ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া সেকান্দর চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন ইঁদুরের শত্রু, কৃষকের বন্ধু জাকির হোসেন বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজন নিহত, আহত ৩০ কুমিল্লায় ১৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস নোয়াখালীতে রোহিঙ্গার পেটে মিলল ইয়াবা, গ্রেফতার ৪ দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতের গুলিতে প্রাণ গেল ছাগলনাইয়ার দিদারের
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নেশায় আসক্ত ছিন্নমূল শিশুরা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৬ মে ২০২১  

ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি পথশিশু তার পরনের জামার নিচে মুখ গুঁজে আছে। প্রথমেই দেখলে মনে হবে সে হয়তো কাউকে দেখে লজ্জা পেয়েছে কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। সে জামার নিচে মুখ গুঁজে নেশা করছে এবং তা ফেনী শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা ট্রাংক রোড দোয়েল চত্ত্বরের পাশেই। শুধু এই একজন পথশিশু নয় ফেনী শহরের এমন আরো অনেক পথ শিশু এভাবেই প্রকাশ্যে নেশায় আসক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের নেশার উপদান হলো ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট আঠা (গাম), তবে ‘ড্যান্ডি’ নামেই এটি বেশি পরিচিত। এটা মূলত তীব্র ঘ্রাণযুক্ত এবং এ ঘ্রাণ থেকেই এক ধরনের আসক্তি হয়।

ফেনী রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা এসব পথশিশুরা ঘাড়ে চটের বস্তা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক, লোহা কিংবা পুরনো জিনিস বিক্রি করে ও মানুষের কাছে হাত পেতে যে আয় হয়, তা দিয়ে খাবার কিনে খায় এবং বাকি টাকা দিয়ে সর্বনাশী এ নেশা করে।
 
কবির আহমেদ নামে শহরের এক হার্ডওয়ার সামগ্রীর ব্যবসায়ী বলেন, এ গামটি মূলত ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, জুতার চামড়া ও প্লাস্টিকের পণ্য জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। পথ শিশুরা মূলত মুচি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে এ গাম কিনে নিয়ে নেশা করে থাকে। এ গামটি টিউবে এবং কৌটায় দু’ভাবে পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে বিক্রি হয়।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের রেল স্টেশন এলাকার এক পথশিশু জানায়, সে তার আরেক বন্ধুর কাছ থেকে দেখে এখন নিয়মিত এ নেশা করে। এ গামের মধ্যে একটা ঘ্রাণ আছে সে ঘ্রাণ নিলে তার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। পলিথিনের ভেতরে গাম রেখে, পলিথিনের মুখে নাক দিয়ে এই নেশা করা হয়। এর ভেতরে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। এটা মাথায় গিয়ে এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।

শিশু অধিকার ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন স্বেচ্ছাসবী মাহবুবা তাবাস্সুম ইমা। তিনি বলেন, গত দুই বছর আগে ফেনী শহরের পথশিশুদের নিয়ে একটা জরিপ করি, জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ পথ শিশুই এ নেশাটির সঙ্গে জড়িত। তাদের এখান থেকে ফেরানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোনো ধরণের উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
 
এ নেশাাটির ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে কথা হয় নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. অসীম কুমার সাহার সঙ্গে। 

তিনি বলেন, এ ভয়ঙ্কর নেশার কারণে শিশুদের মধ্যে অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, লিভার ডিজিজ, কিডনি ডিজিজ এবং এর ফলে শিশুরা মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই গামের ঘ্রাণ শরীরের যেসব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, সেসব জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ফেনীর সহকারী পরিচালক মো. আবদুল হামিদ বলেন, এ গামটি মাদকের তালিকায় নেই- সে কারণে এটা নিয়ে কোনো ধরনের অভিযান চলমান নেই। তবে এ বিষয়ে খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। 

তিনি বলেন, ফেনীর বিদায়ী সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষার আওতায় এসব শিশুর চিকিৎসা করার ব্যাপারে, পরে তিনি চলে যাওয়ায় তিনি কর্মসূচি আর এগুতে পারেননি।

ফেনী শহরের স্থানীয় সমাজ সচেতন ও বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, পথশিশু হলেও ওরা সমাজেরই একটা অংশ। এ ধরনের ভয়ঙ্কর নেশা থেকে শিশুদের রক্ষা করার দায়িত্ব এ সমাজেরই। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।