ব্রেকিং:
পতেঙ্গায় আগুন ধরে প্রশিক্ষণ বিমান কর্ণফুলীতে, ২ পাইলট আহত কুমিল্লায় তিন উপজেলায় বিজয়ী যারা- মনোহরগঞ্জে ভোটার না থাকলেও বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে ৭৭ হাজার ভোট! ব্যালটে ভুল প্রতীক, কসবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বদলি সাংবাদিকদের নাস্তার প্যাকেটে টাকার খাম! বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের সন্ত্রাসী নিহত উপজেলা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী সৌদিতে ফখরুল-ফালুর রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় ৫ম বারের মতো প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন পুতিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিল বৃষ্টি, বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ শিক্ষার্থী দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস তেলের দাম বাড়াল সৌদি কেজিতে ১০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ কুমিল্লায় ‘কোরবানির আগে পেঁয়াজের দাম হবে ৫০ টাকার মধ্যে’ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ খাদ্য নিরাপত্তায় ২০ লাখ টন গম কিনছে সরকার শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস, আ.লীগ নেতাকে অব্যহতি কেন পিছু হঠল আওয়ামী লীগ
  • শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে প্রথম চা বাগান, জাপানে রপ্তানির আশা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২৩  

কুমিল্লা জেলায় প্রথমবারের মতো লালমাই পাহাড়ের বুকে চা বাগান গড়ে উঠেছে। এতে জেলায় চা শিল্পের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমানে ভর্তুকি দিয়েই চালাতে হচ্ছে জেলার একমাত্র চা বাগানটি। জেলার প্রথম এই চা বাগান দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছেন। 

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় কুমিল্লায় চা বাগান শুরুর গল্প শোনালেন বাগানের মালিক তারিকুল ইসলাম মজুমদার।

তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। লালমাই পাহাড়ি এলাকায় বেড়ে ওঠায় কলেজজীবন থেকেই পাহাড়ে চা বাগান করার স্বপ্ন লালন করতে থাকেন। কিন্তু লালমাই পাহাড়ের মাটি অপেক্ষাকৃত কম অনুর্বর হওয়ায় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায় চা বাগান করা দুঃসাধ্য বিষয় ছিল। বহুবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হন তারিকুল। কিন্তু তার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসতে বেশি সময় নেয়নি। সালটা ২০২১।  মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ‘জিদি সান’ নামে এক বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানান নিজ এলাকায়। এ সময় লালমাই পাহাড়ে বন্ধুকে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নের কথা বলেন তারিকুল। জিদি সান তার বন্ধুকে নিরাশ না হতে বললেন। পাহাড়ের কিছু মাটি সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন পরীক্ষার জন্য। কিছু দিন পর সবুজ সংকেত এলো জিদি সানের কাছ থেকে। বললেন লালমাই পাহাড়ে চা চাষ সম্ভব। এরপর জিদি সানের সহযোগিতায় তারিকুল মৌলভীবাজার থেকে ৪৫ টাকা দরে ছয় হাজার বিটি-২ প্রজাতির গাছের চারা এনে এক একর জায়গায় রোপণ করেন। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়াতে বাড়াতে এখন তার বাগানে ১১ হাজার চারা রয়েছে। বাগানের ব্যাপ্তি প্রায় ৩ একর। তার লক্ষ্য ৫০ হাজার চারা লাগানো।

তুলনামূলক বৃষ্টিপাত কম থাকায় পানির সংকুলান দিতে বসানো হয়েছে কৃত্রিম পন্থায় পানি দেওয়ার ব্যবস্থা। বর্তমানে বাগানটিতে চা-শ্রমিক কাজ করছেন বেশ কয়েকজন। তাদের সবাইকে আনা হয়েছে শ্রীমঙ্গল থেকে। বছর তিনেক ধরে বেশ ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন তারিকুল। বেশ কয়েকবার চা পাতা তোলা হলেও সেগুলো প্রাক্রিয়াকরণ মেশিন না থাকায় ব্যবসা করা যায়নি।

তারিকুল ইসলাম বলেন,  চা প্রক্রিয়াকরণের একটি মেশিনের দাম ৮০ লাখ টাকার মতো। আমার এই ক্ষুদ্র বাগানে যা চা উৎপাদন হয় তাতে মেশিন বসিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার মতো অবস্থা নেই। তবে আমি আশাবাদী আমার মতো আরও মানুষ যদি এমন পাহাড়ের টিলার ওপর চা চাষাবাদ করেন, তখন সমন্বিতভাবে হয়তো মেশিন বসিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা যাবে। যদি ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারি, তাহলে জাপানে খুব সহজেই রপ্তানি করতে পারবো। জাপানে চায়ের যথেষ্ট কদর রয়েছে। পাশাপাশি জাপানে চায়ের বাজারে চা রপ্তানি করে বড় একটি মার্কেট ধরতে পারবো। যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

জেলার প্রথম এই চা বাগানের অবস্থান জেলা সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর এলাকায়। কুমিল্লা-নোয়াখালী ফোরলেন সড়কের রতনপুর বাজার থেকে পশ্চিমে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে চা বাগানটির। বাগানটির নাম দেওয়া হয়েছে মজুমদার টি গার্ডেন। 

এদিকে জেলায় প্রথম চা বাগান হওয়ায় সরাসরি চা পাতা এবং চা বাগান দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। শখের মুহূর্তটি ফ্রেমবন্দি রাখতে সবাই সেলফি এবং ছবি তোলায় মত্ত কেউবা আবার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লাইভ করতে গেছেন। ছুটে আসছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটররাও।

dhakapost

বাগানের মালিক তারিকুল ইসলাম মজুমদার বলেন, দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন এটা আমার জন্য অবশ্যই আনন্দের । কিন্তু তারা (দর্শনার্থীরা) পাতা ছিঁড়ে ফেলে দেন, এটা আমার জন্য ক্ষতির। আমি সকল দর্শনার্থীর প্রতি সবিনয় অনুরোধ রাখবো, আপনারা দেখতে আসুন কোনো বাধা নেই, তবে অনুগ্রহ করে পাতাগুলো ছিঁড়বেন না।

চা বাগান দেখতে আসা ফারিয়া আক্তার নামে এক কলেজছাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বহুদিন থেকে শুনে আসছি কুমিল্লায় চা বাগান হয়েছে। তাই নিজ চোখে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আজ কলেজ ছুটি হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। নিজ চোখে প্রথম চা পাতা এবং চা বাগান দেখে বেশ ভালো লাগছে।

শাহাদাত হোসেন নামে এক দর্শনার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লালমাই পাহাড়ের টিলা এমনিতেও অনেক সুন্দর। এ পাহাড়ের সৌন্দের্যকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে সবুজ চা পাতা। এখানকার প্রকৃতিটাই যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে চা বাগানের ফলে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুনায়েদ কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারিক ভাই যে উদ্যোগটা নিয়েছেন এটা সত্যিই একটু ব্যতিক্রমী। আমরা তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতার তেমন কিছু না থাকলেও আমরা তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি পাশাপাশি পাতায় কোনো কীট আক্রমণ করলে তা দমনে সহযোগিতা করছি। তার মতো আশপাশের মানুষকেও চা চাষাবাদে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই বাণিজ্যিকভাবে সবাই লাভবান হতে পারবেন। 

এদিন তারিকুল ইসলাম মজুমদারের চা বাগান পরিদর্শনে ঢাকা থেকে আসেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে। 

তিনি জানান, কুমিল্লা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এখানকার মাটি চা উৎপাদনের জন্য তেমন উপযুক্ত না হলেও তারিকুল ইসলাম যে সাহস দেখিয়েছেন, সত্যিই তার এ সাহসকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়। আমরা লালমাই পাহাড়ের মাটি আরও বেশি পরীক্ষা করে দেখবো। চা চাষাবাদ আরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করতে লালমাই পাহাড়ের মাটিকে যথেষ্ট উপযুক্ত করে তুলতে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কাজ করবে। একই সঙ্গে পাহাড়ের অন্যান্যদের চা চাষে এগিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।