ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২০  

কুমিল্লার মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিলীন হতে চলছে উপজেলার তিন ফসলি জমি। উপজেলার ২২ ইউনিয়নে প্রায় তিন শতাধিক ড্রেজার প্রতিনিয়ত কৃষি ও সরকারী খাল-বিল থেকে মাটি কাটছে। অপর পক্ষে এ মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে। নিরুপায় হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০জন জমির মালিক ইউএনও এবং এসিল্যান্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে মাঠে গেলে ব্যাবসায়ীরা ড্রেজার চালানো কয়েক ঘন্টা বন্ধ রাখলেও প্রশাসন চলে গেলে আবার পুনরায় শুরু করে অবৈধ ড্রেজিংয়ের মহোৎসব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখলা, কালারাইয়া, দীঘিরপাড়, বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের খামার গ্রাম, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের ব্রা?হ্মন চাপিতলা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া, যাত্রাপুর, রঘুরামপুর, ভবানীপুর, কাশিপুর, সিংহারিয়া, টনকি ইউনিয়নের টনকি, বাইড়া, চাপিতলা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, চাপিতলা, পুস্করিনীর পাড়, শ্রীকাইল ইউনিয়নের রোয়াচালা, সোনাকান্দা, পেন্নই, কামাল্লা ইউনিয়নের কামাল্লা, নোয়াগাঁও, নেয়ামতপুর, আসনপুর, কামারচর, নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের রামধনীমুড়া, মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের ধনীরামপুর, ইউসুফ নগর, নেয়ামতপুর, পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের হাটাশ, খৈয়াখালী, রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৈজুরীসহ উপজেলার ৩১২টি গ্রামের মধ্যে প্রতিটি গ্রামের কোন না কোন স্থানে ড্রেজার মেশিন চলে। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাটি পকুর ভরাট ও ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুরাদনগর উপজেলা ৫৬ বর্গকিলো মিটারের মধ্যে আবদ্ধ। এরই মধ্যে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ৭২টি ইটভাটা রয়েছে। গ্যাস ফিল্ড রয়েছে ৪টি। গ্যাস উত্তোলনে মাটির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। অপর দিকে ইটভাটাগুলো মাটির উর্বরের অংশ কেটে নিচ্ছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে ৫০/৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালি উত্তোলনের কারণে আশ-পাশের তিন ফসলের জমিগুলো কূপে পরিণত হচ্ছে।  

ক্ষতিগ্রস্ত ধনপতিখোলা গ্রামের কৃষক হাজী আব্দুর রহমান খান, ফিরোজ মিয়া, ওমর আলী, হোসেন মিয়া, মহিউদ্দিন খান, কালিপদ সাহা, হারুণ মিয়া ও হাবিব মিয়া বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত: ৯ জন ব্যক্তি বলেন, প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই কিভাবে যেন তারা টের পায়। মেশিনপত্র বন্ধ করে চলে যায়। পরক্ষণে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা আবারো মাটি কাটার উৎসবে মেতে ওঠে। পুলিশ চাইলে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু ড্রেজার ব্যবসায়ী ও পুলিশের মধ্যে চোর-পুলিশ খেলাটা সকলের মধ্যে সন্দেহের কারণ। কেননা পুলিশ আসার আগেই ড্রেজার ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট তাদের দু:খের কথা বলতে গিয়ে অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

তারা আরো বলেন, খামার গ্রামের সৌকত আলী কালারাইয়া মৌজায় ৪ বিঘা জমি নিয়ে ড্রেজার বসিয়ে গভীর ভাবে মাটি কাটার কারণে তাদের তিন ফসলী জমি ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। ৪ বিঘা জমি এখন ১০ বিঘায় পরিনত হয়েছে। কেউ ইচ্ছা করে জমি দিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কমমূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তাদের সিন্ডিকেটের কাছে। সিন্ডিকেট জমির মালিকদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখে।

বিষয়টির ব্যাপারে অভিযুক্ত অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী সৈকত আলীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার বন্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ সোহাগ বলেন, আমি উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপসয়েল্ট (উর্ভর মাটির উপরের অংশ) ব্যাপক হারে কেটে নিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে চাষাবাদের জন্য একখন্ড জমি থাকবে না। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কড়া ভাবে নিষেধাজ্ঞা আছে জমির মাটি কেটে নিয়ে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ২৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে বেশির ভাগই দুই থেকে তিন ফসলি জমি। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের এক প্রান্ত থেতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অনাবাদী রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ড্রেজার বন্ধে সব রকমের প্রদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।