মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর বাড়িতে কাঁটাতারের বেড়া

কুমিল্লায় শত্রুতার জেরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে মারধর করে এক মুক্তিযোদ্ধাকে আহত করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ৫দিন ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন।  আহত মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক কুমিল্লার জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজারখলা গ্রামের বাসিন্দা। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সামছুল হক অভিযোগ করে বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশজাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। সেই স্বাধীন দেশের রাস্তায় আজ আমার রক্ত ঝড়েছে। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, বাড়ির সামনে কাঁটাতার দিয়ে দীর্ঘবছরের চলাচলের পথও বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে। এই বৃদ্ধ বয়সে এসে এমন ঘটনা ঘটবে, তা কল্পনাও করিনি।’ সোমবার দুপুরে এভাবেই আবেগাপ্লুত হয়ে ক্ষোভের সাথে তিনি কথাগুলো বলেন। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। তবে সোমবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

অভিযোগে জানা যায়,  সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজারখলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হকের ছেলে মো. সেলিম মিয়া কুমিল্লার আদালতের আইনজীবি। গত ১৬ আগস্ট জেলার বরুড়া উপজেলার নাটেহর গ্রামের আঃ অদুদের মেয়ে ইসরাত জাহান রীমার আইনজীবি নিযুক্ত হয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে একই গ্রামের মৃত সুজত আলীর ছেলে আলফু মিয়াকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেলিম মিয়ার বাড়ির চলাচলের রাস্তা কাটা তারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট সদর দক্ষিণ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরদিন (২৭ আগস্ট) সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আলফু মিয়াসহ তার সহযোগীরা মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হকের পথ গতিরোধ করে। এসময় অভিযোগের বিষয় নিয়ে বাকবিত-ার জের ধরে বেধড়ক মারধর করে তাকে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় গত রবিবার (৩০ আগস্ট) ওই মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে আলফু মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। অপর আসামীরা হচ্ছেন- আলফু মিয়ার ভাই সফিকুল ইসলাম, ছেলে মোছাদ্দেক, সফিকুল ইসলামের ছেলে আল-আমিন, সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজারখলা গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল, শাহাদাত হোসেন, মনির হোসেন।

আহত মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হকের ছেলে অ্যাডভোকেট সেলিম মিয়া জানান, ‘একটি লিগ্যাল নোটিশকে কেন্দ্র করে আমার নিরপরাধ বাবার উপর যারা হামলা চালিয়েছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত আলফু মিয়াকে তার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি এবং মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।