হঠাৎ বৃষ্টিতে আলু চাষিদের মাথায় হাত

চাঁদপুরে অসময়ের বৃষ্টিতে আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে থেকে কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে অধিকাংশ ফসলি জমির বীজতলায় পানি জমে গেছে। জমিতে হেলে পড়েছে সরিষার গাছ। তাছাড়া নিচু জমির শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তবে পরপর দুই দফার বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে আলু চাষিদের।

চাঁদপুর কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, লাভজনক ফসল এবং উপযোগী মাটি হওয়ায় নদীবিধৌত চাঁদপুর জেলায় আলু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে দেশে আলু চাষে চাঁদপুর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে চাঁদপুরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বিজতলায় পানি জমে থাকায় আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে।

অন্যন্য বছরের ন্যায় এবারো চাঁদপুরে কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে আলু চাষ করেছে। আর মাত্র অল্প কয়েক দিন পরেই কৃষকদের সেই কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে অসময়ের বৃষ্টি সেই স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে রূপ নিচ্ছে। এভাবে বৃষ্টির পানিতে বিজতলা দুই-তিনদিন ডুবে থাকলে সব আলু নষ্ট হয়ে যাবে। 

 

চাঁদপুরে অসময়ের বৃষ্টিতে আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

সদর উপজেলার শাহমামুদপুর ইউপির কৃষ্ণপুর ব্লকের কৃষক জামাল গাজী ও খোকন গাজী জানান, গত ৩০ নভেম্বর তারা ১১২ শতক  জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঘুর্ণিঝড়ে আলুর বিজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। তারপর ধার-দেনা করে পুনরায় আলু বিজ লাগান। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে বৃষ্টিতে আলুর বিজতলায় পানি জমে গেছে। এমনিতে আলুর দাম কম, তারপর হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুর বিজতলার ক্ষতি হলো। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে দু-তিনদিন আলু পানিতে ডুবে থাকলে সব আলু নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে বিপুল ক্ষতিতে পড়তে হবে তাদের। 

 

চাঁদপুরে অসময়ের বৃষ্টিতে আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

একই ইউপির পাশের গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, লাভ-লোকসান যা-ই হোক আলুর আবাদ তাদের প্রধান ফসল। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারো তিনি ৩৩ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। আর কয়েক দিন পর আলু উত্তোলন করার কথা। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বেকায়দায় পড়েছেন তারা।

সদর উপজেলার হানারচর ইউপির কৃষক বিলাল হোসেন বলেন, ‘এই বছর অনেক আশা নিয়া আলু ক্ষেত করলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আলু একদম শেষ। এই ক্ষতি কেমনে পুষিয়ে উঠবো তা ভাবতে পারছি না। এ অবস্থায় তাদের দাবি, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকার তাদের প্রণোদনা বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা করলে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

 

চাঁদপুরে অসময়ের বৃষ্টিতে আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নরেশ চন্দ্র দাস জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এরইমধ্যে ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। তবে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে দুই দফায় বৃষ্টিপাতের কারণে আলু উৎপাদন কিছুটা বিঘ্ন হবার আসংখ্য লক্ষ্য কা যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপরে আমাদের মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ চলছে। অচিরেই আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ করা হবে এবং ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে।

তিনি আরো জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব। এই খাতে সরকার নানাভাবে কৃষকদেরকে সহযোগীতা করছে। বৃষ্টিতে কৃষকদের ক্ষতি পূষিয়ে দিতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি কোনো সহায়তা পেলে তা আমরা যথা সময়ে পৌঁছে দিবো।

উল্লেখ্য, চাঁদপুরে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ লাখ মেট্রিকটন। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩৫ হাজার ৮৮ মেট্রিকটন। মতলব উত্তরে ৬২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১২ হাজার ৭৯৭ মেট্রিকটন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৭৬ হাজার ৩৬৮ মেট্রিকটন। 

হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৭২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১৪ হাজার ৮৬১ মেট্রিকটন। শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৪১২ মেট্রিকটন। কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৫১ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন। 

ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১ হাজার ৮৫৭ মেট্রিকটন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩ হাজার ৯৬ মেট্রিকটন ।

চাঁদপুরে ১২ টি হিমাগারে ৭০ হাজার মেট্রিকটন আলু সংরক্ষণ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বাকি আলু হিমাগারের বাইরে থাকে। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ আলু উৎপাদন মৌসুম থেকে বিক্রি হয়ে আসছে এবং বাকি আলু কৃষকগণ কৃষিবিভাগের পরামর্শে কৃত্রিমভাবে মাচায় সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে কৃষিদফতর জানান ।