ব্রেকিং:
৫ম বারের মতো প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন পুতিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিল বৃষ্টি, বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ শিক্ষার্থী দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস তেলের দাম বাড়াল সৌদি কেজিতে ১০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ কুমিল্লায় ‘কোরবানির আগে পেঁয়াজের দাম হবে ৫০ টাকার মধ্যে’ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ খাদ্য নিরাপত্তায় ২০ লাখ টন গম কিনছে সরকার শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস, আ.লীগ নেতাকে অব্যহতি কেন পিছু হঠল আওয়ামী লীগ কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? কুমিল্লায় সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন র‍্যাব কর্মকর্তা দেশের পথে এমভি আবদুল্লাহ রাত ১১টার পর চা-পানের দোকান বন্ধের নির্দেশ রাত ৮টার পর শপিংমল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল
  • বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

পশু-পাখি নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১  

পশু-পাখির সঙ্গে সদাচরণ ও যত্ন নেয়ার ব্যাপারে ইসলাম সবসময় গুরুত্বারোপ করে। অনেকেই এ ক্ষেত্রে উদাসিনতা প্রদর্শন করে থাকে। উপরন্তু অনেক মুসলমান জানেই না যে, ইসলাম পশুর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারেও জোর প্রদান করেছে। ইসলাম আসলে পশুর উত্তম লালন-পালন ও তাদের প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি বিশেষ তাগিদ দিয়েছে।

পশুদের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

এই পৃথিবীতে মানুষই প্রধান ও মুখ্য। তবে জড় জগৎ, জীব জগৎ ও উদ্ভিদ জগৎও এই পৃথিবীর উপাদান। জড় জগৎ প্রাণহীন। উদ্ভিদ জগতেও আছে ন্যূনতম প্রাণের স্পন্দন। পশু-পাখির মধ্যে প্রাণের উপস্থিতির পাশাপাশি রয়েছে আহার-বিহার, বিচরণ ও সন্তান ধারণের ক্ষমতা। এসব গুণ-বৈশিষ্ট্য আছে মানুষেরও। এরই সঙ্গে মানুষের আছে বিবেক ও বোধশক্তি; জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা এবং সত্য-মিথ্যা পরখ করার ক্ষমতা। এই গুণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ জীবের আসনে সমাসীন। ইসলাম মনে করে, এই পৃথিবীতে মানুষের পরেই প্রাণিজগতের স্থান।

প্রাণিজগৎকে পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে কোরআন বলছে- ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি।’ (সুরা আনআম, আয়াত ৩৮)

পবিত্র কোরআনে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য আয়াতে প্রাণিজগতের প্রসঙ্গ এসেছে। এর বাইরেও পৃথকভাবে বিভিন্ন প্রাণীর নামে অনেকগুলো সুরার নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- সুরা বাকারা (গাভী), সুরা আনআম (উট, গরু, বকরি), সুরা নাহল (মৌমাছি), সুরা নামল (পিপীলিকা), সুরা আনকাবুত (মাকড়সা), সুরা ফিল (হাতি) ইত্যাদি। এসব নামকরণ থেকে প্রাণিজগতের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট ফুটে ওঠে। পশু-পাখির প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খাবারদাবার ও প্রয়োজনে ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম এগুলোকে প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কোরআনের বক্তব্য দেখুন- ‘প্রাণিকুল সৃষ্টির (অন্যতম) কারণ হলো, এগুলোতে তোমরা আরোহণ করে থাকো আর এগুলো সৌন্দর্যের প্রতীক।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৮)

পশু-পাখির যেহেতু বোধশক্তি নেই, ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই, তাই পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ বা সম্পদের কোনো ক্ষতি হলে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। তবে এগুলোর সঙ্গে মালিক বা রাখাল থাকলে জরিমানা দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চতুষ্পদ জন্তুর অনিষ্ট ক্ষমাযোগ্য।’ (বুখারি শরিফ : ৬৯১২)

পশু পাখির অধিকার

ইসলাম সবসময় পশুর জীবনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। নূহ (আ.) এর মহাপ্লাবনের সময় যখন পুরো পৃথিবী পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল, তখন আল্লাহ তায়ালা বিশ্বাসী নর-নারীর সঙ্গে পশুপাখিদের জীবনও রক্ষা করেছিলেন। এ ব্যাপারে কুরআন বলছে- ‘আর তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার ওহী অনুসারে নৌকা তৈরি করো। আর যারা যুলম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমার কাছে কোন আবেদন করো না। নিশ্চয় তাদেরকে ডুবানো হবে।’ (সূরা হুদ: ৩৭)

একই সূরার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘অবশেষে যখন আমার নির্দেশ এসে পৌঁছল এবং ভূ-পৃষ্ঠ (চুলা) হতে পানি উথলিয়ে উঠতে লাগল, তখন আমি বললাম, ‘প্রত্যেক যুগল (প্রাণীর) জোড়া জোড়া তাতে (নৌকাতে) উঠিয়ে নাও এবং নিজ পরিবারবর্গকেও; তবে তাকে নয় যার সম্বন্ধে পূর্ব-সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। আর যে বিশ্বাস করেছে তাকেও উঠিয়ে নাও।’’ (সূরা হুদ: ৪০)

পবিত্র কুরআনে সামুদ জাতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। নবী সালেহ (আ.) এই জাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি সারাজীবন তাদের হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে অল্প কিছু সঙ্গী ছাড়া গোটা জাতি তার অবাধ্যই থেকে যায়। একপর্যায়ে তারা দাবি করে, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী মাদি উট বের করে দেখান।

এটি দেখাতে পারলে আমরা আপনার ওপর ইমান আনব। সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহর কুদরতে পাহাড় থেকে একটি অদ্ভুত রকমের মাদি উট বের হয়। তা দেখে কিছু লোক ইমান আনে। কিন্তু তাদের সর্দাররা ইমান আনেনি, বরং তারা সে মাদি উটকে হত্যা করে ফেলে। এতে সালেহ (আ.) তার জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসার ঘোষণা দেন। তিনি তাদের সতর্ক করে দেন যে, তিন দিন পরই আল্লাহর আজাব তোমাদের ধ্বংস করে দেবে। নির্ধারিত সময়ে আসমানি আজাব এসে অবিশ্বাসীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- অতঃপর তারা সে উষ্ট্রীকে হত্যা করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং বলে, ‘হে সালিহ! তুমি আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছে, তা নিয়ে এস, যদি তুমি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাক। অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে (মরে) রইল। (সূরা কাহফ: ৭৭-৭৮) এখান থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র একটি পশুকে হত্যা করার জন্য।

ইসলাম শুধুমাত্র আনন্দের জন্য পশু শিকার করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন- ‘যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চাইতে ছোট কোনো প্রাণীকে অযথা হত্যা করে, তাকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। (নাসাঈ: ৪৩৪৯)

ভক্ষণ করার জন্য পশু জবেহের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, জবেহের ছুরিটা অবশ্যই ভালো করে ধার করে নিতে হবে যাতে করে পশুর যন্ত্রণা কম হয়।

একবার হজরত মুহাম্মদ (সা.) দেখলেন, কিছু লোক তাঁবু গেড়ে একটি পিঁপড়ার ঢিবির কাছে আগুন জ্বালিয়েছে। এটা দেখে তিনি তৎক্ষণাৎ সেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে বলেন। আরেকবার তিনি সা. দেখলেন, কেউ একজন দুটি ছোট পাখি ধরে এনেছে, আর তাদের মা ডাকতে ডাকতে তাদের সাথে উড়ে আসছে। এটা দেখে নবীজি সা. ওই ব্যক্তিকে পাখি দুটি ছেড়ে দিতে আদেশ দেন। (বুখারি)

একবার নবী (সা.) এক ব্যক্তির কথা বর্ণনা করলেন যে একটি কুকুরের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানি আনতে কুয়ার মধ্যে নেমেছিলো। আর শুধুমাত্র একটি কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। নবীজি সা. বলেন, প্রতিটি প্রাণীর সাথে সদয় আচরণ করা পুণ্যের কাজ।(বুখারি) তিনি সা. পশুর মুখে আঘাত করতে ও তাদের গায়ে সীল লাগাতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে পশুকে কষ্ট দিয়ে সবধরনের খেলাধুলা নিষেধ করা হয়েছে। আবু দাঊদ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সাহাবিদেরকে সফরের সময় ব্যবহৃত পশুদেরকে রাস্তায় থাকা ঘাসপাতা খাওয়া থেকে বাঁধা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি সা. বলেন, এতে করে দীর্ঘ সফরে তাদের ক্ষুধা মিটবে ও কষ্ট লাঘব হবে। মুসলিম। নবীজি সা. কোনো পশুর ক্ষতি সাধন করতে নিষেধ করেছেন।

পশু-পাখি আল্লাহর সৃষ্টি। এগুলোকে অশুভ মনে করা অজ্ঞতা ও কুসংস্কার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। এমনকি পেঁচা বা সফর মাসেও কোনো কুলক্ষণ নেই।' (বুখারি) অহেতুক পশু-পাখির পেছনে লেগে থাকা, অযথা এগুলোকে শিকার করা ইসলামে নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'কোনো প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না।' (মুসলিম : ১৯৫৭)