ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বুদ্ধিমান প্রাণী কালোমুখ হনুমান

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

প্রজাতিগত দিক দিয়ে হনুমানের মধ্যে কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে। এই প্রজাতি আদিম যুগ থেকে মনুষ্য জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এদের আচার-আচরণ খাদ্যাভ্যাস, যৌন মিলন, সন্তান জন্ম সবই মনুষ্য জীবনের কাছাকাছি। মুখপোড়া হনুমান, চশপড়া হনুমান, কালোমুখ হনুমান আমাদের দেশে দেখা যায়। কালোমুখ হনুমানের বৈজ্ঞানিক নাম Semnopithecus entellus এবং ইংরেজি নাম Hanuman Langur.

দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে একমাত্র কালোমুখ হনুমান দিনের বেশির ভাগ সময় মাটিতে কাটায়। রাত ছাড়া তেমন একটা গাছে গাছে চড়ে না।

প্রায় ২০০ বছর ধরে যশোরের কেশবপুর এবং মনিরামপুরে বসবাস করছে এই কালো মুখ হনুমান। এই হনুমান সাধারণত লম্বায় ২৪ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ১২ ইঞ্চি থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।  এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর। শারীরিক ওজন ৫-২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুখের ন্যায় হাত ও পায়ের পাতা কালো। চলাফেরা করার সময় এরা লেজ উঁচু করে চলে। তবে গাছে বসলে তারা লেজ ঝুলিয়ে দেয়। কলা, পেঁপে, আম, আমড়া, সফেদা, জাম্বুরা, মূলা, বেগুন ইত্যাদি ফলমূল, শাক-সবজি গাছের মুকুল, কচিপাতা, বাদাম এবং বিস্কুট এদের প্রিয় খাদ্য।
 

সাধারণত সকাল ও বিকেলে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দুপুরে বিশ্রাম নেয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেই নিজেদের নির্দিষ্ট গাছে চলে যায় ও রাত যাপন করে। দিনের অনেকটা সময় একে অন্যের দেহ চুলকিয়ে সময় কাটায়। জানুয়ারি-মে প্রজননকাল। স্ত্রী ১৮০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বা দুটি বাচ্চা প্রসব। বাচ্চারা ১৩ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। পুরুষ ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছরে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়।

কালোমুখ হনুমান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে যশোরের কেশবপুরে মনিরামপুরে। দেশের অন্য কোথাও খুব একটা এদের দেখা যায় না। দেশে প্রতিটি প্রাণির মতো হনুমানও যাচ্ছে বিপন্নের দিকে। মূলত মানুষের অত্যাচার, আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব বিপন্ন হয়ার কারণ।

সম্প্রতি একটি কালো হনুমানের বাচ্চাকে মানুষ মারধোর করায় কেশবপুর থানায় গিয়ে হাজির হয়ে সারাদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এই প্রজাতি। জানান দিয়েছে তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং এই ঘটনার জেরে জানা গেছে এর আগেও এরা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় হাজির হয়েছে। গভীর জঙ্গলের এই প্রাণী বাসস্থানের অভাবে বর্তনামে দুর্গম জঙ্গলের বাইরে এসে অসহায় জীবনযাপন করছে।
 

মানুষের কাছাকাছি থাকায় যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুরের এই কালো মুখ হনুমানের বর্তমানে তেমন নেই খাবার, নেই আশ্রয়, নানা কারণে তারা হারাচ্ছে প্রজনন ক্ষমতা যা তাদের ঠিকে থাকার জন্য হুমকি। প্রজনন আর গর্ভকালীন নিরাপত্তার জন্য নেই প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল।

ভারতে প্রচুর পরিমাণ কালোমুখ হনুমান বসবাস করে এবং প্রায়ই তারা এমন কিছু কাজ করে যা অনেকটা মানুষের মতো এবং অন্য প্রাণীরা তা করতে পারে না। কথা বলতে না পারলেও এসব হনুমানের অনুভূতি শক্তি প্রায় মানুষের কাছাকাছি।

স্পর্শকাতর প্রাণী এই কালোমুখ হনুমান। তাদেরও রয়েছে রাগ-অভিমান কিংবা অভিযোগ।

কীভাবে তারা থানা যে সাহায্য কেন্দ্র বুঝল সে বিষয়ে ব্যাখা দিয়েছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

কালোমুখ হনুমান নিয়ে গবেষণা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদি হাসান। তিনি জানান, হনুমান এবং মানুষ একই বর্গের প্রাণি হওয়ার কারণে মানুষের সঙ্গে তার আচরণ এবং বুদ্ধিগত মিল আছে। 

তিনি জানান, দেশের আরো কয়েকটি জায়গায় এই প্রাণির দেখা মিলে তবে যশোরে বেশ কিছু হনুমান বসবাস করছে প্রায় ২০০ বছর ধরে। তবে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। তিনি জানান, আজ থেকে ৪ বছর আগে প্রায় ২৫০টি হনুমান এখানে দেখেছিলাম কিন্তু সম্প্রতি এই এলাকায় গিয়ে ৮টি দলে ১৫০টির মতো হনুমান দেখেছি।

কালো মুখ হনুমান কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে এ গবেষক জানান, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খাবারের যে ব্যবস্থা সরকার করেছে তা ঠিক মতো দেয়া হয় না। খাবারের অভাবে তারা প্রায়ই মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ে যার কারণে মানুষের অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে। এই দিক দিয়ে যখন কোনো ফলের বা কলার গাড়ি যায় খাবারের আশায় হনুমান সে গাড়িতে উঠে পরে। পরে সে গাড়িতে করে দূরের কোথাও চলে যায়।

এ দিকে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফ জানান, এই এলাকায় প্রচুর কালো মুখ হনুমান আছে যা দেশের অন্য কোথাও নেই। এরা মানুষের সঙ্গে মিশতে মিশতে মানুষের কাছাকাছি থেকে অনেক কিছু আয়ত্ত করে ফেলছে। যদিও এদের মাঝে এই গুণ অন্যান্য দেশেও দেখা যায়। এরা খুবই বুদ্ধিমান। যশোরে এগুলো মানুষের খুব কাছেই থাকে তাই হয়তো তারা বুঝতে পেরেছে পুলিশ মানুষের সমস্যার সমাধান করে দেয় এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করে যার কারণে তাদের বাচ্চাকে মারধোর করলে তারা থানায় যায়। আরো চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে- থানার ওসি যখন ইশারা দিয়ে বোঝালেন তিনি বিষয়টা দেখবেন তখন তারা থানা থেকে চলে আসল।
 

জানা যায়, যশোরে বেশ কিছু হনুমান থাকলেও অনান্য জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গুটি কয়েক। বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান আজ মানুষের অনীহার কারণে বিলুপ্তির পথে। এদের সংরক্ষণে গৃহীত হচ্ছে না তেমন কোনো সরকারি উদ্যোগ। প্রকট খাদ্যভাব, অভয়ারণ্যের অভাবে মিলনের অন্তরায় ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কেশবপুরের হনুমানের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সরকার থেকে কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করলেও তা অপ্রতুল।

সরকার থেকে তাদের জন্য প্রতিদিন যে খাবার বরাদ্দ রয়েছে সেটাও তাদের ঠিকমতো দেয়া হয় না এমনটি অভিযোগ রয়েছে। যদিও দেয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।

কেশবপুর উপজেলা পরিষদের সীমানা দেয়াল, কেশবপুরের পশু হাসপাতাল, রামচন্দ্রপুর, বক্ষকাটি, বালিয়াডাঙ্গা, মধ্যকূল ও ভোগতী গ্রামে এদের বিচরণ বেশি। এরা সাধারণত একজন পুরুষ হনুমানের নেতৃত্বে দলবদ্ধভাবে চলাচল করে। প্রতিটি দলে ১০/১৫ থেকে ৩০/৪০টি হনুমান থাকে। এদের প্রতিটি সদস্য দলপতির নির্দেশ মেনে চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলপতি অন্য কোনো পুরুষ সদস্যকে তার দলে সহ্য করে না। যদি কোনো পুরুষ হনুমান দলে ডুকে পড়ে এবং দলপতি তা টের পেলে তাকে হত্যা করে। তাই প্রসূতি তার পুরুষ সন্তানটিকে নিয়ে দলপতির নাগালের বাইরে পালিয়ে বেড়ায়, যতদিন না সে দলপতির আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করে। এরা খাদ্য অন্বেষণে সারাদিন চলাফেরা করে। এরা সচরাচর উঁচু গাছপালা পরিবেষ্টিত বনে, গাছের মগডালে নিরাপদ আশ্রয়ে রাত্রিযাপন করে।