ব্রেকিং:
বিএনপি নেতারা বউদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন? এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির সিলিন্ডার ফেটে অটোরিকশায় আগুন, ভেতরেই অঙ্গার চালক ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ, সই হবে তিন এমওইউ মেঘনায় ট্রলারডুবি: দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু দুপুরের মধ্যে তিন অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যৌন হয়রানি রোধে কাজ করবে আওয়ামী লীগ জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার ঘোষণা কানাডার ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের ৯ বগি লাইনচ্যুত বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব মায়ের আহাজারি ‘মেয়েটাকে ওরা সবদিক থেকে টর্চারে রাখছিল’ এই প্রথম ত্রাণবাহী জাহাজ ভিড়ল গাজার উপকূলে জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে নাইজেরিয়ায় রমজানে রোজা না রাখা মুসলমানদের গ্রেফতার করছে পুলিশ বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বাত্মক লকডাউনে সাধারণ ছুটি, ঘরে থাকতে হবে মানুষকে

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২১  

সরকারের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন গত কদিন ধরে বলে আসছেন, করোনার সংক্রমণ রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন আসছে। কিন্তু রবিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত বৈঠকে ১৪ এপ্রিল থেকে সাধারণ ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে সই করলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আদেশ জারি করে বলবে, ১৪ এপ্রিল থেকে মানুষের করণীয় কী। আর এর মাধ্যমে সরকার লকডাউনের কথা প্রশাসনিকভাবে আবারও অস্বীকার করল। একইসঙ্গে লকডাউন হবে বলে মন্ত্রীদের ঘোষণাও মিলল না।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আপাতত ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের সাধারণ ছুটি ঘোষণা আসতে পারে। পরিস্থিতি খারাপ হলে এই ছুটির সময় আরও বাড়বে। ‘সর্বাত্মক লকডাউনের নামে আসন্ন দিনগুলোতে সরকার সাধারণ ছুটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এদিকে, চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও দুদিন বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত করা হয়েছে। বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ছুটির নির্দেশনা কার্যকর হবে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকবে* দুরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে* বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে

সরকারি বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গত বছর সাধারণ ছুটিতে যেভাবে চলেছিল সে রকম কিছুই হতে পারে। গত বছর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়েছিল। প্রথমে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি হয়। প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু কিছু বিষয় খুলে দেওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাধারণ ছুটির মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। বর্তমানে মহানগরগুলোতে যেভাবে গণপরিবহন চলছে, সেটিও বন্ধ থাকবে। দুরপাল্লার বাসতো বন্ধই আছে। বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে। এছাড়াও অন্যান্য কী কী বিধিনিষেধ থাকবে, সেটি নিয়ে এখন কাজ চলছে। আদেশে বিষয় স্পষ্ট করা হবে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন ও ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে চালু থাকবে শিল্প-কারখানা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রবিবারের বৈঠকে আপাতত এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। কবে প্রজ্ঞাপন জারি হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসতে পারবে না কেউ।

বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন হলেও শিল্প কারখানা চলবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, লকডাউনে শিল্প কারখানা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া ব্যাংক বন্ধ থাকতে পারে। তাতে আমদানি-রপ্তানিতে সমস্যা হবে। এ বিষয়েও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। অবশ্য সরকার এ বিষয়ে এখনও আদেশ জারি করেনি।

এরআগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের চলমান লকডাউনের ধারাবাহিকতায় চলবে ১২ ও ১৩ এপ্রিল। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। আর ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, সর্বাত্মক লকডাউনে সাধারণ ছুটির ঘোষণা হলেও মানুষ ইচ্ছে হলেই ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসতে পারবে না কেউ। এটা যেকোনও মূল্যে নিশ্চিত করা হবে।

ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে।

সূত্র জানিয়েছে, দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে কড়া লকডাউন দিতে চায়নি সরকার। কিন্তু একদিকে করোনার বেপরোয়া সংক্রমণ ও মৃত্যু, অপরদিকে এই সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া বিধি-নিষেধ মানার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চরম অবজ্ঞা কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। এবারের এক সপ্তাহের লকডাউনকে বলা হচ্ছে কমপ্লিট বা ফুল লকডাউন। মানুষ চাইলেই ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। যেকোনও মূল্যে ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ অন্যান্য বিধিনিষেধের প্রতি জনসাধারণের অবহেলায় খুবই ক্ষুব্ধ সরকারের নীতিনির্ধারকরা। গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া ১৮ দফা নির্দেশনা জনসাধারণ মানেনি। নানাভাবে আনুনয় বিনয়ের পরেও মুখে মাস্ক পরানো যায়নি। ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ এখনও মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখেন। পুলিশ দেখলে মুখে তোলেন। ১৮ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে পারলে সংক্রমণের হার নিচের দিকে নামতো। বাধ্য হয়ে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রেখে অফিস আদালত সীমিত পরিসরে খোলা রেখে কঠোর নির্দেশনা বা আংশিক লকডাউন দিতে বাধ্য হয়। তবে এই ১১ দফা নির্দেশনা বা আংশিক লকডাউন দেওয়ার দুই দিন যেতে না যেতেই বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে বাধ্য হয় সরকার।

দিনে খুবই সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে কাঁচাবাজার।

শুরুতে গণপরিবহন চালু করা হলো। এক্ষেত্রে দেওয়া ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায় ছাড়া কোনো শর্তই বাস্তবায়ন হয়নি গণপরিবহনে। পরের দিন নৌপথে চলাচলের জন্য নৌযান খুলে দেয়া হলো। সেখানেও বাড়তি ভাড়া আদায় ছাড়া কার্যকর হয়নি কোনো শর্ত। এরপর জোর দাবি ও বিক্ষোভের মুখে খুলে দেওয়া হলো শপিংমল ও দোকান পাট। রাস্তায় নামল সাধারণ মানুষের ঢল। একদিকে রাস্তায় মানুষের ঢল, অপরদিকে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রতিযোগিতা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাধ্য হয়ে বুধবার ১৪ এপ্রিল থেকে আপাতত সাত দিনের জন্য কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশানুরূপ ফল না মিললে সময়সীমা বাড়বে- এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্ধ থাকবে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, চলবে কার্গো।

নতুন নির্দেশনায়, সেবাদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান যেমন ফায়ার সার্ভিস খোলা থাকবে। খোলা থাকবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ওষুধের দোকান। দিনে খুবই সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে কাঁচাবাজার। তবে সেখানে মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। লাইন ধরে তিনফুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে হবে। পুরোপুরি বন্ধ থাকবে সব ধরনের শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস। সব কিছুই লকডাউনের আওতায় থাকবে। সংক্রমণ রোধে প্রত্যেক মানুষকে এই লকডাউন মানতে হবে।

বন্ধ থাকবে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, চলবে কার্গো। এরই মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। রবিবার বেবিচক জানায়, লকডাউনে আরও এক সপ্তাহের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও কার্গো ফ্লাইট চালু থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বিশেষ কোনো ফ্লাইট থাকলে সেটা পরিচালনা করতে কোনো বাধা নেই। বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, লকডাউনের কারণে সব ডমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। তবে কার্গো প্লেন চালু থাকবে। বিশেষ বিবেচনায় কোনো বিশেষ ফ্লাইট থাকলে সেটা পরিচালনা করা হবে। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়লে গত ৩ এপ্রিল থেকে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।