ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

কুমিল্লা ইপিজেডের বিষাক্ত তরল বর্জ্য: ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ, মরছে মাছ

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

প্রতিষ্ঠার প্রায় ২১ বছর পরও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কুমিল্লার তরল ও বিষাক্ত বর্জ্যের দায় নিতে রাজি নয় কেউই। বেপজা দায় চাপাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওপর। সিটি করপোরেশন দায় চাপাচ্ছে বেপজার ওপর। এ ইপিজেডে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে পরিশোধন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা বর্জ্য পরিশোধনাগারটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের অভিযোগ, সেখানকার বিষাক্ত কেমিক্যাল, তরল বর্জ্য, শ্রমিকদের মলমূত্র ও দূষিত কালো রঙের পানি বাইরে প্রবাহিত হয়ে আশপাশের নিচু জমি, খাল-বিল, নদী-নালার পানিতে মিশছে। এতে মরে যাচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ। বর্জ্যের কালো পানি থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। সমস্যা সমাধানে বেপজা কর্তৃপক্ষ কোনো অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেপজা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের মার্চে কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকার ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জমিতে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০০০ সালের ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইপিজেডের উদ্বোধন করেন। চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ ইপিজেডে ২৫টি বিদেশি ও ২২টি দেশি- মোট ৪৭টি কারখানা চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠার সময় কুমিল্লা ইপিজেডে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপন না করায় ইপিজেডের তরল বর্জ্যে আশপাশের এলাকার কৃষকের জমির ফসল ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের দাবির মুখে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইপিজেডের দক্ষিণ প্রান্তে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর শেষ হয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্জ্য পরিশোধনাগারটি কোনো কাজে আসছে না। পরিশোধিত বর্জ্যের নামে ইপিজেডের বিষাক্ত বর্জ্য ও রাসায়নিক তরল পদার্থ বাইরে বের হচ্ছে। এতে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ, রাজাপাড়া, লক্ষ্মীনগর, শ্রীবল্লভপুর, যাত্রাপুর, কাজীপাড়া, রামপুর, উনাইশার, হীরাপুর, মোস্তফাপুর, লহিপুরা, টঙ্গীরপাড়, বিজয়পুর, দত্তপুর, বামিশা ও দীঘিরপাড় এলাকার বিভিন্ন খালসহ কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজের সামনের খালে কালো বিষাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ছে। পানি থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে পচা গন্ধ। এতে এসব এলাকার খালে জলজ প্রাণী ও মাছ মরে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান সুরুজ জানান, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে- বর্জ্য পরিশোধন করে বাইরে যে পানি বের হচ্ছে, তা স্বচ্ছ এবং তা বিষাক্ত নয়। এখানে বর্জ্য পরিশোধন হয়ে থাকলে বাইরের খালে ও নিচু এলাকায় বিষাক্ত পানি ও বর্জ্য আসে কোথা থেকে? তিনি বলেন, ইপিজেডে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার চালু থাকলেও এখনও তরল বর্জ্য চুইয়ে আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামের ফসলি জমি, নদী-নালা, পুকুর, বিল ও জলাশয়ের পানির সঙ্গে মিশছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য মানবদেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এর ফলে মাটি, পানি ও বায়ু নানা উপায়ে দূষিত হচ্ছে। জনস্বার্থ বিবেচনা করে এ বিষয়ে ইপিজেড কর্তৃপক্ষকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

মোবাইল ফোনে কুমিল্লা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ইপিজেডের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। এখানে বর্জ্য শোধন করেই স্বচ্ছ পানি বাইরে বের করা হয়। ইপিজেডের কোনো বর্জ্য কিংবা দূষিত পানি বাইরে যাওয়ার কথা নয়। নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার খাল ও দক্ষিণ চর্থা থেকে দক্ষিণে প্রবহমান নগরীর বিষাক্ত পানি ও নানা বর্জ্য বিভিন্ন খালে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে, এ জন্য সিটি করপোরেশনই দায়ী।

এসব অভিযোগ নাকচ করে সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু  বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই বাসাবাড়ির পানি টমছম ব্রিজ খাল দিয়ে নগরীর বাইরে যাচ্ছে। এখন বেপজা কর্তৃপক্ষ আমাদের দায়ী করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, বাসাবাড়ির পানি-বর্জ্য আর শিল্প-কারখানার তরল বর্জ্য সহজেই চিহ্নিত করা যায়। তিনি আরও বলেন, ইপিজেডের বিষাক্ত তরল বর্জ্যের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে একাধিকবার বেপজাকে চিঠি দেওয়া হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।