ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পদ্ধতিতেও লক্ষ করা গেছে ব্যাপক পরিবর্তন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই পরিবর্তনে মুসলমানদের অবদান নেহাতই কম নয় বরং ঢের বেশি।

নবম শতাব্দীতে মুসলিম মনীষীরাই সভ্যতার প্রকৃত পতাকার বাহক ছিলেন। নবম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল মুসলিম মনীষীদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের স্বর্ণযুগ। নিম্নে কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনা করা হলো :

 

 

ইবনে সিনা :
সর্বকালের অন্যতম সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক আবু আলী হুসাইন ইবনে সিনা উজবেকিস্তানে (৯৮০-১০৩৭) জন্মগ্রহণ করেন। ইউরোপে তিনি আভিসিনা নামে পরিচিত।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল কানুন্’ সর্বাধিক প্রভাবশালী গ্রন্থ। একে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলা হয়। পাঁচ খণ্ডে  এবং ৮০০ পরিচ্ছেদে সমাপ্ত এই চিকিৎসা বিশ্বকোষে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর রচিত ১৬টি মৌলিক গ্রন্থের ১৫টিতে তিনি বিভিন্ন রোগের কারণ ও চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম মস্তিষ্কে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ঝিল্লির প্রদাহ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তাছাড়া তিনি যক্ষা রোগের সংক্রামক, প্রকৃতি, প্রাণী ও মৃত্তিকা দ্বারা রোগ বিস্তারের ধারণা ও কৃমি রোগ সম্পর্কে আলোচনা করেন।

 

 

আল-রাজি :
মুসলিম চিকিৎসাবিদদের মধ্যে আবু বকর মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আর-রাজি (৮৬২-৯২৫) ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একজন চিকিৎসাবিদ। মানুষের কিডনি ও গলব্লাডারে কেন পাথর হয়, সে সম্পর্কে তিনি একটি মৌলিক তথ্যপূর্ণ বই লিখেছেন। লাশ কাটার বিষয়ে তিনি লিপিবদ্ধ করেন ‘আল জুদারি ওয়াল হাসবাহ’। এটি লাতিন ও ইউরোপের সব ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে ‘আল হাবি’। এতে সব ধরনের রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে তিনি প্রতিটি রোগ সম্পর্কে প্রথমে গ্রিক, সিরীয়, আরবি, ইরানি ও ভারতীয় চিকিৎসা প্রণালীর বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তারপর নিজের মতামত ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

 

 

আলী আত-তাবারি :
আলী আত তাবারি (৮৩৯-৯২০) ছিলেন মুসলিম খলিফা মুতাওয়াক্কিলের গৃহচিকিৎসক। তিনি খলিফার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ফেরদৌস উল হিকমা’ নামে একখানা বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রই নয়-দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কেও আলোচিত হয়েছে। এটি গ্রিক, ইরানি ও ভারতীয় শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

আলী আল মাওসুলি :
চক্ষু চিকিৎসায় মুসলমানদের মৌলিক আবিষ্কার রয়েছে। আলী আল মাওসুলি চোখের ছানি অপারেশনে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর ‘তাজকিরাতুল কাহহালিন’ চক্ষু চিকিৎসায় সবচেয়ে দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ। চোখের ১৩০টি রোগ ও ১৪৩টি ওষুধের বর্ণনা রয়েছে এ বইয়ে। তিনিই প্রথম চোখের রোগের সঙ্গে পেট ও মস্তিষ্কের রোগের সম্পর্কিত হওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আল জাহরাত্তয়ি :
সার্জারি চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান অপরিসীম। আনুমানিক ১০০০ সালের দিকে বিশ্বনন্দিত সার্জারি চিকিৎসক ছিলেন আল জাহরাত্তয়ি। তিনি সার্জারির ওপর প্রায় পনেরোশ’ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম সিজার অপারেশন করেছিলেন এবং শল্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফরসেপ বা চিমটে জাতীয় অস্ত্র উদ্ভাবন করেন।

এছাড়াও চিকিৎসাশাস্ত্রে মৌলিক গবেষণায় অভাবনীয় অবদান রাখেন প্রসিদ্ধ কয়েকজন মুসলিম মনীষী। তাঁদের মধ্যে হাসান ইবনে হাইসাম, আলবেরুনি, আলী ইবনে রাব্বান, হুনাইন ইবনে ইসহাক, আবুল কাসেম জাহরাবি, জুহান্না বিন মাসওয়াই, সিনান বিন সাবিত, সাবিত ইবনে কুরা, জাবির ইবনে হাইয়ান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমনই গৌরবময় ইতিহাস আছে মুসলমানদের। কিন্তু দুঃখজনকভাবে চতুর্দশ শতকে মুসলমানদের ক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সব কিছু থেকে আধিপত্য কমতে থাকে। চুরি হয়ে যায় অনেক থিওরি। আজ যদি মুসলমানদের আবিষ্কার, থিওরি ও লিখিত গ্রন্থাদি থাকত, তাহলে বিশ্ব পেত সভ্যতার চূড়ান্ত পাঠ ও আশাতীত কিছু উদ্ভাবন।