হাত পরিষ্কার রাখলেই করোনা থেকে রক্ষা

বিশ্বজুড়ে চলমান আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশে আবির্ভাব হওয়া কভিড-১৯ নামে পরিচিত এ ভাইরাসটি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় ১০৯টি দেশে। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো বিশ্বে। এ ভাইরাসের কারণে প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে অনেক নাম। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও তিনজনের শরীরে এই ভাইরাস ধরা পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। পুরো একটি শহরকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা থেকে শুরু করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও রাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছে অনেক দেশ। তবে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সাবধানতা অবলম্বন করাটাই এখন মূখ্য বিষয়।

এর আগে সম্প্রতি জেনেভায় দুইদিনের একটি ফোরামের আয়োজন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। এ ফোরামে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামীদামি কয়েকশ' বিজ্ঞানীরা। সেখানে করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীরা। কভিড-১৯ নামে পরিচিত এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ওষুধ এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারে একটি কৌশল অবলম্বন করতে একমত হয়েছেন তারা। দ্রুত গবেষণার মাধ্যমে এ ভাইরাস মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আক্রমণের কারণে এইমুহুর্তে প্রয়োজন ছাড়া বিমানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। এছাড়া ক্রুজ বা জাহাজ ভ্রমণের জন্য ঠিক কতটা নিরাপদ সে বিষয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন। ব্যাপারটির গুরুত্ব এতটা বেড়েছে যে যেসব দেশে এখনো করোনা ছড়ায়নি সেসব দেশে চীনা খাবার থেকে দূরে থাকছে মানুষ। এশিয়া মহাদেশে ভ্রমণ বাতিল করছে পর্যটকেরা।

দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসকেরা একটি বিষয়ে সতর্ক করে আসছে যে, কোনো এক জায়গায় যদি সংক্রামক রোগ হয় এবং যদি সেটি ছড়াতে শুরু করে তবে সেটি ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এমনই আরেকটি রোগ হচ্ছে সার্স। এই রোগে শ্বাসযন্ত্রের তীব্র কষ্ট অনুভূত হয় এবং রোগীর মৃত্যু হয়। এই রোগটিও ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চীনে প্রথম ধরা পারে। করোনাভাইরাসের মতোই সার্স ভাইরাসের কারণে চীন সরকারকে একটি হাসপাতাল তৈরি করতে হয়েছিল। দীর্ঘ ছয় মাস এই রোগের স্থায়ীত্ব ছিল। এ মহামারী শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বের প্রায় ২৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাস ছড়ানোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরো বিশ্বজুড়ে রোগ ছড়ানোর একটি প্রধান মাধ্যম বাতাস। এই মাধ্যমে বেশির ভাগ রোগ ছড়িয়ে থাকে। একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের করা সমীক্ষায় দেখা যায় যে, খুব কম লোকের হাত পরিষ্কার থাকে। সুতরাং যদি আমরা এই মহামারী থেকে বাঁচতে চাই তবে আমাদের সবাইকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, প্রথমত বিশ্বজুড়ে মানুষের হাত ধোয়ার হার গণনা করার চেষ্টা করতে হবে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ টয়লেট অর্থাৎ শৌচাগার ব্যবহার করার পরে তাদের হাত ধোয়। তবে এই ৭০ ভাগের মধ্যে মাত্র ৭ ভাগ মানুষ সঠিকভাবে হাত ধোয়।

এ বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, সঠিকভাবে বলতে বোঝানো হয় যে, ১৫ সেকেন্ডের মত সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধোয়ার কাজটি করতে হবে। এছাড়া আরো এক গণনায় জানা গেছে যে, আপনি যদি কোনো সময়ে বিমানবন্দরে যান এবং সেটি ঘুরে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র একজনের হাত পরিষ্কার রয়েছে। কিছু ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের মাধ্যমে ভাইরাস এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়াতে থাকে।

অপর এক গণনায় দেখা গেছে, যদি ৬০ শতাংশ ভ্রমণকারীদের হাত পরিষ্কার থাকে তাহলেই পুরো বিশেজুড়ে এ রোগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি যদি ৩০ শতাংশ যাত্রীর হাত পরিষ্কার থাকে তাহলেও রোগের বিস্তার ২৪ শতাংশ কমে যাবে।

তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে জনসাধারণকে এসব ব্যাপারে সচেতন করাই হলো মূখ্য উদ্দেশ্য। সচেতনাতাই পারে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের হাত থেকে জনগণকে বাঁচাতে।