ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নূর বানুর একাত্তরের যন্ত্রণাময় দিনগুলো

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২২  

স্বাধীনতার ৫০ বছর গত হয়েছে। এখনো যুদ্ধকালীন আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে ও আমার সন্তানদের। নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবো পাবো করেও পাচ্ছি না। বেঁচে থাকতেই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চাই।

এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিযাতনের শিকার বীরাঙ্গনা নূর বানু। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এক খণ্ড জমি দিয়েছে। যা এখন পানির নিচে পড়ে আছে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো প্রতিকার করছে না।

নূর বানু বলেন, আমার স্বামী বেলায়েত হোসেন। চান্দিনার গোপাল নগর গ্রামে তার বাড়ি ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি স্বামীর বাড়িতে ছিলাম। আমার স্বামী দিনে রিকশা চালাতো আর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিভিন্ন খবর পৌঁছে দিতো। কখনো কখনো রিকশায় করে তাদের জন্য ভাত-তরকারি নিয়ে যেতো। কিভাবে যেন এ খবর চান্দিনার রাজাকাররা জেনে যায়। একদিন রাজাকাররা এসে আমার স্বামীকে শাসিয়ে যায়- পাকিস্তানি আর্মি জেনে গেছে, ফের মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার নিয়ে গেলে কিংবা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিণতি খারাপ হবে।

তিনি আরো বলেন, পরেরদিন দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা রান্নার জন্য চাল পাঠায়। আমি ভাত-তরকারি রান্না করে দিলে আমার স্বামী আবার গিয়ে দিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে খাবার দিয়ে বাড়ি আসার সাথে সাথে এক দল হানাদার আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। তারা আমার স্বামী ও শ্বশুরকে বেধড়ক মারধর করে এবং আমাকে ঘরের ভেতর নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। সেই নির্যাতনের ক্ষত আজও আমি বয়ে বেড়াই।

নূর বানু বলে চললেন ১৯৭১ সালের যন্ত্রণাময় দিনগুলোর কথা। জানালেন- পাক বাহিনী এরপর থেকে কয়েকদিন পর পর তাদের বাড়ি গিয়ে তার স্বামীকে মারত আর তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি বাবার বাড়ি লাকসামের পাইকপাড়া গ্রামে চলে যান। সেই থেকে আজও সেখানেই আছেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার কারণে আমার স্বামীকে পাকহানাদার বাহিনী মেরে প্রায় পঙ্গু করে ফেলেছিল। আর আমার জীবনটাকে নরক করে তুলেছে। বুড়ো হয়ে গেছি। এখন আর ছেলে-বউদের সামনে সব কথা বলতে চাই না। স্বামী মারা গেছে অনেক বছর হলো। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে দিনমজুরি করে-অটোরিকশা চালিয়ে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না।

নূর বানুর আক্ষেপ, স্বাধীনতার পর অনেকেই অনেক কথা বলেছে। আমি নাকি বীরঙ্গনা। আমাকে নাকি সরকার অনেক কিছু দেবে। কেউ আজ পর্যন্ত কেউ কিছু করেনি। অনেক বছর পর কুমিল্লার ডিসি আমাদের এক টুকরো জমি দিয়েছেন। যা সবসময় পানিতে ডুবে থাকে। এছাড়া জমিটি অনেক দূরে, বাড়ি থেকে সেখানে গিয়ে জমিতে কিছু চাষ করাও সম্ভব না।

বীরাঙ্গনা নূর বানুর ছেলে কামাল হোসেন বলেন, আমি একজন দরিদ্র অটোচালক। এই সামান্য আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আমার মায়ের সঙ্গে যুদ্ধকালীন ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নিয়ে ২০১৭ সালে সংবাদ প্রকাশের পর কিছু সাহায্য এসেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নূর বানু কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের ফজর আলী-আয়েশা খাতুন দম্পতির চতুর্থ সন্তান। ১৯৭০ সালের শেষদিকে চান্দিনা উপজেলার গোপালনগর গ্রামের রিকশাচালক বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। যুদ্ধকালীন পাক বাহিনীর নির্মম অত্যাচারে পঙ্গু বেলায়েত হোসেন স্বাধীনতার কয়েকবছর পরই মারা যান। অভাবের সংসারে যা কিছু ছিল- তা বিক্রি করে স্বামীকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছেন নূর বানু। স্বামীর মৃত্যুর পর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন লাকসামে বাবার বাড়িতে। সেই থেকে এখানেই আছেন।