ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীরের পাশাপাশি মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির জন্য আমরা কি প্রস্তুত?

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২০  

করোনা সমস্যা মানে এই না যে শুধু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়। এটা আরো বড়ভাবে প্রচন্ড মানসিক এবং আর্থিক যুদ্ধ। আপনার বাবা কাপড়ের ব্যাবসা করে। সামনে রোজা। আজকে বিভাগীয় পর্যায়ে টেস্ট ইউনিট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশ কভার হয়ে যাবে। টেস্ট কিট আনা হয়ে যাবে প্রায় এক লাখ।  আল্লাহ না করুন যদি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে এই বন্ধ, ছুটি রোজা পর্যন্ত গড়াতে পারে।

চাকুরিজীবীদের বেতন আছে। কাপড়, ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে ম্যাক্সিমাম ক্ষুদ্রব্যাবসায়ীদের বছরের সবচাইতে প্রফিটেবল মাস রোজার মাস। বিশেষ করে কাপড় ব্যাবসায়ীরা শুধু মাত্র রোজার মাসের উপর ডিপেন্ডেন্ট৷

আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করেন? আর্থিক যুদ্ধ কেমন? সামনে আসতে পারা খারাপ দিন গুলো কতটা খারাপ হবে? সাহস দিন। ফেসবুকের জনগণের চাইতে তার সাহস বেশী দরকার।

এটা গেলো কাপড় ব্যাবসায়ীদের কথা।শত শত অনলাইন শপ, অফলাইনে কসমেটিক্স, অর্নামেন্টস, সানগ্লাস, জুতো, এক্সেসরিজ সহ ৬০% ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা রোজার মাসের লাভ দিয়ে সারাবছর ব্যাক আপ দেয়৷ আপনি ফেসবুকে চ্যালেঞ্জ নেন আপনার বাবা কোন হিসাবে কি সংসার টা চালায় আপনি জানেন না। জীবন অতটা সহজ না, সময় অতটা ভালোনা।

এবার আসি রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষের কথা। হ্যাঁ, দান করা হচ্ছে তবে সরকার এবং দেশের সব বড়লোক যতই দান করুক দানের টাকা দানের চাল নিজের ইনকামের চালের সমান কখনোই হতে পারেনা। নেভার এভার। তাদের জীবনেও ঈদ আছে রোজা আছে। যেখানে মধ্যবিত্তরাই এবার করোনা ক্রাইসিসে আর্থিক সমস্যায় পড়বে৷ সেখানে দান সদগা তারা অতো করতে পারবেনা। সবমিলিয়ে হ য ব র ল অবস্থা হবে।

চাকুরি সবাই বেক্সিমকো, স্কয়ার, ব্যাংক জব বা সরকারি চাকরি করে না যে কোম্পানি স্যালারি ১০০% কভার দেবে। লকডাউন যদি আরো বাড়ে এবার ক্ষুদ্র, মাঝারি, রপ্তানি নির্ভর কোম্পানি গুলো এমপ্লয়িদের বোনাস তো দুরের কথা বেতন দিতে কষ্ট হবে। যদি প্রোডাকশন এবং সেল স্থগিত থাকে।

গার্মেন্টস সেক্টরে ৫০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। গার্মেন্টস দুই ধরণের আছে। হেভিওয়েট গার্মেন্টস এবং ক্ষুদ্র,মাঝারি গার্মেন্টস। করোনা ক্রাইসিস শুরু হওয়ার আগ থেকেই দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে প্রতিদিন কোথায় কোন না কোন অখ্যাত ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়। এ সেক্টরে হেভিওয়েটরা ছোটদের টিকতে দিচ্ছেনা। দিবেও না।

সেসব ফ্যাক্টরিতে কাজ করে লাখ লাখ কর্মী। তাদের এবারের রোজা কেমন যাবে সেটা কেউ জানেনা। ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প প্লাস গার্মেন্টস মালিকেরা নিজেদের ব্যাবসা দেউলিয়া হবে কিনা সেই টেনশনে অস্থির হয়ে আছেন। এসব নিউজ আপনি ব্রেকিং এ পাবেন না।

সমস্যাটা বড় হতোনা যদি রোজার মাস না হত৷ যেমন বাংলাদেশের লাখো ছেলে মেয়েরা টিউশনি করে রোজার মাসে ফেমিলি চালায় নিজেও চলে।
লকডাউন দীর্ঘ হলে ক্রাইসিস দীর্ঘ হলে টিউশনি বন্ধ থাকবে। না পড়ালে গার্ডিয়ানেরা বেতন দিবে কেন? বেতন না পেলে এবার রোজার মাসের বাজারের টাকা কে দেবে মা কে? ছোট বোন টারে জামা কে দেবে?

এই ব্রিফিং করোনা আপডেটে পাবেন না।

প্রবাসীদের অনেক গালি দিলাম, বাংলাদেশে লক ডায়ন বাড়ুক না বাড়ুক, কাতার, কুয়েত, ইতালি, আমেরিকা, ইউ কে থেকে শুরু করে যেসব দেশে করোনার কারণে আজকে টোটাল লকডাউন সেসব দেশে জব করে রোজার আর ঈদের খরচের টাকা পাঠায় প্রবাসীরা।

এসব দেশে করোনা বাড়তেছে এতই যে, মোটামুটি নিশ্চিত অনেক প্রবাসী হয় চাকরি হারাবে না হয় ঘরে বসে থাকবে। ম্যাক্সিমাম প্রবাসীর বেতন মান্থলি না। ঘন্টা গুণেও বেতন হয় অনেকের। যত ঘন্টা সার্ভিস তত ঘন্টা বেতন৷
এবার দেশে টাকা পাঠানো হবেনা অনেক প্রবাসীরও।

এই তো গেলো আর্থিক যুদ্ধের কথা। মানসিক সংগ্রামের কথায় আসি।
এই যে প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে পারবেনা। তা নিয়ে তাদের ফেমিলি টেনশনে নাই। তাদের বুড়া মা টা সারাদিন নামাযে বসে চোখ ভাসান পুত্রের বিপদ আশংকায়।
টিভিতে দেখছেন ফ্রান্সের অবস্থা ভালোনা, ইউকের অবস্থা ভালোনা, ইতালির অবস্থা ভালোনা। নিজের সন্তান টাকে এই মুহুর্তে ইতালিতে ইমাজিন করেন তো।

এদিকে টেনশন করতেছে বাপ মা প্রবাসে থাকা ছেলে মেয়ের জন্য ওদিকে সন্তানেরা টেনশন করছে দেশে থাকা বাপ মায়ের জন্য। এই মানসিক টানাপোড়েন অত সহজ না।

করোনা ভালোবাসার সম্পর্কেও কি টান দেয়নি? যে মেয়েটা যে ছেলেটাকে দেখা ছাড়া থাকতে পারেনা। আজকাল কাজটা ভিডিও কলেই সাড়তে হয়। এটা কষ্টের, যে ভালোবাসে তার জন্যে কষ্টের। ফানি কোনো বিষয় না।

হাজবেন্ড ইতালি,বউ ভিডিওকলে দেখে তার ভালোবাসার মানুষ টা শুকনো চোখে মুখে বন্ধ ঘরে বসে আছে৷ আতংক নিয়ে। কোন জব নাই, লকডাউন, এদিকে শুনেছে আজ সেই দেশে এতজন মরেছে। এই সংগ্রামের কথা করোনা আপডেট নিউজে লেখা হবেনা।

দিস ইজ দা স্ট্রাগল অফ আওয়ার ভেরি একজিসটেন্স।
আমার রিলেটিভ যারা ডাক্তার,মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, নার্স তাদের আপন জনেরা ২৪ ঘন্টা দোয়া দরুদ পড়ছে।

এক লাইনে যদি বলতে হয় আজ থেকে এক মাস আগে পৃথিবীটা যেমন ছিলো রাইট নাউ এবং সামনের অনিশ্চিত সময়ের জন্য পৃথিবীটা আর আগের মত নেই, আমাদের জীবনগুলা আর আগের মত নেই, মাস চালানোর হিসেব টা আর আগের মত নেই, মানুষের চিন্তার বিষয়গুলা, মানুষে মানুষে সম্পর্কের ডায়ানামিকস গুলা আগের মত নেই।
হয়ত আর কখনোই আগের মত থাকবেনা।

কিংবা হয়ত মানুষ ঘুরে দাড়াবে। ঘুরে দাড়ানোর শুরুটা হতে পারে মিলান থেকে কিংবা প্যারিস থেকে কিংবা সিডনি থেকে কিংবা বাংলাদেশের অখ্যাত কোন গ্রাম থেকে। হয়ত উহান থেকেই শুরু হয়েছে।

নানা কন্সপিরেসি থিউরি, নানা সমীকরণ, মিলিয়ন্স অফ অভিযোগ, তার চাইতে বেশী জটিলতা। তবু মনে মনে বলি, “উই শ্যাল ওভারকাম, উই শ্যাল ওভারকাম”।
লেখকঃ ওয়ারিশ আজাদ নাফি