। আদনান হত্যার পর থেকেই বিষয়টি নজরে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এরপর থেকেই অভিযান শুরু করে র‍্যাব। র‍্যাবের অভিযানে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপের প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
 
তবে আইনি জটিলতার কারণে অভিযান অনেকটা থমকে গেলেও ফের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য মতে, প্রতিটি গ্রুপেই রয়েছে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য।

শুধু রাজধানীতেই নয় কিশোর গ্যাংয়ের নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর বন্দরে উঠতি বয়সের ছেলেরা একত্রিত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধে।

এসব গ্যাংয়ের অধিকাংশ সদস্য কিশোর হওয়ায় দণ্ডবিধিতে পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সের কেউ অপরাধ করলে তাকে দণ্ডবিধিতে কোনো বিচারকার্য সম্পাদন করা যাবে না। এ জন্য তাদের আটক করে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে। অথচ ঢাকার শিশু আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং কালচার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
 
গোয়েন্দা তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। শুধু রাজধানীতে প্রায় ৬০টি কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে ৩৪টি গ্রুপ। এসব গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরইমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের একাধিক বাসিন্দাদের দাবি, এসব কিশোর অপরাধী গ্যাংয়ের ব্যাপারে তাদের অবিভাবক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাই উদাসীন ছিলেন। ফের এসব কিশোর বখাটের উৎপাত বেড়েছে। উচ্চগতির মোটরসাইকেলের রেস পথচারীদের আতঙ্কের কারণ। বাসা থেকে মেয়েদের বের করতেও ভয় কাজ করে অভিভাবকদের মনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রুপের কয়েকজন সদস্য বলছে, তারা এলাকায় ক্ষমতার সঙ্গে টিকে থাকতে এসব গ্যাংয়ে যুক্ত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। হিরোইজম প্রবণতা থেকেও যুক্ত হচ্ছে অনেকে।

মারামারি বা হানাহানিতে জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, গ্রুপের পাল্লা ভারী করতে, পাল্লা ভারী করে বড় ভাই হতে, খেলার মাঠ দখলে, মোটরসাইকেল রেস করতে, রাস্তায় রোমিওগিরিতে যখন অপর দল নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে ঠিক সেই সময়ে মারামারি বা হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে তারা।
 
কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িত:
হঠাৎ ছেলেদের আচরণ বদলে যাওয়া। অনেক রাতে বাসায় ফেরা। স্কুল শেষ করেও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া। পরিবার থেকে বেশি হাত-খরচের টাকার জন্য খারাপ আচরণ করা ইত্যাদি। এছাড়াও হেয়ার স্টাইলে আলাদা একটি ভাব আনাসহ বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝতে পারবেন সে অন্য পথে পা বাড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বা তথ্যপ্রযুক্তি কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ। এছাড়াও রাজনৈতিকভাবে কিশোরদের ব্যবহার করার কারণেও তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টিকটক এবং লাইকিতে বিভিন্ন ধরনের কিশোর গ্যাংয়ের পদচারণা এবং তাদের কর্মকাণ্ড সহজেই দৃশ্যমান হচ্ছে সমাজের মানুষের কাছে।

সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় ‘অপু ভাই’ নামে খ্যাত টিকটক ভিডিও নির্মাতা একটি রাস্তা অবরোধ করে ৫০-৬০ জন কিশোর মিলে টিকটক ভিডিও তৈরি করছিল। সেই মুহূর্তে রবিন নামক একজন প্রকৌশলী গাড়ি নিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে অপু ভাইসহ তার দল মিলে মারপিট করে ওই ব্যক্তির মাথা ফাটিয়ে দেয়।

জানা গেছে, নোয়াখালী থেকে ঢাকা আসা অপু ভাই নামক এই টিকটক সেলিব্রেটির আশ্রয়দাতা ছিল ঢাকার উত্তরার কিশোর গ্যাং-এর তিন নেতা সাকিল, শাহাদাত এবং সানি।

অন্যদিকে অপরাধবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্প্রতি ‘অপু ভাই’ এর ঘটনা কিংবা নানান সময়ে ‘কিশোর গ্যাং’ কালচারের উত্থান এবং সমাজে বিদ্যমান কিশোর অপরাধকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। সব অপরাধ সংঘটনের পেছনেই কিছু ‘ট্রিগার ফ্যাক্টর’ কাজ করে। অপরাধ বিজ্ঞানের বিভিন্ন থিওরি এই ফ্যাক্টরগুলোকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অপরাধী যে অপরাধ করছে তা সে অপরাধ ভেবেও করতে পারে আবার না ভেবেও করতে পারে।