ব্রেকিং:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ধর্ম অবমাননা কুবি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ ‘পিডাইয়া লম্বা করে দেওয়ার নির্দেশ’ ফুলবাড়িতে সীমান্তে ঢুকে বিএসএফের গুলিবর্ষণ অভিযানে গিয়ে নারীর মাথায় পিস্তল ধরে, ‘শিশুকে আঘাত’ করে পুলিশ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান রাতেই কুতুবদিয়ায় নোঙর করবে এমভি আব্দুল্লাহ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সিন্ডিকেটের থাবা প্রাণিখাদ্যের বাজারেও কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল, সম্পাদক মুন নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ আজ বিশ্ব মা দিবস চাঁদপুরে মন্ত্রী ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচনায় নাজিম কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঋণ শোধের সক্ষমতা অর্জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুকি চিনের রক্তথাবায় বিপন্ন সবুজ পাহাড় জুলাইয়ে বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
  • শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

কুমিল্লায় জিপির নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে কবে ?

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২১  

মহামারী করোনাকালীন এই সময়ে বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন আয়ের কোন মানুষই খুব বেশি ভাল যে নেই একথা হলফ করেই বলা যায়। এই করোনা সারা বিশে^র ন্যায় আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বর্তমানে করোনার প্রকোপ আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় তা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে দিন এনে দিন খায় এমন নিম্ম আয়ের মানুষ গুলোর বর্তমানে ত্রাহি মধূসুদন অবস্থা। তার উপর লকডাউন তাদের জীবনে মরার উপর খড়ার গা হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

কিন্তু করোনা বলেন, আর লকডাউন বলেন, কোন কিছুই নূন্যতম প্রভাব ফেলছে না পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে। ক্ষুদ্র গণপরিবহনের ক্ষেত্রে এই চাঁদাবাজি বর্তমান সময়ে নিম্ম আয়ের মানুষগুলোকে নাভিশ^াস করে তুলছে। সকল সরকারের আমলেই জিপির নামে এই চাঁদাবাজি ছিল এবং আছে। যখন যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তারা সরকারি রাস্তাকে নিজেদের বাপ দাদার সম্পত্তি মনে করে গেইট পাস (জিপি) নামের চাঁদাবাজি করে থাকে এবং এই চাঁদাবাজি একেবারেই প্রকাশ্য দিবালোকে ছোট ছোট রশিদের মাধ্যমে।


জিপির নামে এই চাঁদাবাজি শুধু কুমিল্লায় না। বলা যায় সারা দেশেই এর বিস্তৃত রয়েছে। তার উপর রয়েছে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোর সরকার নির্ধারিত টোল বা রাজস্ব আদায়।


কুমিল্লা মহানগরসহ জেলার প্রতিটি স্পটে যেখানে সিএনজি বা অটো রিক্সা চলে সেখানেই বীর দর্পে চলে এই চাঁদাবাজি। এ টাকা কখনো সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। সরকারের খাতায়ও এই স্পস্ট গুলো থেকে টাকা আদায়ের কোন বৈধ অনুমতি নেই। যদিও প্রতিটি স্পটের চাঁদাবাজরাই জানান দিয়ে থাকে, এই জিপির টাকা শুধু আমরাই খাই না, উপর মহল পর্যন্ত ভাগ পায়। উপর মহল পর্যন্ত কাদের বুঝানো হয়েছে, উপর মহলের কোন কোন স্তরের পেটে নিম্ম আয়ের মানুষদের (যারা যাকাত-ফেতরা খায়) কষ্টার্জিত এই টাকা যায় তা আমার মত নগণ্য এই সংবাদকর্মীর পক্ষে জানা বুঝা সম্ভব না। আবার বেশি জানতে গেলে নিজের জীবনের ঝুঁকি যে থাকবে না এই নিশ্চয়তাইবা আমাকে কে দিবে? তবে আমাদের দেশে পাবলিক পারশেপসন বলে একটা কথা আছে। পাবলিক পারশেপসন হলো, পুলিশ আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি আজ বলে কুমিল্লার কোথায়ও জিপির নামে অবৈধ এই চাঁদাবাজির কাজটি আর হবে না তাহলে পৃৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই এই অবৈধ আয়ের উৎসটি টিকে থাকার।


গত বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল ২০২১) আমি টমছমব্রিজ থেকে কালিবাজার থেকে আগত কান্দিরপাড়গামী একটি সিএনজিতে উঠি। কোটবাড়ি থেকে আগত এক যাত্রী কুমিল্লা টাওয়ারের সামনে নেমে ৩০ টাকা দিলে চালক জানান, ৩৫ টাকার কম হবে না। দীর্ঘ দিন ধরে কান্দিরপাড় থেকে কোটবাড়ি ৩৫ টাকা নিচ্ছি আপনি কি শহরে নতুন এলেন? এরপর ঐ যাত্রী ৩৫ টাকা দিয়ে বিদায় নিলে আমি সিএনজি চালক কালামের নাম জেনে তাকে জিঞ্জেস করি, কান্দিরপাড় থেকে কোটবাড়ির দূরুত্ব কত। সে জানাল প্রায় ৫ কিলোমিটার। আমি বললাম, ৫ কিলোমিটা রাস্তার জন্য ৩৫ টাকা কেন ? তখন সে জানাল, স্যার, যাত্রী হোক বা না হোক , গাড়ি কান্দিরপাড় আসলে জিপি দিতে হবে ৫০ টাকা, টমছমব্রিজ গেলে দিতে হবে ৫০ টাকা, কোটবাড়ি দিতে হবে ৩০ টাকা আর কালিরবাজার গেলে দিতে হবে আরো ৩০ টাকা। এই ১৬০ টাকা শুধু এই রোডে চালালে প্রতিদিন দিতে হবে। যাত্রী পাইলে যদি অন্য রোডে যাই তাহলে এই ১৬০ টাকার সাথে আবার ঐ রোডের জিপিও যোগ হয়। এরপর রোডে আরো কত কাহিনী আছে।

 সবতো বলা যাবে না। কালাম জানায়, যদি জিপি না নিত তাহলে আমরা কান্দিরপাড় থেকে কোটবাড়ি ২০ টাকা ভাড়া দিলেই চলত। এই জিপি কারা নেয় জানতে চাইলে কালাম জানায়, কারা নেয় এটা সবাই জানে। আমার মুখ থেকে বের করে আমারে বিপদে ফেলে আপনার কি লাভ। জিপি যারা উঠায় তাদের পুুলিশ কিছু বলে না এ কথা জানতে চাইলে এই সিএনজি চালক হেসে বলেন, স্যার এবার গাড়ি থেকে নামেন। সিরিয়াল দিমু। আমনে মনে হয় নতুন সাংবাদিক, কিছু বুঝেন না। পুলিশ চাইলে এমন ব্যাডা কুমিল্লা আছে জিপির নামে আমাদের কাছ হইতে চাঁদা নিত।


প্রতিদিন এই রোডে কত টাকা জিপির নাম করে চাঁদা উঠে জানতে চাইলে এই চালক বলেন, শুধু আমাদের সিএনজি থেকেই উঠে এক লাখ টাকার উপর। তার উপর রয়েছে অটো রিক্সা, বিভিন্ন ট্রাক, ট্রাক্টর, কভার্ডভ্যানসহ নানা গাড়ি। সব মিলিয়ে কত টাকা শুধু মাত্র কান্দিরপাড় টু কোটবাড়ি রোডে উঠে খাতা কলম নিয়ে হিসেব করেন স্যার।


কান্দিরপাড় কথা হয় রমজান নামের আরেক সিএনজি চালকের সাথে। সে চালায় কান্দিপাড় টু পদুয়াবাজার বিশ^রোড। এই রোডে কোন কোন স্থানে জিপির টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে রমজান জানায়,কান্দিরপাড়,টমছমব্রিজ,জাঙ্গালিয়া ও পদুয়াবাজার বিশ^রোড এই চার জায়গায়। কোন স্পটে কত দেন জানতে চাইলে চালাক সিএনজি চালক রমজান জানায়,বুঝেছি আপনি সাংবাদিক । সব কথা আপনাকে বলা যাবে না। পরে আমার গাড়ি চালানই বন্ধ হয়ে যাবে। এ কথা বলেই গাড়ি সামনের দিকে স্ট্যার্ট দেয় রমজান।
আমি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়গণকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, আপনারা দু’জনেই আমাদের এই কুমিল্লায় নতুন। জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাংবাদিকদের সাথে পরিচয়পর্বে উপস্থিত থাকতে পারলেও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরিচয় পর্বের দিন কুমিল্লার বাহিরে থাকায় যেতে পারিনি। স্বল্প সময় অতিবাহিত হলেও এই পর্যন্ত আপনাদের সার্বিক কর্মকান্ডে মোটামোটি সন্তুষ্টু কুমিল্লার মানুষ। আপনাদের দুই জনের প্রতিই কুমিল্লার মানুষ আস্থা এবং বিশ^াস রাখতে চায়। আপনাদের সংবেদনশীল মনের ভিতরই তারা ভরসার জায়গাটি খুঁজে নিতে চায়। জিপির নামে চাঁদাবাজির বিষয়ে পাবলিক পারসেপশন যাই থাকুক না কেন , আপনারা যে এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স তা নগরবাসী তথা জেলাবাসী দৃশ্যমান দেখতে চায়। কথায় নয়, নাগরিকগণ চায় দৃশ্যমান কাজ।

 আপনাদের দুই জনের সাথেই সংবাদ সম্পর্কিত কাজে ফোনে আমার কথা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে আপনাদের কিছু কিছু কাজ প্রশংসিতও হয়েছে। তবে যেহেতু আপনারা দুই জনেই নতুন এসেছেন তাই মূল্যায়ন করার সময় এখনো আসেনি। দয়া করে জিপির নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করুন। এক সাথে জেলার সর্বত্র না পারলে কুমিল্লার নগরী দিয়ে শুরু করুন। কুমিল্লার নগরীর প্রতিটি সিএনজি স্ট্যান্ড থেকেই একেবারেই প্রকাশ্যে জিপির নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নগরীতে বৈধ সিএনজি ষ্টেশন আছে কি না খুঁজে দেখুন। না থাকলে এগুলো অপসারণ করুন। যানজট কমে যাবে। নগর সুন্দর ও সৌন্দর্যময় হয়ে উঠবে। নান্দনিক কুমিল্লা গড়ে উঠলে এই অবদানের ভাগিদার আপনারাও হবেন।


কুমিল্লার সম্মানিত জেলা ও প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতি সর্বশেষ নিবেদন, প্লিজ, জিপির নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করুন। কাল নায় আজ এবং এখনি।