নাক অপারেশনের জন্য হাসপাতালে, ভুল চিকিৎসায় গেল প্রাণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক কলেজছাত্রর মৃত্যুর অভিযোগে উঠেছে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন জেল রোড এলাকার আল-খলিল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত ইশতিয়াক আহমেদ (২২) জেলার সদর উপজেলার বুধল ইউপির চান্দিয়ারা গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে। ইশতিয়াক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ডিগ্রী কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এ ঘটনার পর মৃতের সহপাঠী ও স্বজনরা বিক্ষোভ মিছিলসহ হাসপাতালটি ভাঙচুর করেন। ঘটনার পরপরই গা-ঢাকা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

স্বজনরা জানান, নাকের পলিপাস-জনিত সমস্যা নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন জেলরোডের আল-খলিল হাসপাতালে ভর্তি হন ইশতিয়াক আহমেদ। ওই হাসপাতালে ঢাকা থেকে আসা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রাফিউল আলম ইশতিয়াকের নাকের অপারেশন করার কথা ছিল। কিন্তু স্বজনদের অভিযোগ ওই চিকিৎসকের বদলে অন্য চিকিৎসক দিয়ে রাতে ইশতিয়াকের নাকের অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর অচেতন অবস্থায় আর জ্ঞান ফিরেনি ইশতিয়াকের। পরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইসিইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে ইশতিয়াকের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভিন্নভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

স্বজনসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় ইশতিয়াকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকদের বিচার দাবি করেন।  

ইশতিয়াকের বন্ধু শরিফ উদ্দিন ফাহাদ জানান, প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাফিউল আলম আল খলিল হাসপাতালে আসেন। সে জন্য শুক্রবার দুপুরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রাতে তার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশন করার পর তার আর জ্ঞান ফিরেনি। পরে এখানে এসে জানতে পারি যে গতকাল ডা. মো. রাফিউল আলম এই হাসপাতালে আসেননি। আমাদের ধারণা, এই ডাক্তারের নাম করে হাসপাতালের অন্য কেউ বন্ধুর অপারেশন করেছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

নিহতের চাচা শামসুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন জানতে পারি ইশতিয়াককে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তখন আমরা এই আল খলিল হাসপাতালে এসে কথা বলে ডাক্তারের নম্বর সংগ্রহ করি। ডাক্তারকে ফোন দিলে তিনি জানান, গতকাল তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। তাহলে কোন ডাক্তার আমার ভাতিজার অপারেশন করেছে; আমরা সেটা জানতে চাই। হাসপাতালে চিকিৎসার নামে তারা ব্যবসা খুলে বসেছে। কোনো নিয়ম-নীতি নেই। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। 

নিহত যুবক ইশতিয়াকের এলাকা বুধল ইউপির পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান শফিক  জানান, এখানে এসে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি; হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে উত্তেজিত জনতা হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করে। আমরা তাদের শান্ত করেছি। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মো. এমরানুল ইসলাম জানান, রোগীর স্বজনদের দাবি, হাসপাতালের অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তদন্ত করছি। অভিযোগ সাপেক্ষে এবং ময়নাতদন্ত শেষে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।