ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সরকারি জমিতে বস্তি, নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৯  

কর্মসংস্থান ও নগর সুবিধা পেতে প্রতিদিনই রাজধানীমুখি হচ্ছে মানুষ। আর এই অতিরিক্ত মানুষের অনেকেরই ঠাঁই হয় বস্তিতে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের সাড়ে তিন হাজার বস্তিতে প্রায় দশ লাখ মানুষ বসবাস করে। এসব বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে কোটিপতি হয়েছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ি, ঢাকা শহরের বস্তিতে মোট খানা বা ঘর বা পরিবার রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩০টি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বস্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯টি, মোট খানা, ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮০টি ও জনসংখ্যা ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৯ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বস্তির সংখ্যা ১ হাজার ৭৫৫টি, খানার সংখ্যা ৪০ হাজার ৫৯১টি ও জনসংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬ জন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব বস্তিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারীসহ মাদক ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর কল্যাণপুর বস্তি: গণপূর্ত বিভাগের জমিতে এই বস্তি গড়ে উঠেছে কয়েক দশক ধরে। এখানে ঘর আছে অন্তত চার হাজার। আর বসবাস করে লক্ষাধিক মানুষ। অবৈধ গ্যাস, বিদুৎ, পানিসহ সব সুবিধাই আছে এখানে। ব্যবসাও রমরমা। নিয়ন্ত্রণকারীদের মাসে আয় হয় কয়েক কোটি টাকা।

জানা যায়, কল্যাণপুর বস্তিতে ঘর আছে পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী, দলবাজ, পাতি মাস্তান আর মাদক ব্যবসায়িদের। কেউ ১০টি ঘরের মালিক। কারো আছে শতাধিক ঘর।

বস্তিতে ঢুকতেই দেখা যায় বেশ কিছু আধাপাকা ঘর। বস্তিবাসীর তথ্য মতে ঘরগুলোর মালিক দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের একজন মিরপুর থানার সাবেক ওসি আব্দুর রব। আর অন্যজন ভাটারা থানার ওসি এবি সিদ্দিক।

জানতে চাইলে মিরপুর থানার সাবেক ওসি আব্দুর রবের ম্যানেজার ঘরগুলো নিজের বলে দাবি করেন। আর আব্দুর রবের বোনের কিছু ঘর আছে এমনটাই জানান। আব্দুর রবের মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান।

ভাটারা থানার ওসি এবি সিদ্দিকের ঘরগুলোর জন্য ম্যানেজার রাখা হয়েছে। তিনিও একই কথা বলেন, জানান ওসির মাত্র দুই-তিনটি ঘর রয়েছে বাকীগুলো তার নিজের।

এ বিষয়ে জানতে ওসিকে ফোন দিলে তিনি জানান, গরীব মানুষদের থাকার জন্য ঘরগুলো দিয়েছেন তিনি। এ বস্তিতে আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসারের ঘর থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

৪ নম্বর পোড়া বস্তি : কথিত মাদক ব্যবসায়ি লাদেন বাচ্চুর অন্তত ৭০টি ঘর রয়েছে এখানে। পুকুর ভরাট করে তিনি এসব ঘর তুলেছেন। পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই ভরাট করেছে তাই তিনিও করেছেন। আর মাদক ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এখন আর তিনি এ কাজ করেন না।

এই বস্তিতে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারি মজিবরের রয়েছে ৬০ থেকে ৭০টি ঘর। সিটি কর্পোরেশনের প্রভাব খাটিয়ে প্রতি মাসে এসব ঘর থেকে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন মজিবর। তবে তিনি ৩০টি ঘরের মালিক বলে স্বীকার করেন।

বস্তিতে রিণা নামের দুই প্রভাবশালীর অনেক ঘর থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষেপে যান তারা। একই বস্তিতে শতাধিক ঘর রয়েছে এক কথিত নেতার। এছাড়াও প্রবাভশালী অনেক নেতাই এ বস্তির টাকায় নিজের পকেট ভারি করছেন।

মিরপুরের চলন্তিকা বস্তি : মাত্র কয়েকদিন আগে ভয়াবহ আগুনে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখানে ৪৫ বছর ধরে বাস করছেন মকবুল নামে এক বৃদ্ধ। তার মতে অনেক মানুষ এখানে যুগ যুগ পার করেছেন। এখন বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফকির কবির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি এক সময় বস্তিবাসি হলেও এখন রূপনগরে একাধিক বাড়ির মালিক তিনি।

তার বাড়িটির কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়েছে ঝিলের জায়গা দখল করে। বাড়ির পিছনে এখনো কয়েকশ ঘর তুলে গ্যাস, বিদুৎ, পানি দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। থানার পাশে একটি, ৫ নম্বর রোডে একটি বাড়ি এবং ওয়াসার পাশে দোকান ও প্লট রয়েছে ফকির কবির আহমেদের। যদিও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ডিস বাবু, বস্তিতে দুই শতাধিক ঘর তার দখলে। প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকার আয় দিয়ে বস্তির একটু দূরে ৬ তলা বাড়ির মালিক এক সময়ের এই বস্তির-বাসিন্দা। তিনি জানান, শুধু আমি না, অনেক রাঘব বোয়াল বস্তি ব্যবসায় জড়িত।

খলিলুর রহমান ওরফে বাইট্টা খলিল। তিনিও বস্তির দুই শতাধিক ঘর নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই টাকায় গড়ে তুলেছেন চারতলা বাড়ি। একই রাস্তায় বাইট্টা খলিলের ভাই হেলাল মিয়ারও একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। দুই ভাই মিলে তিন শতাধিক ঘর নিয়ন্ত্রণ করতেন এই পোড়া বস্তিতে।

বস্তির শতাধিক ঘর দখল করে ছিলেন আক্তার মিয়া। প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আসতো এখান থেকে। সে টাকা দিয়ে তিনিও রাতারাতি ধনকুবের হয়েছেন। এছাড়াও বস্তির টাকায় যারা গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো দারোগা তুহিন। তার রয়েছে ৬১টি ঘর। সোহেল নামের এক ব্যক্তির ১৫০টি, জুট ব্যবসায়ি মানিকের শতাধিক ও ডিস রকির দখলে ২৫০টি বস্তিঘর রয়েছে। প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আসে ডিস রকির। এ টাকা দিয়ে তিনিও গড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি।

মিরপুর রূপনগরে যে বস্তিগুলো রয়েছে সেখান থেকে মাসে অন্তত দুই কোটি টাকা আয় হয়। এর অধিকাংশ যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটে। স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ড কমিশনার রজব আলী নিজ বাড়ির সামনেই গড়ে তুলেছেন বস্তি। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা তার পকেটে যায়। অন্তত শত কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা বাড়ি তার অবৈধ আয়ের স্বাক্ষী।

রাজধানীর করাইল বস্তি। এখানে অন্তত দশ হাজার ঘর রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এ বস্তিতে। রয়েছে অবৈধ্য গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির লাইন। প্রতি মাসে কোটি টাকা তুলে ভাগ বণ্টন করে নেয় স্থানীয় ক্ষমতাশালীরা।

এখানে গ্যাস লাইনের অবৈধ সংযোগ দেন কয়েকজন। মমিন, মনজুরুল হক, মোস্তফা, সোবহান মাওলানা, রফিকসহ কয়েকজন। মমিনের জন্মও এ বস্তিতে। গত তিন দশক এখানে থেকেছেন এক সময়ের বিএনপি নেতা মমিন। নিজের দখলে রেখেছেন প্রায় ৫০টি বস্তিঘর। এখান থেকে আসে কয়েক লাখ টাকা। এছাড়া অবৈধ গ্যাসের লাইন আর ডিস ব্যবসা করে গুলশানে কিনেছেন ফ্ল্যাট।

সোবহান মাওলানার দখলে শতাধিক ঘর। বস্তির অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত মনজুর। যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাকে।

খিলগাঁয়ে ঝিল ও জমি দখল করে তৈরি হয়েছে শত শত ঘর। ব্যতিক্রম নয়, রেলওয়ে কলোনিও। অন্যদিকে শাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি। নাম কলোনি হলেও ভেতরে শত শত বস্তি ঘর। রেলের ভবনগুলোর সামনে খোলা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বস্তি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব বস্তির টাকায় বিত্তশালী হয়েছেন।

রেল কর্মচারি রুস্তুম একটি ঘর পেয়েছেন সরকারি ভাবে। সেই ঘরের চারদিকে অন্তত ১২টি ঘর করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। একই অবস্থা মোশারফেরও। তিনিও সরকারিভাবে একটি ঘর পেয়েছেন। অতিরিক্ত ঘর বানানো হয়েছে দশটি। এসব ঘরে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে গ্যাস ও বিদুতের সংযোগ।

শুধু এ দুজনই নয়, কলোনিতে যারাই ঘর পেয়েছেন, তারাই বস্তি বানিয়েছেন। তবে, কর্মচারির বাইরে স্থানীয় প্রভাবশালীরাও রেলের জমি দখল করে বস্তি বানিয়েছেন।

শরীফ আহমেদ। তিনি কলোনিতে বেশ কয়েকটি ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া বড় একটি জায়গা দখল করে রিকশার গ্যারেজ বানিয়েছেন। সরকারি জায়গা দখল করে এগুলো করা ঠিক কী-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বাধ্য না।

এবার খিলগাঁও চৌধুরী পাড়া মালেক, খালেক ও শহীদের বস্তির দিকে যাওয়া যাক। খিলগাওয়ে সরকারি জমি দখল করে শহীদের নামে বস্তি করা হয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে কয়েকশ’ ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন তারা।

বস্তিবাসী জানান, নোংরা পরিবেশ বস্তিতে। কোন সুযোগ সুবিধা ছাড়াই দুই থেকে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। বস্তির বেশীর ভাগ ঘরই তিন ভাইয়ের দখলে। এখানে শহীদের বাড়ি থেকে অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেয়া হয়েছে।

প্রতি মাসে, বস্তির আয় দিয়ে তাদের আয়েসী জীবন। তৈরি করেছেন পাঁচতলা বাড়ি। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য শহীদ, মালেক, খালেক ও রহমানকে পাওয়া যায়নি। তবে শহীদের মা দাবি করেন জমির মালিক নাকি তার শাশুরি।

এসব বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম জানান, সরকারি জায়গা দখলের দিন শেষ। শিগগির দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, দখল, মারামারি, মাদকের কারাবরসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম হয় বস্তিতে। তাই নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য সরকারি উদ্যোগে গৃহ নির্মাণ করা হবে।