আল জাজিরার চার জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা!

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটির কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, হাঙ্গেরি প্রবাসী শায়ের জুলকারনাইন সামিসহ মোট চার জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদনটি করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক।

এ মামলার আদেশের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। উল্লেখ্য, মামলার আবেদনে অভিযুক্তরা হলেন বার্গম্যান, সামি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের সম্পাদক তাসনিম খলিল এবং আল জাজিরা টেলিভিশনের ডাইরেক্টর জেনারেল মোস্তফা স্যোউয়াগ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের সুনামহানি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অপপ্রচার চালিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধে লিপ্ত রয়েছেন। আসামিরা যৌথভাবে তাদের অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের নিয়ে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ নামে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী একটি প্রতিবেদন প্রচার করেন। প্রতিবেদনটি তারা ইউটিউবেও প্রচার করেন, যা পরের  দিন কিছু কিছু মুদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকাতেও  প্রচারিত হয়েছে।

বিতর্কিত প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য ইসরায়েল থেকে কিছু সামরিক ব্যবহার্য গোয়েন্দা সরঞ্জাম কেনার ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এই ক্রয়ের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে প্রচারণা চালানো হয়েছে যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর লোক এবং তার মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশে গণবিরোধী ও দুর্নীতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, আসামিরা প্রতিবেদনে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান এবং তথ্য-উপাত্ত বা দলিলাদি উপস্থাপন না করেই ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি ও সাক্ষাৎকারের ছবি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও তারা কণ্ঠস্বর সম্পাদনা করে একটি কাল্পনিক, ভুয়া, মিথ্যা ও সাজানো কল্পিত তথ্যচিত্রের প্রতিবেদন তৈরি করে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে আল-জাজিরা টেলিভিশনসহ ইউটিউবের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে অপপ্রচার চালিয়েছেন। বিষয়টি দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সরকার ও রাষ্ট্রের সুনাম ও মর্যাদার হানি ঘটিয়েছে।

এজহারে আরো বলা হয়, গত ২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র এত্তেফান দুজারিচ বলেছেন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখিত ধরনের সামরিক গোয়েন্দা নজরদারিমূক কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করে না। উল্লেখ্য, আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রমূলক অবৈধ কার্যক্রমের দ্বারা দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করেছে, যে ষড়যন্ত্র এখনো চলমান।

অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ আনা হচ্ছে। আসামিরা  পরস্পর যোগসাজশে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের সুনামহানি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অপপ্রচার চালিয়েছে। মামলাটির এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। 

এদিকে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় বাংলাদেশকে নিয়ে করা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি গত বুধবার ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অবিলম্বে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।