ব্রেকিং:
জিয়াউর রহমান যেভাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে চেয়েছি চলতি হজ মৌসুমে প্রথম বাংলাদেশী হজযাত্রীর মৃত্যু শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ধর্ম অবমাননা কুবি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ ‘পিডাইয়া লম্বা করে দেওয়ার নির্দেশ’ ফুলবাড়িতে সীমান্তে ঢুকে বিএসএফের গুলিবর্ষণ অভিযানে গিয়ে নারীর মাথায় পিস্তল ধরে, ‘শিশুকে আঘাত’ করে পুলিশ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান রাতেই কুতুবদিয়ায় নোঙর করবে এমভি আব্দুল্লাহ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সিন্ডিকেটের থাবা প্রাণিখাদ্যের বাজারেও কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল, সম্পাদক মুন নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ আজ বিশ্ব মা দিবস চাঁদপুরে মন্ত্রী ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচনায় নাজিম কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঋণ শোধের সক্ষমতা অর্জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের
  • রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দাম কমাতে টাস্কফোর্স, ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তির হাওয়া

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২২  

আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দাম কমাতে সরকারী ব্যবস্থা গ্রহণে গঠিত এই টাস্কফোর্স সুপারিশ করবে। বাজারে পণ্যের দাম কমাতে টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে। রোজায় দ্রব্যমূল্য কমাতে তিন মাস আগে প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার। এ কারণে ইফতার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হয়-এমন সব ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ এবং খেজুরের পণ্যের বিপুল পরিমাণ আমদানি ও মজুদ বাড়ানো হয়েছে। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে তিন স্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমানো, শূন্য মার্জিনে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুযোগ, টিসিবির সক্ষমতা চারগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তাসহ নানামুখী উদ্যোগের কারণে রোজার আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এ মুহূর্তে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই দেশে। সরকারী সংস্থা টিসিবিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা এবং মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এককেজি ছোলা। সরবরাহ এত বেশি যে, দুই কেজি করে ছোলা ও পেঁয়াজের পরিবর্তে এখন ৫ কেজি করে দেয়া হচ্ছে এ দুটি ভোগ্যপণ্য। রাজধানীসহ সারাদেশের খুচরা বাজারে পণ্যের দাম এখন নি¤œমুখী। ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কমে গেছে।

ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেক কমে মানভেদে প্রতিকেজি ২৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলার দাম কেজিতে কমেছে প্রায় ১০ টাকা। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। তবে খোলা পামওয়েল ও সয়াবিন কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। চাল, আটা, আলু, মসুর ডাল, চিনি এবং ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মকালীন নতুন শাক-সবজি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর পাশাপাশি শীতকালীন সবজিও রয়েছে। ফলে সবজির দাম বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই। আশা করা হচ্ছে, এবারের রোজায় নতুন করে আর কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। বরং বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কমার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসতে শুরু করায় সাধারণ ভোক্তাদের অস্বস্তি দূর হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান সামনে রেখে এবার আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এ কারণে রমজান মাস যত এগিয়ে আসছে ঠিক সেভাবেই ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। দেশে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনও ভাল। সব মিলিয়ে পণ্য মজুদ করা হলে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনবেন। এটা বুঝতে পেরে তারা এখন ন্যূনতম মুনাফায় পণ্য বিক্রি করছেন। ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে আসছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা এখন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। সরকারী এই সংস্থা প্রথমবারের মতো দেশের ১ কোটি পরিবারের হাতে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। রমজানের আগে ও মাঝে দুবার করে তারা পণ্য পাবেন। এতে দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে টিসিবি চারগুণ বেশি পরিমাণ পণ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। সরকারী এই উদ্যোগের সুফল এখন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর চাপ কমে গেছে। এ কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসছে।

ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে কাজ শুরু করবে টাস্কফোর্স ॥ ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে ১৭ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স। ইতোমধ্যে প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর আগে রবিবার গভীর রাতে ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গঠিত কমিটিতে বাকি সদস্যরা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, কৃষি সচিব, খাদ্য সচিব, শিল্প সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক সচিব, ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, টিসিবির চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব। রোজা সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল এবং ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে একটি জরুরী বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রি পর্যায়ে থাকা ৩৫ শতাংশ ভ্যাটের মধ্যে ৩০ শতাংশ উঠিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে সারা দেশে দ্রব্যমূল্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

টাস্কফোর্সের দায়িত্ব ও কর্তব্য ॥ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিবে এই টাস্কফোর্স। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বাজার দর ও আমদানি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ কোন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বা সরবরাহ চেইনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ‘দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল’ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পণ্য উৎপাদন, পরিশোধন ও আমদানি হতে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রয় পর্যন্ত সার্বিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া। নিত্যপণ্যের সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া এবং উল্লেখিত কার্যাবলীর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বা আনুষঙ্গিক অন্য সব প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা। এছাড়া গঠিত কমিটি প্রতি মাসে অন্তত একবার সভা করবেন। প্রয়োজনে উল্লেখিত কার্যাবলী সম্পাদনে অন্য সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবেন। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নুরুল হক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক গঠিত টাস্কফোর্স কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দফতরের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি জরুরী ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। গঠিত টাস্কফোর্স বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাজারে এখন কমতে শুরু করেছে ভোগ্যপণ্যের দাম। আশা করছি রোজার মাঝে জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, টিসিবির মাধ্যমে দেশের ১ কোটি পরিবারের হাতে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সরকারী এই উদ্যোগের ফলে বাজারে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, রোজা সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। দেশে ভোগ্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই। তিনি বলেন, টাস্কফোর্স পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।

রমজান মাসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখার আবেদন ॥ রোজার সময় বেশি চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের একটি হচ্ছে পেঁয়াজ। মার্চের শুরুতে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেলে বাজার সামাল দিতে ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সেই অনুমতির সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার। তবে অতিপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি আরও একমাস আমদানি অব্যাহত রাখতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতি ইস্যু কার্যক্রমের সময়সীমা ২৯ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। আমদানির সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হলে বিদ্যমান সুযোগের আওতায় পেঁয়াজ আমদানিকারকরা আগামী ঈদ-উল- ফিতর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজের আইপি ইস্যু কার্যক্রম চালাতে পারবেন। একই সঙ্গে এলসি খুলতে পারবেন। এতে রমজানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল থাকবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও যেসব উদ্যোগ ॥ রমজান সামনে রেখে দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে চারগুণেরও বেশি। টিসিবির মাধ্যমে রোজার আগে ও মাঝে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। তবে ব্যবসায়ীদের এই অপকর্ম রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি। ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুদের বড় বড় ভা-ার ধরা পড়ছে অভিযানের মুখে। এ পরিস্থিতি বাজারে দ্রুত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগ রয়েছে প্রশাসনের। সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল ও চিনির শুল্ক প্রত্যাহার, ভারত থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা, এলসি শূন্য মার্জিনের আমদানির সুযোগ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম মাঠে নামানো, মজুদদারদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি ও বাজার পর্যবেক্ষণ, ফেরি পারাপারে পণ্য পরিবহনের অগ্রাধিকার ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সহায়তা, পণ্য পরিবহনের সময় রাস্তায় কিংবা বাজার চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মতো পদক্ষেপ রয়েছে। এর পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। রোজা সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনতে আরও যদি কোন পদক্ষেপ নিতে হয় সে বিষয়েও তাৎক্ষণিক যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রশাসন। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা এবং ভর্তুকির মূল্যে খাদ্য সহায়তার বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। আর পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকিতে খাদ্য সহায়তা ॥ সারাদেশে টিসিবির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে আসন্ন রমজান মাসে সারাদেশের স্বল্প আয়ের গরিব পরিবারগুলোকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। খাদ্য সহায়তার এই কর্মসূচীর আওতায় একজন ভোক্তা স্বল্পমূল্যে পাচ্ছেন সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুরের মতো পণ্যসামগ্রী। সুনির্দিষ্ট কিংবা টার্গেট পরিবারের কাছে এ সহায়তা পৌঁছাতে দেয়া হবে ডিজিটাল ফ্যামিলি কার্ড। ইতোমধ্যে এক কোটি পরিবারের তালিকা সংরক্ষণ করা হয়েছে। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা পাবেন। এ থেকে উপকৃত হবেন দেশের ৫ কোটি মানুষ। এতে করে ভোগ্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হয়, এমনসব পণ্যের দাম বরাবরই রোজার আগে বেড়ে যায়। আর এর পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বড় কারসাজি থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহের এই উদ্যোগের ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সরকার। দ্রবমূল্য নিয়ে বন্ধ হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। সারাদেশের মতো এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবং বরিশাল বিভাগেও ফ্যামিলি কার্ড করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

বাজারে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে ॥ বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো ও অবৈধভাবে মজুদ করার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে তারা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের তালিকা করেছেন। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামে নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতিটি পাইকারি বাজারে সাদা পোশাকে নজরদারি করা হচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে অধিক মুনাফার আশায় বাজারে সঙ্কট তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে এশাধিকবার বৈঠকও করেছেন।

এস আলম, টিকে গ্রুপ ও রূপচাঁদাকে তলব ॥ এবার দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর। এরই মিল পর্যায়ে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়ে সরবরাহকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের তলব করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল (রূপচাঁদা ব্র্যান্ড)। পাশাপাশি বাংলাদেশ এডিবল অয়েল মিলে ভোক্তা অধিদফতরের টিম নিয়োগ করা হয়েছে।