ব্রেকিং:
৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের সুবিধা বঞ্চিত ১৬৫ শিক্ষার্থী পেলো ৮ লাখ টাকা অনুদান দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় ধাক্কা দিয়ে বাস খালে, নিহত ৩ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে : কাদের সিদ্দিকী কুমিল্লা জেলা ছাত্র জমিয়তের সদস্য সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনার্স শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাউদকান্দিতে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত সিদ্দিকী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি না থাকলে সেটা কলঙ্কজনক হবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিজিবি
  • বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শুভ জন্মদিন মহানায়ক উত্তম কুমার

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

উত্তম কুমার যখন ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে প্রথম দেখা দিয়েছিলেন তার মধ্যে উত্তম কুমার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কতোটা নিহিত ছিল, তা বলা কঠিন। কিন্তু তার প্রতিভার ক্রম উন্মেষে সমৃদ্ধ হয়েছে সিনেমা জগৎ। তার মতো রোমান্টিক হিরো আর আসেনি বাংলা সিনেমায়। ১৯২৬ সালের আজকের এই দিনে কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। 

তার পিতার নাম সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম চপলা দেবী। তিন সন্তানের মধ্যে উত্তম কুমার ছিলেন সবার বড়। উত্তম কুমার কলকাতার সাউথ সাবার্বা‌ন স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপরে গোয়েঙ্কা কলেজে ভর্তি হন। টানাপোড়েনের সংসারে করতে থাকেন চাকরির সন্ধান। কলকাতার পোর্টে ২৭৫ টাকা মাইনের চাকরি নিয়ে শুরু করেন। 

তবে তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে চলচ্চিত্র জগৎে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। উত্তম কুমার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড থিয়েটার ও যাত্রার ভক্ত। পড়ালেখা ফাঁকি দিয়ে চুরি করে দেখতেন থিয়েটার ও যাত্রার রিহার্সেল। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ছোট গয়াসুরের ভূমিকায় অভিনয় করে হইচই ফেলে দিলেন।

উত্তম কুমার প্রথমে ‘মায়াডোর’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তি পায়নি। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল দৃষ্টিদান। কমিশন বাদ দিয়ে এই ছবিতে তিনি পারিশ্রমিক পান সাড়ে ১৩ টাকা। উত্তম-সুচিত্রা ১৯৪৯ সালে মুক্তি পেল ‘কামনা’। কিন্তু সিনেমাটি সুপারফ্লপ হয়। ১৯৫১ সালে সহযাত্রী ছবিতে উত্তম কুমার নামে অভিনয় করলেন। সেটিও সুপারফ্লপ হয়। পরের ছবি ১৯৫১ সালে নষ্টনীড় সেটিও সুপারফ্লপ। এরপর ‘সঞ্জীবনী’ এবং ‘কার পাপে’। 

কিন্তু বসু পরিবার চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে প্রথম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে সাড়ে চুয়াত্তর মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন লাভ করেন। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়।

সাড়ে চুয়াত্তর ছবির মাধ্যমে নায়ক উত্তম কুমার হয়ে উঠলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। মহানায়ক উত্তম কুমার ১৯৫৪ সালে উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘অগ্নিপরীক্ষা’ জনপ্রিয়তার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। উত্তম-সুচিত্রার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা। 

উত্তম কুমার ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, সুরকার, প্রযোজক এবং পরিচালক। তার চলচ্চিত্রজীবনের ৩০ বছরে ৩৫ জন অভিনেত্রীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন প্রায় ২০১টি ছবিতে। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ২৯টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ৩২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন।

হারানো সুর প্রশংসিত হয়েছিলেন সমগ্র ভারতজুড়ে। সেই বছর ‘হারানো সুর’ পেয়েছিল রাষ্ট্রপতির সার্টিফিকেট অফ মেরিট পুরষ্কার। চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছেন বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, সার্টিফিকেট অব মেরিট, ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সাংস্কৃতিক সাংবাদিক সংস্থা, প্রসাদ পত্রিকা ও ভরত পুরস্কার। 

সুচিত্রা সেন উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য হলো- ছোটিসি মুলাকাত, দেশপ্রেমী ও মেরা করম মেরা ধরম। উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, বনপলাশীর পদাবলী ও শুধু একটি বছর ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে। সঙ্গীতের প্রতিও তার অসীম ভালবাসা ও আগ্রহ ছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এবং শ্যামল মিত্রের গানেই সবচেয়ে বেশি ঠোঁট মিলিয়েছেন তিনি। 

উত্তম কুমার গৌরী দেবী কে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র ছেলে গৌতম চট্টোপাধ্যায়। ১৯৬৩ সালে উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে এসে তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর কাছে। তার সঙ্গে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বসবাস করেন। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে ছিলেন। 

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের  এই ‘মহানায়ক’ ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে কলকাতায় বেলভিউ ক্লিনিকে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। মহানায়ক উত্তম কুমার তার চলচ্চিত্রজীবনের যা দিয়ে গেছেন তার জন্য যুগ যুগ ধরে মানব হৃদয়ে চিরস্বরনীয় হয়ে থাকবেন।