ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সমকামী এই ব্যক্তির মাধ্যমেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি হয়!

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯  

পুরো পৃথিবী তখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে এক মহাযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। সময়টা ১৯৩৯ সাল। এক পক্ষে জার্মান নাৎসিবাদী হিটলার ও তার মিত্রদের নিয়ে গঠিত অক্ষশক্তি। অন্যপক্ষে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রশক্তি। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জার্মান নৌ ও বিমানবাহিনীর মুহুর্মুহু আক্রমণে ইউরোপ তখন ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠছে। সেইসঙ্গে মিত্রশক্তির মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল জার্মানদের এনিগমা কোড। 

জার্মান সেনারা আসন্ন আক্রমণের খবর একে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ এক এনিগমা মেশিন ব্যবহার করত। এই মেশিনে তৈরি এনিগমা কোড ছিল খুবই দুর্বোধ্য। একমাত্র এনিগমা ডিকোডার ছাড়া সেই কোড কোনো সাধারণ মানুষ কিংবা মেশিনের পক্ষে ডিকোড করা সম্ভব ছিল না। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত কোড সম্পর্কে যাদের একেবারেই ধারণা নেই, তাদেরকে প্রাথমিক ধারণা দেয়া যেতে পারে সিজার কোড নামে এক বিশেষ ধরণের কোডের কথা বলে। সম্রাট জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম এই কোড ব্যবহার করেছিলেন। 

 

এনিগমা মেশিন

এনিগমা মেশিন

মিত্রদের কাছে তিনি পাখির মাধ্যমে যে বার্তা পাঠাতেন, তা যেন শত্রুরা পাখিটিকে হত্যা করে না পড়তে পারে সে কারণে তিনি বিশেষ এক উপায়ে বার্তা লিখতেন। যেমন আমি যদি বলি ‘BUUBDL’ আপনারা এর তর্জমা উদ্ধার করতে পারবেন না। এখন যদি বলি শব্দটির অন্তর্গত প্রত্যেকটি বর্ণের ঠিক আগের বর্ণটি নিয়ে শব্দ গঠন করুন তাহলে কি দাঁড়াবে? B এর আগের বর্ণ হলো A, U এর আগের বর্ণ T, D এর আগের বর্ণ C, L এর আগের বর্ণ K। তাহলে ‘BUUBDL’ মানে দাঁড়ায় ‘ATTACK’! 

যাই হোক, এবার ফিরে আসি মূল কাহিনীতে। জার্মানদের এনিগমা ওয়েভ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল ঠিকই কিন্তু সেগুলো ধরার পর ডিকোড করা কিছুতেই ব্রিটিশ বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। উপরন্তু জার্মানরা প্রতিদিন তাদের এনিগমা সিস্টেমে পরিবর্তন আনত। যার ফলে একদিন প্রতিপক্ষের কেউ কোনো কোড ডিকোড করে ফেললেও পরবর্তী দিন ডিকোডিংয়ের ওই পদ্ধতি আর কাজে লাগত না। 

 

অ্যালান টিউরিং

অ্যালান টিউরিং

এই এক এনিগমার কারণেই জার্মানদের পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। চোখের সামনে দিয়ে শত্রুর বার্তা চলে যাচ্ছে কিন্তু তা পড়া যাচ্ছে না, চরম হতাশাজনক এ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ল ব্রিটিশরা। সেইসঙ্গে জার্মানরা কখন কোথায় আক্রমণ করবে, এনিগমা পড়তে না পারায় তাও আগে থেকে জানা যাচ্ছিল না। এক এনিগমার খেল দেখিয়েই জার্মানরা প্রতিপক্ষকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ছিল! 

এমন সময় ব্রিটেনের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন অ্যালান টিউরিং নামের এক গণিতবিদ। টিউরিং ছিলেন ব্রিটেনের এক সম্ভ্রান্ত মিলিটারি পরিবারের সন্তান। শৈশব থেকেই তার গণিত ও ক্রিপ্টোগ্রাফির প্রতি ঝোঁক ছিল। স্কুলের বন্ধু ক্রিস্টোফার ছিল টিউরিংয়ের কোড ব্রেকিংয়ের নেশার সঙ্গী। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ক্রিস্টোফারের সঙ্গে টিউরিংয়ের প্রণয়ের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল ছোটবেলা থেকেই। তবে কয়েক বছর পরেই টিউরিংকে একা করে দিয়ে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ক্রিস্টোফার। 

 

দ্য ইমিটেশন গেম সিনেমার দৃশ্য

দ্য ইমিটেশন গেম সিনেমার দৃশ্য

বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে টিউরিং ভর্তি হন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। পরিসংখ্যানের সুবিখ্যাত সমস্যা ‘সেন্ট্রাল লিমিট থিওরেম’ যখন টিউরিং প্রমাণ করে দেখান, তখন তার বয়স মাত্র ২২! এই কীর্তির স্বীকৃতি হিসেবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে তাদের অধিভুক্ত কিংস কলেজের ফেলো হিসেবে নিয়োগ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী একটি কোড ডিকোডার গ্রুপ তৈরি করে। 

সমগ্র ব্রিটেনের সেরা সেরা গণিতজ্ঞ, ভাষাবিজ্ঞানী, দাবাড়ুদের নিয়ে লন্ডনের ব্লেচলি পার্কে স্থাপন করা হয় সরকারি কোড ও সাইফার স্কুল। এই স্কুলের উদ্দেশ্য ছিল একটাই, জার্মানদের এনিগমা ভাঙার উপায় বের করা। তবে কিছুদিন কাজ করার পরই হতাশা জেঁকে বসে তাদের মনে। কারণ ব্রিটেনের সবচেয়ে মেধাবী একেকজন ব্যক্তির চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলছিল জার্মানদের এনিগমা! 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এনিগমার ব্যবহার করছে সৈন্যরা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এনিগমার ব্যবহার করছে সৈন্যরা

সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে তারা বাড়ি ফিরতেন। পরদিন সকালে এসে দেখতেন, জার্মানরা এনিগমার সেটিং পরিবর্তন করে ফেলেছে! আগের সব কাজ তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে হতো তখন। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো মানুষই তো হতাশ হয়ে পড়বেন। কিন্তু হতাশ হলেন না অ্যালান টিউরিং। তার হার না মানা মনোবলই শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিয়েছিল মিত্রশক্তিকে। কীভাবে? তা জানতে হলে অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী পর্বের। আর এর মধ্যে দেখে নিতে পারেন অ্যালান টিউরিংয়ের জীবনের ওপর নির্মিত বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ অভিনীত ‘দ্য ইমিটেশন গেম’ সিনেমাটি।