কুমিল্লা-২ আসনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাপা প্রার্থী

কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেও অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া। রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরীর নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হয়ে এ ঘোষণা দেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘পরিস্থিতির বিবেচনায় আমাকে নির্বাচন থেকে সরে আসার এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে’। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী সেলিমা আহমেদ মেরীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি পক্ষের লড়াই। একটি হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনাসহ মহাজেটের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ। যারা মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আরেক দিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। রজাকার আল বদর, খুনিসহ সকল অপশক্তি একত্রিত হয়ে গঠিত বিশ দল। পরবর্তিতে ঐক্যফন্ট গঠন করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করতে চায়, তাদেরকে এ দেশ থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। মন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেনের সমালোচনা করে বলেন, বিশ দল পরবর্তীতে ডক্টর কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আপনারা কি বলতে পারেন ডক্টর কামাল আজও কোনো নির্বাচনে জয়লাভ করেছে? যার কোনো যোগ্যতা নেই সে কীভাবে নেতৃত্ব দেবে। আপনারা কি বলতে পারবেন ঐক্যফ্রন্ট জয়লাভ করলে কে প্রধানমন্ত্রী হবে।

বিএনপিকে খুনির দল হিসেবে সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, তারা শুধু ক্ষমতায় থেকেই খুন করেনি, ক্ষমতার বাইরে থেকেও অনেক খুন করেছে। ২০১৩. ‘১৪ ও ২০১৫ সালে অনেক মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে- ইমামকে হত্যা করেছে, মন্দিরে আগুন দিয়েছে, পুরোহিতকে মেরেছে। এরা ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ লোককে শহীদ করেছে, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে, জেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। আর ২১ আগষ্টে গ্রেনেড হামালার মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভী রহমানসহ ২৫ জনকে হত্যা করেছে। এ দলের নেতা ও সাবেক এমপি আহসান  উল্লাহ মাস্টার ও নাটোরের এমপিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করেছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়ার শাসনামলের ৪২ শতাংশ দারিদ্রসীমার দেশকে ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছেন। খালেদা জিয়ার সময় এ দেশের খাদ্য ঘাটতি ছিল ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ করতে সক্ষম হয়েছি। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। বিদ্যুতের অভাবনীয় সাফল্যের কথা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির শাসনামলে বিদ্যুতর হাহাকার ছিল। রমজান মাস এলে দেখা গেছে ইফতারের সময় বিদ্যুত নাই, সেহরীর সময় বিদ্যুত নাই, তারাবীর সময়ে বিদ্যুত নাই। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার সময বিদ্যুদ নাই। কুপির আলোতে পড়াশোনাসহ যাবতীয় কাজ সারতে হয়েছে। বর্তমানে আমাদের সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বিদ্যুত ২০ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। এখন হোমনাতে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। এছাড়াও বয়ষ্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা চালু করেছেন।

সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরী, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একেএম সিদ্দিকুর রহমান আবুল, পৌর মেয়র অ্যাড. মো. নজরুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবুল, যুবলীগ সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, বিআরডিবি চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন সরকার, যুবলীগ নেতা জসীম উদ্দিন লিটন।