ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

হিজড়াদের সেকাল-একাল, যেভাবে ঠেলে দেওয়া হতো অপরাধীর তালিকায়

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২১  

এই আধুনিক সময়েও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা আজও নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছেন। বাধ্য হয়ে তারা এ লাড়াইটা করছেন। সমাজ কবে তাদের প্রকৃত মান্যতা দেবে সেই প্রশ্ন নিজ মনে বয়ে চলে তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলো। 

হিজড়ারা যতটুকু অপরাধমূলক কাজে জড়িয়েছে, তার সূত্রপাত ঘটে অনেক আগে। ব্রিটিশ আমলের কথা। তখনও সঙ্গীর প্রয়োজনে হিজড়ারা খুঁজতেন তাদের মতোই অন্য কাউকে। তবে তাদের জীবনযাত্রা যেহেতু স্বাভাবিক মানুষের মতো ছিল না, তাই তাদের বেশিরভাগ সময় কাটত যাযাবর হিসেবেই। ফলে তাদের দিয়ে অপরাধমূলক কাজ কেরিয়ে নেওয়া সহজ হতো। এই সুযোগে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রগুলো হিজড়াদের ব্যবহার করতো নানা অপরাধমূলক কাজে। ইতিহাস বলছে, ভারত উপমহাদেশের অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সরকার বিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। এতে সেই আমল থেকেই হিজড়াদের অপরাধী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে চিন্তা করা হতো। এভাবেই তৎকালীন জনমনে হিজড়াদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির বীজ বপন করা হয়। 

এ ছাড়াও প্রচলিত আইন-কানুনের খানিকটা ঊর্ধ্বে ছিলো তারা। তাই ইংরেজরা এসব মানুষদের ওপর নিজেদের ছড়ি ঘোরাতে পারতেন না। তাই ইংরেজ শাসকরা তাদের বাগে আনতে বিভিন্ন সর্বনাশা আইন কানুন প্রয়োগ করে। নানা মাধ্যমে তাদের অপরাধী প্রমাণ করার চেষ্টা করে। সেই থেকেই শুরু হয় হিজড়াদের নিয়ে সমাজের মানুষের নেতিবাচক চিন্তা। যে চিন্তাধারার ছাপ আজও স্পষ্ট।  

 

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ছবি : সংগৃহীত

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, ব্রিটিশরা দেশ ছাড়ার এত বছর পরেও ব্রিটিশমার্কা ছাপ থেকে কেন আমরা আজও বের হতে পারিনি? দুর্ভাগ্যজনক যে, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এখনও ব্রিটিশ আমলের পুরাতন ধ্যান-ধারণাকে আঁকড়ে ধরে আছি। বয়ে বেড়াচ্ছি নানা সনাতনী ভাবনা। আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক সব রাষ্ট্রও তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলোর পূর্নাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। 

সমাজের বেশিরভাগ মানুষ এখনও হিজড়াদের ছেলে ধরা বা চোর-ডাকাত মনে করে। এমনও দেখা যায়, অনেক সময় বিনা কারণে এসব মানুষদের ওপর জনসাধারণের তীব্র আক্রোশ ঝরে পড়ে। অনেক সময় তাদের যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়।

তবে এ কথাও সত্য যে হিজড়াদের বাস্তব অবস্থা আগের থেকে অনেকটা উন্নত হয়েছে। তাদের অধিকার নিশ্চিতে এখন বদ্ধপরিকর দেশের সরকারও। তাদের প্রতি দেখানো খারাপ মনোভাব থেকে সরে আসছে শিক্ষিত সমাজের সচেতন শ্রেণি। 

বাংলাদেশে হিজড়াগণ এখন সরকারিভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে। সফলভাবে সর্বত্র স্বীকৃতি লাভ করেছে। শিক্ষা বা চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণের মতোই অধিকার পাচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে। আইনগতভাবে পাসপোর্ট এবং অন্যান্য দাপ্তরিক কাগজপত্রে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় লিঙ্গের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। হিজড়াদের পুনর্বাসনে বর্তমান সরকার সক্রিয় রয়েছে।

 

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ছবি : সংগৃহীত

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ছবি : সংগৃহীত

হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার নিয়েছে নানা উদ্যোগ। তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন,শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ, হিজড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, আয়বর্ধক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে হিজড়াদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে হিজড়াদের সম্পৃক্ত করা, আদমশুমারিসহ বিভিন্ন জরিপে হিজড়াদের জন্য আলাদা একটি কলাম রাখা ও ভোটার তালিকায় হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণসহ নানা স্থানে তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ কথা বলাই যায়, তৃতীয় লিঙ্গের কেউ অপরাধ করলে তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত ঠিকই। কিন্তু সেই শাস্তি দেওয়ার অধিকার কিন্তু  যে কেউ রাখে না। এ জন্য দেশে আইন রয়েছে। নিজ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে দেখতে হবে, হিজড়া বলে তাদের যেভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তা আদৌ বাস্তবসম্মত কি না। তাই তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষকে দেখতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে।  হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতে সম্পৃক্তকরণ প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগের সমন্বিত প্রয়াস এখন সময়ের দাবি।