ব্রেকিং:
ধর্ম অবমাননা কুবি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ ‘পিডাইয়া লম্বা করে দেওয়ার নির্দেশ’ ফুলবাড়িতে সীমান্তে ঢুকে বিএসএফের গুলিবর্ষণ অভিযানে গিয়ে নারীর মাথায় পিস্তল ধরে, ‘শিশুকে আঘাত’ করে পুলিশ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান রাতেই কুতুবদিয়ায় নোঙর করবে এমভি আব্দুল্লাহ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সিন্ডিকেটের থাবা প্রাণিখাদ্যের বাজারেও কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল, সম্পাদক মুন নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ আজ বিশ্ব মা দিবস চাঁদপুরে মন্ত্রী ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচনায় নাজিম কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঋণ শোধের সক্ষমতা অর্জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুকি চিনের রক্তথাবায় বিপন্ন সবুজ পাহাড় জুলাইয়ে বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী একদিনের সফরে গোপালগঞ্জের পথে প্রধানমন্ত্রী
  • শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আখাউড়া উপজেলা প্রধান শিক্ষকসহ ৩৩ পদ শূন্য, জোড়াতালি দিয়ে চলছে পাঠ

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২ মে ২০২৪  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘ দিন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ ৩৩ টি পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে।  এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক ১৬ জন ও সহকারী শিক্ষক ১৭ জন রয়েছেন। 

দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। যেসব বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ খালি রয়েছে সে সব বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষক দিয়ে অতিরিক্ত পাঠদান করানো হচ্ছে। 

শিক্ষক সংকটের কারণে সংশ্লিষ্ট  বিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক কাজকর্ম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা।  

উপজেলা প্রাথমিক অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওইসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৩৬১ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩৩ জন পদ শূন্য হয়ে আছে। অবসরসহ বিভিন্ন কারণে চলে যাওয়ায় বর্তমানে ৩২৮ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে এ কার্যক্রম।

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রমও। ফলে ওইসব বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান পিছিয়ে পড়ায় এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই অভিভাবকদের।

প্রধান শিক্ষক সংকট থাকা বিদ্যালয়গুলো হল কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয়ঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টনকি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাপুর টানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধাতুরপহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হীরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনিয়ন্দ উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটামাথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভান্ডুসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিনারকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলাখাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাছাড়া ওই সব বিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরো  ১৭ জন সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য হয়ে আছে।

অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষক-স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।  

তারা আরো বলেন, কিছু নারী শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ও বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণে থাকায় চলমান সংকট আরো প্রকট হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, শিশু জরিপ, আদমশুমারিসহ বিভিন্ন কাজ তাদের মাধ্যমে করা হয়। এরমধ্যে ভ্রারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা দাফতরিক কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিস বা জেলা অফিস যাওয়ায় অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

উপজেলার তুলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. রমজান আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত স্থান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক স্বল্পতায় যেন তাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতার এমন বেহাল দশার কারণে সন্তানদের নিয়ে অনেকটাই যেন বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত এ অবস্থার উত্তরণ না হলে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে জানায়।

এদিকে টনকি দক্ষিণ, ধাতুরপহেলা, ভাটামাথা, রানীখার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোনো কোনো সময় বিদ্যালয়ে অফিসের অতিরিক্ত কাজ থাকায় এক শিক্ষক দিয়ে দুটি শ্রেণির ক্লাস করা হয়। এতে করে তাদের পড়াশোনা বিদ্যালয়ে ভালো করে হচ্ছে না বলে জানায়। তারা আরো জানায়, পাঠদানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে শিক্ষক সময় পাচ্ছেন সেই পাঠদান করাচ্ছেন।  

উপজেলার ভান্ডুসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল আলম বলেন, এই বিদ্যালয়ে ১৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অনেক দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে আছে। বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। তিনি আরো বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।

তুলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, এই বিদ্যালয়ে ২৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৭ জন শিক্ষকের স্থলে বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম।  এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক ও ১ জন সহকারী শিক্ষক পদ দীর্ঘ দিন ধরে খালি হয়ে আছে। শিক্ষক খালির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জরুরি ভিক্তিতে শূন্য পদে শিক্ষক দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক কম থাকায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রশাসনিক কাজকর্ম। স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান খুবই কষ্টকর হচ্ছে। সরকারি নিয়ম মেনে অতি দ্রুত বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শুভ দৃষ্টি কামনা করছেন।

উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান  বলেন, এ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৩৩ পদ শূন্য আছে। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় শূন্যপদ পূরণ করা যায়নি। আশা করছি অতি শিগগিরই যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক নেই, সেখানে শূন্য পদে শিক্ষক দেওয়া হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দীন বলেন, অবসর গ্রহণসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময় শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক না থাকার বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত শূন্যপদ পূরণ হবে।